• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
 ‘আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি’

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

‘আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ এপ্রিল ২০২১

নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘আমি সবার কাছে দোয়া চাই। আমার ব্যক্তিগত অসাবধানতার কারণে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে, আমার অসাবধানতা এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে যে ক্ষতির সম্মুখীন ব্যক্তিগতভাবে হয়েছি, সেজন্য আমি নিজেই মর্মাহত। আমার কারণে আজকে সেখানে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের কাছে আমি হাত জোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে এসে তিনি এসব কথা বলেন।

ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে মামুনুল হক বলেন, ‘বিশ্বের মুসলমান ভাইদেরও তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। একের পর এক মামলা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে অনেক মানুষকে হয়রানি করা হবে। অথচ প্রকৃত যারা দোষী, যারা গিয়ে হামলা করল, সেই সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে রাষ্ট্র নীরব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ তাদের নামপরিচয় দিবালোকের মতো পরিষ্কার। ইনশাআল্লাহ ইতোমধ্যে তাদের ব্যাপারে আমি এজাহার দায়ের করেছি। আরো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

মামুনুল হক বলেন, ‘আমার চরিত্র হরণ করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। যে বিষয়ে আমার চরিত্র হননের চেষ্টা চলল, সেই বিষয়ে আমি নিরাপদ। এ ধরনের চারিত্রিক কালিমা আমার ওপর নেই। এই বিষয়ে আমি এতটাই নিজের ওপর আত্মবিশ্বাসী, মুবাহালা করার মতো সৎ সাহস আমি রেখেছি। যারা আল্লাহর কোরআনে জ্ঞান রাখেন তারা জানেন মুবাহালার বিষয়টি কেমন। কোরআনের আলোকে কোনো একটি বিষয় যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে অমীমাংসিত হয়ে যায়, আর কোনো মীমাংসার সুযোগ না থাকে, তখন কোরআন বর্ণিত সর্বশেষ সমাধানের পথই হলো মুবাহালার। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছি, আমার মধ্যে কতটা ঈমানি ও নৈতিক দৃঢ়তা থাকলে এই কথা বললাম। যদি আমি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকি, সেই নারীর সঙ্গে আমার দুই বছর আগের বিবাহবন্ধন শরিয়তসম্মতভাবে সম্পাদিত না হয়ে থাকে, জান্নাত আরা ঝরনা আমার দ্বিতীয় স্ত্রী, এ বিষয়ে মিথ্যাবাদী হয়ে থাকি তাহলে আমার ওপর আল্লাহর গজব নাজিল হোক।  আর যারা আমার এ কথাকে অস্বীকার করতে চায়, কেউ যদি ঈমানদার মুসলিম হয়ে থাকে তাহলে তাকে আমার পক্ষ থেকে উদার আমন্ত্রণ থাকল আপনিও এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। আপনিও এ কথা বলুন, আপনি যদি আমার ওপর মিথ্যা অপবাদদানকারী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার ওপর আল্লাহর গজব নাজিল হবে। দেখি বাংলাদেশে এমন সৎ সাহস কোনো মায়ের সন্তান রাখেন কি না।’

চরিত্র হনন করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে দাবি করে মামুনুল হক বলেন, এটা আমার নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। শুধু ব্যক্তিগত আলাপচারিতার কল রেকর্ড ফাঁস নয়। বরং এর চেয়েও আরো ভয়াবহ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে। সেটি হলো জান্নাত আরা ঝরনার প্রথম ঘরের সন্তান আব্দুর রহমানকে তুলে নিয়ে তাকে দিয়ে জোর করে ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। স্ক্রিপ্ট লিখে দিয়ে সেই অনুযায়ী বক্তব্য পড়তে বাধ্য করা হয়েছে। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। আপনারা চিন্তা করতে পারেন যে একজন ব্যক্তির চরিত্র হনন করার জন্য কতটা মরিয়া হয়ে উঠলে এ ধরনের অশুভ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।’

প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, ‘আপনারা জনগণের সেবক। রাষ্ট্রের সেবক। কোনো ব্যক্তি বা দলের সেবাদাস নয়। কাজেই পেশাগত দায়িত্ব আমানতের সঙ্গে পালন করবেন। কারো চাপের কাছে নত হয়ে যদি তার ব্যক্তি অধিকার হরণ করেন তার জন্য হাশরের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ইসলামকে রক্ষা করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশবিরোধী যে-কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।’ 

তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, ‘আজকে রফিকুল ইসলাম মাদানীর চরিত্র হনন করার অপচেষ্টা চলছে। আগামীকালকে কে টার্গেট হবেন, সেটা আল্লাহ ভালো জানেন। এইভাবে যদি একে একে দেশের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিকে জাতির সামনে কলঙ্কিত করার এ অশুভ ধারা এখনই বন্ধ না করি, তাহলে আগুন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার এই পরিণাম বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে বলে মনে হয় না। কাজেই সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানাব, আসুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের যে ভয়াবহতা বিরাজ করছে, তা দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ থেকে মোকাবিলা করি। আর এই পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে তাহলে দেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে।

হেফাজত সব মহলের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ অবস্থান চায় উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, ‘কেউ কারো ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করব না। কারো সঙ্গে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলে সেটা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবেন। কিন্তু কারো চরিত্রগত হনন পদ্ধতি কাপুরুষোচিত। এ নিচু মানসিকতা পরিহার করে মানবতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন। অন্যের সম্মান যদি আপনি রক্ষা করেন, তাহলে আল্লাহ আপনার সম্মান রক্ষা করবেন। আর আপনি যদি কারো সম্মানহানি করেন, তাহলে আল্লাহ যদি চান তাহলে পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ হবে।’

আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছে তাদের পাশে আছেন জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, ‘তাদের সাহায্য করা হচ্ছে। যারা আহত হয়েছে তাদের হাসপাতালে গিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads