• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

বায়ুমান উন্নয়নে সহযোগিতা করবে বেলারুশ

রাজধানীর ৭০ স্থানে দূষণের মাত্রা আদর্শ মানের চেয়ে ৫.২ গুণ বেশি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২১ মার্চ ২০২১

২০২০ সালে বাংলাদেশের বাতাসে গড় ধূলিকণার পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৭.১ মাইক্রোগ্রাম-যা পরিবেশ অধিদপ্তরের আদর্শ মানের সাড়ে ৫ গুণ বেশি। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকায় দূষণের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। এ থেকে উত্তরণে সহযোগিতা করতে চায় বেলারুশ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ও টেকসই জ্বালানি খাতে প্রযুক্তি, অভিজ্ঞতা বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পূর্ব ইউরোপের দেশটি। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন  বেলারুশের বাণিজ্য উপমন্ত্রী দিমিত্রি কেরিটনসিক। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত ১৬ মার্চ ছয়দিনের জন্য ঢাকা সফরে আসেন কেরিটনসিক। ইতোমধ্যে সাক্ষাৎ করেন এলজিডিই মন্ত্রী, ঢাকা উত্তরের মেয়র, বাণিজ্যমন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে।

কেরিটনসিক জানান, ইউরোশিয়ান ফেডারেশনভুক্ত বেলারুশ ঢাকার বায়ুমান উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব ইলেক্ট্রিক বাস সরবরাহ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য গ্রিন এনার্জি, পরমাণু বিদ্যুৎ খাতে প্রযুক্তি সহায়তা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে চায় তার দেশ। এ ছাড়া বাংলাদেশের কৃষির আমূল পরিবর্তনে নিজেদের ১০০ বছরের বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। তিনি বলেন, ঢাকার বায়ুমান ভালো নয়। এটা নিয়ে কাজ করার আগ্রহ রয়েছে আমাদের। বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, নির্মাণসামগ্রী ও কৃষি খাতে নজর দেওয়া উচিত। এসব ক্ষেত্রে বেলারুশের চমৎকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়শীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ইউরো এশিয়ার অর্থনৈতিক জোনে প্রবেশ করতে পারে বলে মনে করেন বেলারুশের উপমন্ত্রী। বর্তমান সরকারের প্রশংসা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ এবং তার নেতৃত্বেই ২০৪১ সালে উন্নত দেশের পথ খুঁজে পাবে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হিসেবে সে সময় রাশিয়ার সঙ্গে ছিল বেলারুশ। স্বাধীনতার ঠিক পরেই বেলারুশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিল। সবার আগে বেলারুশ কৃষি সরঞ্জাম সরবরাহ করে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ বি‌শেষ ক‌রে মেশিনারিজ এবং পেট্রোবাংলার যানবাহনসহ চট্টগ্রাম ট্রান্সফর্মার উৎপাদন প্রকল্প সরবরাহ করে। বাংলাদেশ ও বেলারুশ বিভিন্ন সময়ে সবচেয়ে খারাপ গণহত্যার শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ হারিয়েছে ৩০ লাখ মানুষ। আর বেলারুশ হারিয়েছে তার জনসংখ্যার প্রায় ৩ জনের ১ জনকে। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জাতি হিসেবে আমরা মূল্যটি অনুভব করতে পারি। সংবাদ স‌ম্মেল‌নে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় বেলারুশের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত এন্ড্রু রাজুসকি ও বাংলাদেশে অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ কুমার রায় প্রমুখ।

এদিকে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের বায়ুদূষণ সমীক্ষা-২০২০  শীর্ষক ক্যাপসের বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় রাজধানী ঢাকায় অভিজাত আবাসিক এলাকাতে আশঙ্কাজনকভাবে দিন দিন বাড়ছে দূষণের মাত্রা। ঢাকার ৭০টি স্থানের দূষণ গবেষণা করে দেখা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুদূষণের মাত্রা আদর্শ মানের চেয়ে বাতাস ৫.২ গুণ বেশি দূষিত। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

এতে বলা হয়, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ থেকে দূষণ হয় ৩০ ভাগ। এছাড়া ইটভাটা ও শিল্প কারখানা থেকে ২৯ ভাগ, যানবাহনের কালো ধোঁয়া থেকে ১৫ ভাগ, আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ থেকে ১০ ভাগ এবং গৃহস্থালি ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত দূষণ ৯ ভাগ।  লালবাগ, হাজারিবাগ,  কোতোয়ালি,  কামরাঙ্গীরচর ও সূত্রাপুরে বায়ুদূষণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আবাসিক এলাকার মধ্যে ধানমন্ডি,  গুলশান,  বাড্ডা ও বনানীতে আশঙ্কাজনক হারে বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী বলেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে এর দেখা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে দূষণ দূরের জন্য পানি ছিটানো, গাছ লাগানো, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখতে হবে।

বাপার সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন, দূষণের একটি বড় কারণ অনিয়ন্ত্রিত শিল্প কারখানা। এজন্য শিল্প কারখানা নির্মাণে আমাদের আরো সংবেদনশীল হতে হবে। এছাড়া পানি ছিটানো, ইটভাটা বন্ধ করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি অপসারণ করার পাশাপাশি সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। বাপার যুগ্ম-সম্পাদক মিহির বিশ্বাস বলেন, যারা দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করবে তাদের বেশিরভাগই বসেন সচিবালয়ে। সেই সচিবালয়ের আশপাশেই দূষণের পরিমাণ অনেক বেশি। সেটি কমাতে পারাই এখন তাদের অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সরকার ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট করে সেটি আটকে রেখেছে- এইটা হতে পারে না। দিন দিন দূষণ বেড়েই চলেছে। মনে রাখতে হবে এই দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় শিশুদের। আমরা এই অ্যাক্ট না করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপদে ফেলছি। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, নানা উদ্যোগ নেওয়া হলো কিন্তু আইন নাই-তাহলে তো হবে না। তাই সুনির্দিষ্ট আইন থাকা জরুরি। এজন্য গবেষণা করাও অনেক বড় কাজ। কোনো অজুহাত  না করে সরাসরি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads