• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মাঠে নেমেছে পুলিশ

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মাঠে নেমেছে পুলিশ

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ২২ মার্চ ২০২১

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জনগণকে সচেতন করতে আবারো মাঠে নেমেছে পুলিশ। রাজধানীসহ সারা দেশে পুলিশের কর্মকর্তারা জনগণের মাঝে মাস্ক বিতরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্বুদ্ধ করেন।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বছর পেরিয়ে সম্প্রতি আবারো বাড়ছে আক্রান্তের হার। এ অবস্থায় মানুষের মাস্ক পরা নিশ্চিত ও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে গতকাল রোববার থেকে দেশজুড়ে এই বিশেষ উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি শুরু করে পুলিশ। ‘মাস্ক পরার অভ্যেস, করোনামুক্ত বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এই কর্মসূচি চলমান থাকবে বলেন জানা কর্মকর্তারা।

গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, আগামী ২১ মার্চ থেকে ‘মাস্ক পরার অভ্যেস, কোভিডমুক্ত বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে দেশব্যাপী বিশেষ উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এ কর্মসূচির আওতায় মাঠপর্যায়ে জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনুপ্রেরণা ও উদ্বুদ্ধ করবে পুলিশ। তবে আপাতত বাধ্য নয়, স্বাস্থ্যবিধি মানতে মাঠপর্যায়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক ও জীবনধারা স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এমন পরিকল্পনা নেওয়া কথা জানানো হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানায়, আইজিপির নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ শুরু করেছে ডিএমপি। তবে রোববার থেকে ডিএমপির সব এলাকায় থাকবে নজরদারি। এলাকাভিত্তিক ডিএমপির সদস্যরা জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করবেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) কৃষ্ণপদ রায় বলেছেন, ‘জোর করে কিংবা আইন প্রয়োগ করে নয়, মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতনতা সৃষ্টি করে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে চায় পুলিশ।’

গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগর ট্রাফিক বক্স সংলগ্ন পথচারী ও সাধারণের মাঝে মাস্ক বিতরণকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারন কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘মাস্ক ব্যবহারে আইন প্রয়োগ কিংবা জোর করে মানুষকে বাধ্য করতে চাই না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে ও সচেতনতা সৃষ্টি করে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে চাই। আমরা আশা করছি, সবাই নিজের ঝুঁকি বুঝতে পেরে, বিপদ বুঝতে পেরে নিজ থেকেই সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।’

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে আইজিপির নির্দেশনায় পুলিশ দেশব্যাপী করোনাবিরোধী ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিট আজ থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাস্ক বিতরণ শুরু করেছে।’

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন করোনা থেকে মুক্তি পেয়ে গেছি সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। সবাইকে মাস্ক পরার বিকল্প নেই। পুলিশ সবাইকে আহ্বান জানাতে চায়, সবাই সাবধানতা অবলম্বন করুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার সবচেয়ে অন্যতম মাধ্যম হলো মাস্ক পরা।’

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, ‘মাস্ক বিতরণের মাধ্যমে আমরা মেসেজ দিতে চাই যে, আপনি-আমি কেউই ঝুঁকিমুক্ত নই। নিজের ঝুঁকি, পরিবারের ঝুঁকি ও দেশের ঝুঁকি মনে করে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। করোনাযুদ্ধে পুলিশ সবসময় মাঠে ছিল। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে করোনামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায় পুলিশ।’

করোনা মোকাবিলায় পুলিশ জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে। এর আগে পুলিশ সদস্যরা মরদেহ সৎকার করেছেন। খাবার বিতরণ করেছেন। এ পর্যন্ত পুলিশের ৮৭ জন সদস্য করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজারের অধিক সদস্য। দ্বিতীয় ধাপেও পুলিশ সদস্যরা মাস্ক পরতে ও হ্যান্ড-স্যানিটাইজার ব্যবহারে সচেতনতা তৈরি করছেন।

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের নির্দেশে রাজারবাগ এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে চার হাজার মাস্ক বিতরণ করেন উপ-কমিশনার (ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফোর্স) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা।

করোনার দ্বিতীয় ধাপ মোকাবিলায় দেশব্যাপী পুলিশের উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে- করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশের নির্দেশিকা (এসওপি) বিতরণ; পুলিশের লোগো সংবলিত ফ্রি মাস্ক বিতরণ; করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ; সচেতনতামূলক মাইকিং, লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ; সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখা; করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের দাফন; পুলিশের অব্যবহূত স্থাপনা আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রূপান্তর। এছাড়া ইমিগ্রেশন পুলিশের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ ও কোয়ারেন্টাইনে প্রেরণ; জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে করোনা সংক্রান্ত আগত কলের সাড়াদান; পুলিশ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে কোভিড পরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রদান; পুলিশ হাসপাতালে পুলিশ ব্যতীত অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান।

ফার্মগেটে ৫ হাজার পথচারীকে মাস্ক প্রদান করেছে পুলিশ। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মাস্ক বিতরণ এ কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশীদ।

এ সময় তিনি বলেন, দেশব্যাপী করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ পুলিশের মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম আজ থেকে শুরু হয়েছে। আমরা মূলত জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাস্ক বিতরণ করছি। অনেকেই যারা রাস্তায় মাস্ক ছাড়া চলাচল করছেন, তাদেরকে মাস্ক বিতরণ করছি। মানুষকে মাস্ক পরার অভ্যাস করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকেই ইতোমধ্যে টিকা নিয়েছেন। কিন্তু এরপরেও আমাদের সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমরা আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে মাস্ক বিতরণ করছি। এ সময় পথচারীরা পুলিশের এ কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন মাস্ক পরার অভ্যাসটা অনেকটা কমে গেছে। পুলিশ যদি এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখে তাহলে করোনা সংক্রমণ কিছুটা হলেও কমবে।

রাজশাহীতে জনসচেতনতামূলক মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে মহানগর পুলিশ। সকালে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। সমাবেশে তিনি ঘোষণা দেন- এখন থেকে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে পুলিশের নজরদারি থাকবে। সতর্ক করার পরও মাস্ক না পরে ঘুরে বেড়ালে নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।

পরে তিনি নগরীর বিভিন্ন বিপণি বিতান ও সাধারণ মানুষের মাঝে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ করেন। রাজশাহী মহানগরীর ১২টি থানাসহ ট্রাফিক বিভাগের বিশেষ উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বোয়ালিয়া মডেল থানার উদ্যোগে সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এলাকায় এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) সুজায়েত ইসলাম, উপ-পুলিশ কমিশনার (বোয়ালিয়া) সাজিদ হোসেনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচির শুরুতেই পুলিশ কমিশনার বিশেষ উদ্বুদ্ধকরণ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন এবং উপস্থিত দোকান মালিক, শ্রমিক ও পথচারীদের উদ্দেশে সচেতনতামূলক বক্তব্য দেন।

সাহেববাজারের কর্মসূচি শেষে পুলিশ কমিশনার নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় আরএমপির ট্রাফিক বিভাগ আয়োজিত বিশেষ উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ সময় পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের উদ্দেশে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখেন এবং মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেন।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে উদ্যোগ নিয়েছে পাঁচলাইশ মডেল থানা পুলিশ। গতকাল সকাল ১১টায় নগরের ২ নম্বর বিপ্লব উদ্যানে আলোচনা সভা, মাস্ক বিতরণ ও বাউল গানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক, সহকারী পুলিশ কমিশনার শহিদুল ইসলাম, পাঁচলাইশ মডেল থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া, পাঁচলাইশ থানা কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব আবু সায়ীদ সেলিম, মো. ইলিয়াস রিপন। 

স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বাউল গান পরিবেশন করেন শিল্পী মোহাম্মদ কামাল, আব্দুর রাজ্জাক ও মোহাম্মদ রফিক। 

পাঁচলাইশ মডেল থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন,  ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি)-এর নির্দেশে বাংলাদেশ পুলিশের সকল ইউনিট দ্বিতীয় ধাপে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসচেতনতা তৈরিসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রচার চালাচ্ছে। পাঁচলাইশ থানা পুলিশও নানান কর্মসূচি পালন করছে। বাউল গানের অনুষ্ঠানে সবার মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে।

এছাড়াও দেশের সকল রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ একযোগে এই কর্মসূচি পালন করে। আর এটি অব্যাহত থাকবে বলেও জানা গেছে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads