• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯
বিদেশি সিগারেটে সয়লাব বাজার

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

বিদেশি সিগারেটে সয়লাব বাজার

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৪ মার্চ ২০২১

প্রশাসনের নাকের ডগায় অবাধে বিক্রি হচ্ছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসা বিদেশি সিগারেট। ফলে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে। মিথ্যা ঘোষণায় অন্য পণ্য আমদানির আড়ালে নিয়ে আসা হচ্ছে এসব বিদেশি সিগারেট।

সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের মতে মাঠ পর্যায়ে বিদেশি সিগারেট জব্দ করতে অভিযান চালানোর মতো লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় ঢালাও অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। জানা যায়, আইন অনুযায়ী সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে বাংলায় সতর্কীকরণ লেখা ব্যতীত কোনো সিগারেট বাজারজাত করা যায় না। এ ছাড়া রাজস্ব স্ট্যাম্প থাকারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এসব কিছু ছাড়াই চোরাই পথে আসা সিগারেট বিক্রি হচ্ছে খোদ রাজধানীতেই। দিনের পর দিন এই অনিয়ম চলে আসলেও নীরব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, সাধারণ আমদানি ও বন্ডেড ওয়্যার হাউসের মাধ্যমে বিদেশি সিগারেট আমদানির সুযোগ আছে। সাধারণ আমদানির মাধ্যমে সিগারেট আনতে হলে উচ্চ শুল্ককর পরিশোধ করতে হয়। শুল্কমুক্ত সুবিধায় নির্দিষ্ট পরিমাণে বন্ডেড ওয়্যার হাউসের মাধ্যমে আমদানি করা যায়। 

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সহকারী কমিশনার আব্দুল আহাদ জানান, সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে বাংলায় ছবিযুক্ত সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি লেখা ছাড়া যে কোনো ধরনের বিদেশি সিগারেট আমদানি করা অবৈধ। বিদেশি সিগারেট আমদানির জন্য ৪৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। শুল্ক ফাঁকি দিতেই চোরাচালান করা হচ্ছে এসব সিগারেট। তিনি আরো বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য পেলে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে খুচরা পর্যায়ে অভিযান চালানো কঠিন। তবে বন্দর দিয়ে যেন অবৈধভাবে সিগারেটের চালান খালাস না হয় সে জন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, ফিজিক্যালি র্যানডম এক্সামিনেশন করা সম্ভব না হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া বিদেশি সিগারেট বাজারে ঢুকে পড়ে। তিনি আরো বলেন, আমাদের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কেবল তৈরি হচ্ছে। এটি পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেলে এ ধরনের শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা অনেক কমে যাবে। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, শুধু শুল্ক কর্তৃপক্ষই এ ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড রোধ করার জন্য এককভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। সরকারের অন্যন্য সংস্থাও যদি এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে তাহলেও এ ধরনের কাজ রোধ করা যায়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, একসময় রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, মগবাজার, মৌচাক, পল্টন, বায়তুল মোকাররম গেট, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, ক্যান্টনমেন্টসহ নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় বিদেশি সিগারেট বিক্রি হতো। কিন্তু এখন পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতেও পাওয়া যাচ্ছে বিদেশি সিগারেট। যেগুলোতে ধূমপানবিরোধী কোনো ধরনের সতর্কীকরণ বার্তা কিংবা রাজস্ব স্ট্যাম্প নেই।

জানা যায়, বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তির মাধ্যমে এসব সিগারেট পৌঁছে যাচ্ছে দোকানির হাতে। এ ছাড়া বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভুয়া ঘোষণায় এসব সিগারেট দেশে নিয়ে আসছে। বিমানবন্দর ছাড়াও স্থল সীমান্ত ও সমুদ্রপথেও এসব সিগারেট ঢুকছে দেশের বাজারে। হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর ছাড়াও বিদেশি সিগারেট আসার অন্য আরো যে কয়টি রুটের কথা জানা যায় সেগুলো হলো চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর ও ওসমানী বিমানবন্দর। রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজার এবং চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার, খাতুনগঞ্জ ও মাদুনাঘাটে পাইকারিভাবে অবাধে বিক্রি হয় বিদেশি সিগারেট।

চট্টগ্রাম বন্দরে দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় বিদেশি সিগারেট আমদানির ঘটনা বেশি ঘটে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিনিষিদ্ধ প্রায় ১৩ কোটি টাকা মূল্যের বিদেশি সিগারেট আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গ্রাম বাংলা ফুড করপোরেশন নামে ঢাকার একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৩৬০ বেল্ট ফেল্ট নামে ফোম জাতীয় পণ্য আমদানির ঘোষণা দিয়ে এসব নিষিদ্ধ সিগারেট নিয়ে আসে। বাংলাদেশে সাধারণত ডানহিল, ৫৫৫, ৩০৩ লাক্সারি ফিল্টার্স, কোরিয়ান ইজি, ব্ল্যাক, স্ট্রবেরি, আমেরিকার ব্লেন্ড, সুপার স্লিম, জাভা ব্র্যান্ডের সিগারেট অবৈধভাবে বেশি আসছে।

এসব সিগারেট কাতারের দোহা, আরব আমিরাতের দুবাই, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, পাকিস্তান ও চীন থেকে অবৈধভাবে নিয়ে আসা হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি আসছে দোহার ও দুবাই থেকে।

সূত্র জানায়, অবৈধভাবে আনা এসব সিগারেট বাজারজাত করার জন্য চোরকারবারিরা বাসা ভাড়া নিয়ে সেলসম্যান নিয়োগ দিয়ে তা বাজারজাত করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলশান এলাকার এক সিগারেট বিক্রেতা জানান, বিদেশি সিগারেট বিক্রি করলে তাদের লাভ বেশি হয়। এসব সিগারেটের চাহিদাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিক্রেতারা সাইকেলে এসে তাদের সিগারেট দিয়ে যায়। আবার ফোন করলেও নির্দিষ্ট সময়ে তারা চলে আসে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads