• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
করোনা : জুন পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

করোনা : জুন পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ মার্চ ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই গ্রীষ্মে করোনা সংক্রমণ ফের বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই  এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা খুব কমফোর্ট জোনে আছি এটা যেন চিন্তা না করি। হ্যাঁ, আমরা অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থায় আছি, কিন্তু এটা সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা দেয় না যে আমরা একেবারে কমফোর্ট জোনে আছি। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এসব বলেন।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। বলেছেন, আমরা যে যেখানে থাকি, ভ্যাকসিন নিই বা না নিই, আমরা যেন অবশ্যই তিনটি জিনিস মেনে চলি। আমরা যেন অবশ্যই বাইরে মাস্ক ব্যবহার করি। যথাসম্ভব যাতে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করি। তিন নম্বর হলো পাবলিক গ্যাদারিং যেখানে হচ্ছে বিশেষ করে কক্সবাজার বা হিলট্র্যাকটসে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় গ্যাদারিং হচ্ছে, সেখানে যেন একটা লিমিটেড সংখ্যায় থাকি। নিজেদের যেন একটা দায়িত্ববোধ থাকে, যেখানে বেশি সংখ্যক লোক আছে সেখানে যেন আমি না যাই। যারা যাবেন তারা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি।

সচিব বলেন, আমাদের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এত বেশি লোক হুমড়ি খেয়ে পড়ছে- কেউ মাস্ক পরছে না। গত বছর মাস্ক না পরার জন্য মিয়ামি বিচে পুলিশ পিটুনি দিয়েছে, জলকামান ব্যবহার করেছে। সে জন্য আমরা প্রত্যেকে যেন একটা দায়িত্ব পালন করি, পাবলিক গ্যাদারিংয়ে যেন অবস্থা বুঝে অংশ নিই।

গত কয়েক দিন ধরে আমাদের বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করছেন, আমরা যেন খুব কমফোর্ট ফিল না করি। গত বছর আমাদের সংক্রমণ সর্বোচ্চ হয়েছিল গ্রীষ্মকালে। এটা এবার বাড়বে না এমন কোনো নিশ্চিয়তা নেই। কারণ, আমরা মনে করেছিলাম শীতকালে বোধ হয় পিকে (সর্বোচ্চ সংক্রমণ) চলে যাবে, কিন্তু আমাদের পিক ছিল হাই সামার। এপ্রিল, মে ও জুন আমাদের হাই সামার হবে। বিশেষজ্ঞরা যেটা বলেছেন সেই বিষয়ে আমাদের সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা যারা যার জায়গা থেকে প্রতিষ্ঠানিক ব্যক্তি বা দলীয় বা পারিবারিক লেভেল থেকে যাতে সতর্ক থাকি।

মানুষ মাস্ক না পরলে আবার কি সরকার মাঠে নামবে, জানতে চাইলে বলেন, আমরা সিনারিটা (দৃশ্যপট) দেখি, আমরা তো প্রচার করছিই। বিজ্ঞানীরা তো বলছে না একটি ভ্যাকসিন নিলে আপনি পুরোপুরিভাবে নিরাপদ। ভ্যাকসিন নিলেও মাস্ক পরতে বলা হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে মানুষের মধ্যে করোনা টিকা নেওয়ার হার কমেছে। এ বিষয়ে বলেন, এটা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছে। দু-এক দিনের মধ্যে তারা এটা নিয়ে কথা বলবে।

যদি আবার সংক্রমণ বাড়ে তবে লকডাউনের মতো সিদ্ধান্ত আসতে পারে কি না জানতে চাইলে  বলেন, লকডাউনের কথা আমরা এখনো ওইভাবে চিন্তা করিনি। যদি বাড়ে সরকার আলোচনা করেই একটা সিদ্ধান্ত নেবে। মানুষের জীবন ও জীবিকা-দুটোকে নিয়ে ব্যালেন্স করে পুরো টাইমটা কাজ করে আসছি। সেভাবে যেটা লজিক্যাল আমরা সেটাতেই যাব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা কীভাবে দেওয়া হবে-এ বিষয়ে  সচিব বলেন, তাদের রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অনেকের এনআইডি নেই। আমরা এটা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি আসলে ওইভাবে সবার নজরে আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা অ্যাপ খোলার কথা বলেছেন। এটা  অবশ্যই করা যাবে। বিদেশিদের তো এনআইডি নেই, তাদের পাসপোর্ট দিয়ে আমরা করছি। ওই রকম একটা কিছু তো হবে।

আগামী রমজান সামনে রেখে ছয়টি নিত্যপণ্যের মজুত পর্যাপ্ত রয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এদিন মন্ত্রিসভাকে অবহিত করে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আগামী ১৩ বা ১৪ এপ্রিল মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান শুরু হচ্ছে। কতগুলো আইটেম রমজানের সময় জরুরি প্রয়োজন হয়- ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মসুর ডাল, খেজুর, পেঁয়াজ ও আদা। এগুলো নিয়ে আজকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মন্ত্রিপরিষদকে আশ্বস্ত করেছে যে, আমাদের যে পরিমাণ চাহিদা, সেই তুলনায় মজুত কমফোর্টেবল (পর্যাপ্ত) আছে।

টিসিবি যেটা আমদানি করছে, সেটা রোজার অনেক আগেই দেশে চলে আসবে। যে ছয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রোজার সময় বিশেষ প্রয়োজন, সেগুলো নিয়ে অসুবিধা হবে না। এবার আমরা একটু কমফোর্টেবল অবস্থায় আছি। তাহলে এবার এসব পণ্যের দাম বাড়বে না-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সচিব বলেন, দাম বাড়ার বিষয়টি অনেকটা মার্কেটের ওপর নির্ভর করে। আশা করা যাচ্ছে সাপ্লাইয়ের কোনো ঘাটতি হবে না। সাপ্লাই বেশি হলে দাম এমনিতেই কন্ট্রোলে থাকবে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরবর্তী সময়ে আপনাদের বিস্তারিত ব্রিফ করবে।

এদিন বৈঠকে বৈঠকে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২১ এর খসড়া এবং সরকারি ঋণ আইন- ২০২১ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সচিব বলেন, অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনগুলোকে অনুসরণ করে নতুন এই আইন করা হচ্ছে। নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হলে দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হবে ৪৬টি, আর বর্তমানে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। কুড়িগ্রামে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য গত বছরের ২১ ডিসেম্বর এ-সংক্রান্ত আইনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। খসড়া আইনটি আইন মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই শেষে এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলো।

কুড়িগ্রাম একসময় মঙ্গাপীড়িত ছিল। সেখানে যদি এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় হয় তবে গবেষণা হবে, ফার্মিং হবে। এর মধ্যে দিয়ে তাদের অবস্থার আরো উত্তরণ হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও ফার্মিংয়ের মাধ্যমে যে টেকনোলজি ডেভেলপ হবে তা কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাটে বিস্তৃত হলে ওই লোকজন ফার্মিংয়ের মাধ্যমে ভুট্টা, শাক-সবজি, মিষ্টি আলু ও মিষ্টিকুমড়া, মাছ উৎপাদনের মাধ্যমে তাদের অবস্থার আরো উন্নত করতে পারবে।

এ ছাড়া সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), ইনভেস্টর ফাইন্যান্সিং, জি-টু-জি (সরকার টু সরকার) ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন আইন হচ্ছে। এজন্য সরকারি ঋণ আইন- ২০২১ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বিষয়ে সচিব বলেন, ১৯৪৪ সালের পাবলিক ডেবট অ্যাক্ট ছিল, সেটা দিয়ে আমরা চলছিলাম। সেই আইনটি সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন ও হালনাগাদ করে সরকারি ঋণ আইনের খসড়া হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। সরকার, সরকারি অর্থ, বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন- ২০০৯ এর ২১-এর ধারার বিধান অনুযায়ী সরকারি বাজেট ঘাটতি পূরণে ঘাটতি অর্থায়ন বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সরকারের গ্রহণ করা দেশীয়, বৈদেশিক উৎস থেকে দেশীয় ও বৈদেশিক মুদ্রায় গ্রহণ করা মুনাফা যুক্ত বা মুনাফা মুক্ত যেকোনো ঋণ/বিনিয়োগ সংগ্রহ করা যাবে বলে খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়।

খসড়া আইনে প্রয়োজনের নিরিখে সরকারি ঋণ সংগ্রহ প্রক্রিয়া, রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির বিধান, সরকারি ঋণ অফিসের ভূমিকা নির্দিষ্টকরণ, শরিয়াহভিত্তিক সরকারি সিকিউরিটি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত বিধানাবলি অন্তর্ভুক্তকরণ প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলটিতে আইনের প্রাধান্য, পরিদর্শন, সরকারের ঋণ সম্পর্কে জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার সংরক্ষণ ও দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

এখানে যদি কেউ ফল্ট করে তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে। সরকারের ঋণ কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত কোনো ব্যক্তি আইন ভাঙলে শাস্তি পেতে হবে। অভিযোগ আসতে হবে সঞ্চয় পরিদপ্তর বা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। বিলটি যদি পাস করা হয় তবে বাংলাদেশ সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর জন্য অধিকতর আধুনিক প্রক্রিয়ায় ঋণ সংগ্রহ, টেকসই ঋণনীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন, ঋণ কৌশলপত্র প্রস্তুত, ঋণের ঝুঁকি নিরূপণ, বাজেট প্রস্তুতসহ সরকারের প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন দায় হিসাব করার বিষয়টি সহজ হয়ে যাবে। ট্রান্সপারেন্ট হয়ে যাবে এবং এক্সটেন্ডেড হয়ে যাবে।

আগে যে ঋণ ব্যবস্থাপনা ছিল, বাজেট কিংবা ফাইন্যান্সিং সিস্টেম ছিল সেটা অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। যেমন- এখন পিপিপি আসছে, ইনভেস্টর ক্রেডিট, ডেফিসিট ফাইন্যান্সিং যেটা এগুলোর জন্য আরেকটু প্রিসাইজ করা দরকার। সচিব বলেন, পিপিপি, ইনভেস্টর ফাইন্যান্সিং, জি টু জি- সেগুলো আগের আইনে ছিল না। এগুলো নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সবার দায়-দায়িত্ব এবং এগুলোর ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, রি-পেমেন্ট সিস্টেম সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে। এতদিন এগুলো বিধিমালা দিয়ে হ্যান্ডেল করা হতো।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads