• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
বিমান ভাড়ায় দিশেহারা প্রবাসীরা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

বিমান ভাড়ায় দিশেহারা প্রবাসীরা

  • রবিউল হক
  • প্রকাশিত ২৫ মার্চ ২০২১

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের দেশে আসা-যাওয়ার পথে গুনতে হচ্ছে অস্বাভাবিক বিমান ভাড়া। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপালের চেয়ে প্রায় দুই থেকে তিনগুণ ভাড়া বেশি নিচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো। এই অস্বাভাবিক ভাড়ায় দিশেহারা প্রবাসীকর্মীরা। তারা বছরে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠান তার একটি বড় অংশ লুটে নিয়ে যাচ্ছে এয়ারলাইনসগুলো। বিষয়টি দেখার কেউ নেই। এয়ারলাইনসগুলোর এই লুটপাট বন্ধ করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার পরও কোনো সুরাহা হয়নি।

জানা গেছে, কলকাতা থেকে দুবাই যেতে একজন যাত্রীকে বিমানভাড়া দিতে হয় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। সেখানে ঢাকা থেকে বিমান ভাড়া বাবদ বাংলাদেশিদের গুনতে হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। আবার নেপাল থেকে দুবাই যেতে যাত্রীদের দিতে হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সকল দেশেই বাংলাদেশিদের গুনতে হচ্ছে এমন পকেটকাটা ভাড়া। বাংলাদেশ বিমানসহ এমিরেটস, কাতার, টার্কিশ, ফ্লাই দুবাইসহ অন্যান্য শীর্ষ এয়ারলাইনসের ভাড়া একইভাবে আকাশচুম্বী বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে কেন এমন অস্বাভাবিক ভাড়া নিচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো তার কোনো জবাব নেই কারো কাছে। 

দেখা যায়, করোনা তাণ্ডবের আগে ঢাকা থেকে রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া যেখানে ছিল ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা, এখন সেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৬৫ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকা। শুধু এই একটি রুটই নয়, অস্বাভাবিক ভাড়া বেড়েছে দোহা, জেদ্দা, বাহরাইন, আবুধাবি, দুবাই ও লন্ডন রুটে। গড়ে প্রায় ১০০ ভাগই ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ভাড়া কিন্তু কমেনি। এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। একই সঙ্গে তারা ভাড়া কমানোরও দাবি করেছেন। বিদেশগামী যাত্রীরা জানান, করোনাকালীন সংকটময় সময়ে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী যারা ছুটিতে দেশে এসেছিলেন, তাদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়াটা এখন জরুরি। তারা দীর্ঘদিন করোনা নিষেধাজ্ঞায় দেশে আটকে থেকে জামানো টাকা শেষ করেছেন। অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। দেশেও কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে পারেননি। এই সময়ে তাদের বিদেশে ফেলে আসা কর্মস্থলে যোগ দেওয়া জরুরি। কিন্তু এয়ার টিকিট সংকট ও অত্যধিক ভাড়ার কারণে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। প্রবাসী যাত্রীদের টিকিটের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে প্রায় সব অপারেটিং এয়ারলাইনস তাদের মধ্যপ্রাচ্যগামী গন্তব্যে ভাড়া অন্তত ৭০ ভাগ বৃদ্ধি করেছে, যা অযৌক্তিক ও অনভিপ্রেত।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) এক সদস্য জানান, করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ ধরনের অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় করছে বিমানসহ বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো। টিকিটের দাম বৃদ্ধি ও বুকিং পদ্ধতিতে আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দরকার। এয়ারলাইনসগুলোকে একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালায় ভাড়া নির্ধারণ করে যাত্রীদের স্বার্থটাও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

জানা গেছে, ভাড়া বৃদ্ধির অস্বাভাবিকতা দূরীকরণে কিছু সুপারিশ করেছে আটাব ও বিদেশে কর্মী পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রীদের ফিরতি টিকিটে বিমান, সাউদিয়া ও অন্যান্য এয়ারলাইনসের ভাড়া বৃদ্ধি না করে আগের মতো বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়। প্রয়োজনে ভাড়ার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া ব্যবসায়িক দায়বদ্ধতা। এটা অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই। সরকারিভাবে ডেটাবেস তৈরি করে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ভিসার মেয়াদ দেখে অগ্রাধিকার দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার পাশাপাশি তাদের ভিসার মেয়াদের ভিত্তিতে ফ্লাইট নির্ধারণ ও টিকিটের সুব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য বিমান ও সাউদিয়ার ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়ে সংকট নিরসন করা সম্ভব। করোনার কারণে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় যেসব যাত্রী নিজ গন্তব্যে যেতে পারেননি তাদের পুনরায় ফ্লাইট দেওয়ার সময় অতিরিক্ত চার্জ আদায় না করা।

বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক ছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক রুটে ভাড়া প্রায় ১০০ ভাগই বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভাড়া যাতে নাগালের মধ্যে থাকে সেজন্য আমরা আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছি।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি বাংলাদেশিদের বিদেশ যেতে ভাড়া বেশিই নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু উপায় কি? সেদিন সিলেট গিয়ে এক যাত্রীর কাছ থেকে শুনলাম এমিরেটস এয়ারলাইনসও ভাড়া বাড়িয়েছে অনেক, যা বিমানের চেয়েও দ্বিগুণ। বিমান যে একাই ভাড়া বেশি নিচ্ছে তা নয়। দুনিয়াব্যাপীই করোনা মহামারীতে ভাড়া বেশি। তারপরও আমরা কমানোর চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, বিমান একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ব্যবসায়িক পলিসি যখন যেটা লাভবান সেটাই গ্রহণ করবে। এটাই দুনিয়াব্যাপী এভিয়েশন ট্র্যাডিশন। তারপরও আমার কাছে মনে হচ্ছে ভাড়াটা গলাকাটা যা যাত্রীর জন্য জুলুম হয়ে গেছে। আমি এটা কমানোর জন্য বিমানকে নির্দেশ দিয়েছি।

জনশক্তি রপ্তানিকারক সংগঠন ‘বায়রা’র সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, আমরা যারা বিদেশে কর্মী পাঠায় তারা বিমান ভাড়া অস্বাভাবিক হওয়ায় বিব্রত রয়েছি। আমরা বিষয়টি সুরাহা করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। তিনি জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপালের চেয়ে প্রায় দুই থেকে তিনগুন ভাড়া বেশি নিচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো। তিনি বলেন, এমনিতেই করোনা পরিস্থিতিতে সবাই অর্থনৈতিকভাবে সংকটে আছে। প্রবাসীদের অনেকেরই চাকরি নাই। এখন তাদের কাছ থেকে গলাকাটা ভাড়া নেওয়া জুলুম বলা যায়। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশিরা যারা বিদেশে যান তার মাত্র ১০ ভাগ বহন করে বাংলাদেশ বিমান। আর বাকি ৯০ ভাগ বহন করে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো। আমাদের কর্মীদের কষ্টার্জিত আয়ের বড় অংশই লুটে নিয়ে যাচ্ছে তারা। এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads