• বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪২৯
পণ্য আমদানিতে ফের শঙ্কা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

পণ্য আমদানিতে ফের শঙ্কা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ এপ্রিল ২০২১

করোনাভাইরাসের প্রথম দিকের ধাক্কা সামলে দেশে টানা চার মাস ধরে বাড়ছে পণ্য আমদানি। তবে করোনাভাইরাসের নতুন করে সংক্রমণের কারণে তৈরি হওয়া অচলাবস্থায় ভবিষ্যতে ইতিবাচক এই ধারা অব্যাহত থাকবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে আমদানি খাতে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রথম মাস জানুয়ারিতে গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে বেড়েছে ১৮ শতাংশ। এ ছাড়া গত বছরের শেষ দুই মাস নভেম্বর ও ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ২ দশমিক ৫৫ ও ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। চার মাসের এই প্রবৃদ্ধির কারণে অনেকদিন পর সার্বিক পণ্য আমদানিতে প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে বাংলাদেশ।

আমদানিসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট ৪ হাজার ৬ কোটি ৮৭ লাখ (৪০.০৬ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। এই অঙ্ক গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২ শতাংশ বেশি। জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) আমদানি ব্যয় শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ কম ছিল। গত অর্থবছরে ৫ হাজার ৪৭৮ কোটি ৫০ লাখ (৫৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৮-১৯) চেয়ে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। আমদানি বাড়াকে অর্থনীতির জন্য একটি সুখবর মন্তব্য করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমদানি বাড়া মানে বিনিয়োগ বাড়া, অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হওয়া। এতেই প্রমাণিত হয়, কোভিড-১৯ এর ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি।

তবে দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ঢেউয়ের কারণে আমদানি বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় জানিয়েছেন তিনি। আহসান এইচ মনসুর বলেন, যদি পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হয়, তাহলে শিল্পকলকারখানায় উৎপাদন কমে যাবে। স্বাভাবিক কারণে আমদানিও কমবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, বিশ্বে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগে ২০২০ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৫৩৩ কোটি ৪১ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। পরের দুই মাস ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আমদানি হয় যথাক্রমে ৪৭২ কোটি ৩৭ লাখ ও ৪২৭ কোটি ৭২ লাখ ডলারের পণ্য। এরপরই লাগে মহামারীর ধাক্কা। সেই ধাক্কার মধ্যে এপ্রিলে আমদানি ব্যয় ২৮৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলারে নেমে আসে, যা ছিল বহু বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

মে ও জুন মাসে যথাক্রমে ৩৫৩ কোটি ৩৪ লাখ ও ৪৮০ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রথম মাস জুলাইয়ে ৪২২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়। আগস্টে হয় ৩৮০ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আমদানি খাতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ৪৬৫ কোটি ২৫ লাখ এবং ৪৩৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। নভেম্বরে তা ৪৮১ কোটি ছাড়িয়ে যায়। ডিসেম্বরে আমদানি খাতে খরচ হয়েছে ৫৩৮ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। জানুয়ারিতে তা আরো বেড়ে ৭২৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলারে পৌঁছায়, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মাসে সবচেয়ে বেশি আমদানি খরচ। সবশেষে ফেব্রুয়ারিতে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৫৬৪ কোটি ২০ লাখ ডলার।

আহসান মনসুর বলেন, কোভিড-১৯-এর কারণে আমদানি অনেক কমে গিয়েছিল। এখন বাড়তে থাকায় স্বস্তি ফিরে আসছে। শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যাপিটাল মেশিনারি (মূলধনি যন্ত্রপাতি) শিল্পের কাঁচামাল, জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পণ্যের আমদানি কমে গিয়েছিল। এখন সবই বাড়তে শুরু করেছে। এটা একটা ভালো খবর।

তবে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেল, চিনিসহ কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি খরচ কিছুটা বেড়েছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads