• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯
চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঁচজনের মৃত্যু

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

রণক্ষেত্র বায়তুল মোকাররম

চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঁচজনের মৃত্যু

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ২৭ মার্চ ২০২১

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভকারী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশ, সাংবাদিক, বিক্ষোভকারীসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা থানায় হামলা চালায়। পুলিশ হামলা ঠেকাতে গুলি চালালে চারজনের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ আরো তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালিয়েছে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়।  

গতকাল জুমার নামাজের মোনাজাত শেষে মুসল্লিদের একাংশ মোদিবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করলে এ সংঘর্ষ বাধে। মুসল্লিরা মোদিবিরোধী স্লোগান দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মসজিদের উত্তর পাশের ফটকে মিছিলকারীদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে বিক্ষোভকারীরা পিছু হটে মসজিদের ভেতরে ঢুকে পড়েন।

দুপুর ২টার কিছু পরপর মোদিবিরোধীরা বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামেন। এ সময় তারা বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকলে পুলিশ পাল্টা রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়তে থাকে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা ছোট ছোট পাথর ও ইট-পাটকেল মারতে থাকেন। পুলিশও রাবার বুলেটে জবাব দিতে থাকে। সংঘর্ষের সময় ছয়টি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। প্রায় চার ঘণ্টা থেমে থেমে এভাবেই চলতে থাকে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য জলকামান, এপিসিও ব্যবহার করে। বিক্ষোভকারীরা মসজিদের ভেতরে অবস্থান নিয়ে সেখান থেকে ইটপাটকেল মারতে থাকেন। গতকাল সকাল থেকেই বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটসংলগ্ন এলাকায় আগে থেকেই সেখানে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গও সহযোগী সংগঠণের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়ে থাকেন। জুমার নামাজের মোনাজাত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদের ভেতর থেকে বিভিন্ন ইসলামী দলের মুসল্লিরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময়ই ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা তারাও স্লোগান দিয়ে ধাওয়া করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই এলাকাকে ঘিরে তাদের শক্ত অবস্থান দেখা যায়। এমনকি লাঠি হাতে তারা থেমে থেমে মুসল্লিদের ধাওয়া করতেও দেখা যায়। মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার সৈয়দ নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, মুসল্লি নামধারী কিছু উগ্র ব্যক্তি সমস্ত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তায় মিছিল করার চেষ্টা করেন। এতে করে পুলিশের ওপর হামলা করছে, সেহেতু পুলিশ এখানে ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে। মসজিদের ভেতরে আমরা ঢুকছি না। সেই সুযোগেই তারা ভেতর থেকে ইট-পাটকেল মারছে, এমনকি মসজিদের ছাদের ওপরে উঠে তারা সেখান থেকেও পাথর ও ইট মারছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা কয়েকজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছি। এ বিষয়ে মামলা হবে। যারা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। 

বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় ৭০ জন আহত হয়ে কেউ ভর্তি আছেন আবার কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

আহতদের মধ্যে অধিকাংশই সরকার দলীয় সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অনুসারী। বাকিরা পথচারী এবং মোদিবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লোকজন।

ঢাকা মেডিকেল সূত্র জানায়, দুপুর ২টা থেকে সংঘর্ষের ঘটনায় আহতরা ঢাকা মেডিকেলে আসতে শুরু করে। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৭০ জন আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে যারা গুরুতর আহত, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হামলায় আহতদের তালিকা করতে ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন পুলিশের কনস্টেবল আলমগীর। তিনি সবার নাম লিখে তালিকা তৈরি করেছেন। তালিকায় দেখা যায়, আহতদের মধ্যে ৭০ জন ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন। এর মধ্যে কয়েকজন আলেম ছিলেন বলে জানান তিনি।

আহত যুবলীগের এক কর্মী বলেন, মুসল্লিরা মসজিদের ওপর থেকে আমাদের লক্ষ্য করে পাথর ও টাইলসের টুকরো নিক্ষেপ করেছে। এসব টুকরো কারো না কারো গায়ে লাগছে। তাই আহতদের মধ্যে আমাদের লোকজনের সংখ্যা বেশি।

এক পথচারী জানান, তিনি কোনো পক্ষেরই না। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটা ইটের টুকরো মাথায় এসে লাগে। বুঝতে পারছি না হুজুররা ওপরে এত ইট কোথায় পেয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আহত একজন বলেন, মোনাজাত শেষ হওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা আমাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। মনে হচ্ছে ইটের বৃষ্টি হচ্ছে। মনে হয় এরা আগে থেকেই ইট নিয়ে বসেছিল। এই হামলা পরিকল্পিত।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, মোদিবিরোধী বিক্ষোভে ৭০ জন হাসপাতালে এসেছেন।

ঢাকার বায়তুল মোকাররমে মুসল্লি ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মাদরাসার ছাত্ররা গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চারজন মারা যান বলে পুলিশ জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অনেককে হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তাদের নাম পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

স্থানীয় লোকজন জানান, মিছিলকারীরা হাটহাজারী থানায় হামলা করে। পাশাপাশি ভূমি অফিসও ভাঙচুর চালিয়ে সেখানে অগ্নিসংযোগ করে। সংঘবদ্ধ মাদরাসার ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালায়।

থানার ওসি রফিকুল  ইসলাম বলেন, ‘হেফাজত অনুসারীরা মিছিল করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তারা হাটহাজারী থানায় প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। সংঘর্ষ চলাকালে রাস্তায় পুলিশ অবস্থান নিলে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে আগত অনুসারীরা নিয়ে পুলিশকে লক্ষ‌্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে।’

ঢাকার ঘটনার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদরাসাছাত্ররা ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। একই সময়ে তারা থানার চারপাশে অবস্থান নিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

গতকাল বিকেলে থেকে শহরের টিএরোড, মঠেরঘোড়া, কুমারশীলমোড়, সদর মডেল থানা, রেলস্টেশন ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে ছাত্ররা। এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

এ ঘটনার পর থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে শহরের দোকানপাটসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সদর থানার চারপাশ ঘিরে রেখেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। তার ইট-পাটকেল মেরে থানার সামনে অংশ ভাঙচুর করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads