• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
এবার আরো ‘কঠোর লকডাউন’

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

এবার আরো ‘কঠোর লকডাউন’

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ১০ এপ্রিল ২০২১

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখীর কারণে সাত দিনের চলমান লকডাউন শেষ হচ্ছে আগামীকাল রোববার। তবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে আরো সাত দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে। যার প্রজ্ঞাপন জারি হবে আগামীকাল রোববার। এবার লকডাউনে সাধারণ মানুষকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না। জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। চলবে না যানবাহন, গার্মেন্ট কারখানাসহ সবকিছুই বন্ধ থাকবে।

তবে আগামী পহেলা বৈশাখ, রমজান ও ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক প্রস্তুতি নেওয়া ব্যবসায়ীরা এই কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাই এ লকডাউন সাত দিন থেকে যেন আরো দীর্ঘ না করা হয় সে দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যদিকে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটি কমপক্ষে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের দাবি জানিয়েছে। নইলে দেশে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এদিকে গত ৫ এপ্রিল থেকে চলছে দ্বিতীয় দফার সাত দিনের লকডাউন। কিন্তু এ লকডাউনে কঠোর পদক্ষেপ অনুসরণ করা না হলেও দেখা দিয়েছে জনরোষ। গত বছর লকডাউনে উপার্জন হারিয়ে যারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের জন্য এবার জীবিকাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির-পেশার মানুষ লকডাউনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা গত কয়েকদিন যাবৎ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে লকডাউনের বিপক্ষে বিক্ষোভ করেছেন। এতে সরকার বাধ্য হয়ে ৭ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচলের অনুমোদন দেয়। এরপর গতকাল শুক্রবার থেকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খোলার অনুমোদন দেয়। কিন্তু একদিকে লকডাউন, অন্যদিকে সব কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকায় অকার্যকর হয়েছে সরকারের এ কর্মসূচি। অন্যদিকে করোনাভাইরাইসের সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। সরকারি হিসাবে গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে মারা যান ৭৪ জন। আর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মারা যান আরো ৬৩ জন এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৬২ জন।  এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা করেছে সরকার। গতকাল শুক্রবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এক ব্রিফিং-এ ১৪ থেকে ২০ এপ্রিল ৭ দিনের কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেন। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তাভাবনার কথা জানান।

ব্রিফিং-এ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে কঠোর লকডাউন শুরু হবে। এই লকডাউনে জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকবে। গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সকল গণপরিবহনও বন্ধ থাকবে। রোববারের মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই কঠোর লকডাউন। করোনার ঊর্ধ্বগতি ঠেকানোর জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। তাই এবার অত্যন্ত কঠোরভাবে লকডাউন হবে। তাই সবাই যেন ঘরে থাকে, সবাই যেন লকডাউন পালন করতে সহায়তা করে।

আর ওবায়দুল কাদের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানান, দেশে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। সঙ্গে বাড়ছে জনগণের অবহেলা ও উদাসীনতা। এমতাবস্থায় জনস্বার্থে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে সরকার। চলমান এক সপ্তাহের লকডাউনে জনগণের উদাসীন মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে ঘোষিত সাত দিনের লকডাউনের পক্ষে নন কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটি। গতকাল বিকালে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গত এক মাস ধরে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতি। এ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ থেকে বিধি-নিষেধ দেওয়া হয়েছে। তবুও বিধি-নিষেধ মানা হচ্ছে না। যে কারণে করোনা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বেড়েছে। এই সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে আরো দুই সপ্তাহের লকডাউন করা যেতে পারে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন ও উচ্চ সংক্রমণ এলাকাগুলোতে দুই সপ্তাহের পূর্ণ লকডাউন দেওয়া যেতে পারে। এটি শেষ হলে সংক্রমণ বিবেচনা করে আবার বিধি-নিষেধ দেওয়া যেতে পারে।

বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সাধারণ বেড, আইসিইউ অক্সিজেন সরবরাহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১২০০ শয্যাবিশিষ্ট দেশের সবচেয়ে বড় করোনা হাসপাতাল চালু হচ্ছে। সরকার এমন কার্যক্রমের মধ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। তাই আরো দ্রুত সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।

এতে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোয় ভিড় বেড়েছে। পরীক্ষা করাতে ও ফল পেতে সময় লাগছে। টেস্ট করাতে যারা আসছেন তাদের অধিকাংশই বিদেশগামী যাত্রী। এই বিদেশি কর্মজীবী মানুষরা ছাড়া অন্যরা বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষা করতে পারলে সরকারি পরীক্ষাগারের ওপর চাপ কমে আসবে। এতে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে এবং করোনা রোগীকে আইসোলেশনে রাখা সম্ভব হবে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, দেশের টিকা কার্যক্রম ফলপ্রসূ হয়েছে। এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। সরবরাহ নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আমদানি করার পুনরায় সুপারিশ করা হলো।

এদিকে করোনার প্রকোপে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ছোট ব্যবসা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই)। অনিশ্চিত খাত (ইনফরমাল সেক্টর) সব থেকে বড় অংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। অথচ এই কর্মসংস্থানগুলো ঝুঁকিমুক্ত নয়। গত বছর বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি শুরু হলে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাজার, দোকানপাট, পরিবহন, রেস্টুরেন্ট এবং ছোটোখাটো ব্যবসায় জড়িত লাখ লাখ মানুষ রাতারাতি কর্মসংস্থান হারায়। এ অবস্থায় করোনার লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, লকডাউনে ব্যবসায়ীদের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। গত বছর লকডাউনের কারণে তিন মাস আমরা ব্যবসা করতে পারিনি। তখন দোকান বন্ধ থাকার কারণেও দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়েছে। তিন মাস লকডাউনের পর ৯ মাস ব্যবসায় লোকসান গুনতে হয়েছে। সামনে ব্যবসার মৌসুম। এবারো লকডাউন দেওয়া হলো। তবে এ লকডাউন যেন দীর্ঘ না হয়। অনেক ব্যবসায়ী আছেন, যারা লোকসানে আছেন। তা ছাড়া এবার যদি লকডাউনে দীর্ঘ দিন দোকান বন্ধ থাকে তবে আমরা না খেয়ে মরব। রমজানের এক মাসে বেচাকেনার জন্য বাকিতে লাখ লাখ টাকার পণ্য স্টক করা হয়েছে। যদি দোকান না খুলতে পারি তবে ওই টাকা পরিশোধ করব কীভাবে আর নিজেরা বাঁচব কীভাবে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads