• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

মোদির সফর কূটনৈতিক দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ

আঞ্চলিক কানেকটিভিটিতে বিশেষ গুরুত্ব

  • রবিউল হক
  • প্রকাশিত ১৮ মার্চ ২০২১

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুদিনের সফরে আগামী ২৬ মার্চ ঢাকায় আসছেন। এই সফরে দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো ভারত এবার তুলতে চায় না। তার সফর বাংলাদেশের জন্য শুধুই উদ্যাপনের হলেও দিল্লির ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার ও ভারতের ‘লুক-ইস্ট পলিসি’র জন্য কূটনৈতিক দৃষ্টিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মোদির সফরে দুটি বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি বা অগ্রগতি থাকতে পারে। প্রথমত, ভারতের নেইবার ফার্স্ট অর্থাৎ প্রতিবেশী প্রথম, এই কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদার করা। দ্বিতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মতুয়া সম্প্রদায়ের মন জয় করা।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশের খবরকে জানান, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এবারের ঢাকা সফরে তিস্তা চুক্তি বা অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় অমীমাংসিত ইস্যুতে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। কারণ এ ধরনের ভিভিআইপি ভিজিটের আগে দুদেশের যে ধরনের প্রস্তুতি থাকে তা এবার নেই। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন পরিষ্কার করে দিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে আসছেন, এতেই আমরা অনেক খুশি। শুধু উনি না, উনার দেখাদেখি আরো চারজন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান আসছেন। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান আসছেন। আমরা আনন্দিত, ইট শোজ দ্য হাইট অব ডিপ্লোম্যাটিক ম্যাচুরিটি অ্যান্ড অ্যাচিভমেন্ট। যারা জানতে চান এই সফরে মোদির সঙ্গে কোনো এমওইউ হবে কি না, তাদের ‘ইল  এলিমেন্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, এরা সব আমাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে, আমাদের স্বাধীনতা দিবস, সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনে আসছেন, এটাই তো আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।

এদিকে মোদির আসন্ন ঢাকা সফরে দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে তেমন অগ্রগতি না দেখলেও তার এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে কূটনৈতিক মহল। প্রথমত, চীন যখন ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো নিয়ে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’(বিআরআই) নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ভারত মহাসাগর ও ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য ও উচ্চকাঙ্ক্ষা রয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তে মোদির ঢাকা সফর ভারতের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে। কারণ ভারতের নেইবার ফার্স্ট এবং চীনের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। কিন্তু ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদি তার ঢাকা সফরে দুদেশের মধ্যে দীর্ঘ ও ঘনিষ্ঠ কৌশলগত ও অংশীদারিত্বের যে ভিত রচনা করে গিয়েছেন এই সফর হবে আরেকটি স্মরণীয় অগ্রগতি। এ কারণেই দুদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধপূর্ণ জমি হস্তান্তর ও ছিটমহল বিনিময়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ সীমান্তবর্তী রাজ্য সরকারগুলোকে ঢাকা আনতে ও রাজি করাতে সক্ষম হন। এবার শুরু বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের লুক-ইস্ট পলিসি জোরদার সময়।

দিল্লিতে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার তারিক করিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (বিআরআই) এবং ভারত মহাসাগর ও ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বাংলাদেশের কোনো বিরোধ নেই। আমরা চীন ও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়েই চলি। এই দুই শক্তিধর দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশ কিছু করে না। কাজেই ভারত ও চীন যা করবে তা ভালো হলে বাংলাদেশও করবে। 

নরেন্দ্র মোদির সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোট বাড়াতে বাংলাদেশ থেকে ওপারে যাওয়া মতুয়া সম্প্রদায়কে কাছে টানা। কারণ পশ্চিমবঙ্গের গত নির্বাচনে খুব কাছাকাছি গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে হেরে যায় রাজ্য বিজেপি। এবার সেই ভুল করতে চায় না বিজেপি। তাই এবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ পরিদর্শনের পাশাপাশি কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি মন্দিরে যাবেন নরেন্দ্র মোদি।

জানা গেছে, আগামী ২৭ মার্চ বাংলাদেশের ওড়াকান্দির মতুয়া মন্দিরে যাবেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতে আশ্রয় নেওয়ার আগে এই ওড়াকান্দিতেই মতুয়াদের অধিষ্ঠান ছিল এবং মতুয়া গুরু হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুর এখানেই বসবাস করতেন। মোদি এই মন্দিরে প্রার্থনা করবেন এবং পূজা দেবেন। ওইদিন ওড়াকান্দিতে উপস্থিত থাকবেন হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ বংশের বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। মতুয়ারা এই ওড়াকান্দি থেকেই উত্তর-চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগরে বসতি স্থাপন করে। মূলত উত্তর চব্বিশ পরগনা ও নদীয়া জেলায় তাদের আধিপত্য বেশি। পশ্চিমবঙ্গের ভোটের আগে মোদির ওড়াকান্দি সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন আরো জানান, নরেন্দ্র মোদির আসন্ন ঢাকা সফরে আঞ্চলিক কানেকটিভিটির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। বিশেষ করে, সম্প্রতি ফেনী নদীতে মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বন্দরগুলো ব্যবহার করে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি রাজ্যে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট। এ ছাড়া ঢাকা-শিলিগুড়ি ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। মুজিবনগর থেকে ভারতের মধ্যে যাতায়াতের জন্য নতুন একটি স্বাধীনতা সড়কের উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারত ও নেপালের মধ্যে যাত্রীবাহী ও মালবাহী পরিবহন চলাচলের বিষয়েও আলোচনা হবে। কেননা এই ত্রিদেশীয় যোগাযোগ বিষয়ে সব দেশই সম্মত হয়েছে। যাত্রীবাহী বাস চালানোর বিষয়ে সমীক্ষার কাজও সম্পন্ন। এখন এই তিন দেশ মিলে এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার অপেক্ষায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads