• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
মৃৎ শিল্পীদের উৎসবের জায়গায় বিষাদের ছায়া!

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

মৃৎ শিল্পীদের উৎসবের জায়গায় বিষাদের ছায়া!

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ১১ এপ্রিল ২০২১

দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলার নববর্ষ। নববর্ষকে কেন্দ্র করে গ্রামে-গঞ্জে বসে জমজমাট বৈশাখী মেলা। এ মেলায় গ্রাম-বাংলার একটা বড় অংশ জুড়েই দেখা যায় মৃৎশিল্পের আবেদন । বছরের অন্য সময় মাটির তৈরি প্রয়োজনীয় অনেক তৈজসপত্র খুঁজে পেতে কষ্ট হলেও বৈশাখ মাসে সহজেই হাতের কাছে তা পাওয়া যায়।

বিশেষ করে মেলাকে ঘিরে তারা মাটির তৈরি পুতুল, ঘোড়া, গরু, হাতি, ময়ূর, খেলনা, হাড়ি, পাতিল, খোড়া, থালা  মাছসহ বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী নিপূণভাবে তৈরি করে থাকেন। সেই সাথে মনের মাধুরী মিশিয়ে ফুটিয়ে তোলেন চমৎকার সব নিদর্শন। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দরুইন গ্রামের  মৃৎ শিল্পীদের  অনেকটাই দুর্দিন চলছে। মেলাকে সামনে রেখে খেলনাসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরি করে প্রস্তুতি নিলেও করোনার  দ্বিতীয় ঢেউ এর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে পড়ছে।  উৎসবের জায়গায় নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া।

বাঙ্গালী জাতির অন্যতম ঐতিহ্য মৃৎ শিল্প। এই শিল্পের চাহিদা বছরের অন্য সব সময়ে না থাকলেও পহেলা বৈশাখে মাটির তৈরি জিনিসপত্র ছাড়া যেন একেবারে চলেই না।

পহেলা বৈশাখকে ঘিরে এ উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হতো। মেলার চাহিদা মেটাতে ও মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করতো দরুইন গ্রামের মৃৎ শিল্পীরা। কিন্তু এবার ও তাদের চিত্র ভিন্ন দেখা যায়। নেই মনের মাধুরী মিশিয়ে মাটির তৈরি খেলনার আকৃতি দেয়ার ব্যস্ততা। নেই তাদের ঘরে ঘরে আনন্দের কোন ছাপ। দরুইন গ্রামে  ১৫টি পরিবার এ পেশার সাথে জড়িত। করোনার প্রভাব ঠেকাতে ও জন সমাগম রোধে সরকার পহেলা বৈশাখের মেলাসহ সকল অনুষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। তাই মাটির তৈরি জিনিসপত্রে রং-তুলি দিয়ে হরেক রকমের নকশা করার ব্যস্ততা নেই মৃৎ শিল্পীদের। বেশীভাগ লোকজনই বিভিন্ন প্রকারের মাটির জিনিস তৈরী রং নাদিয়ে জমাট করে ঘরের এক জায়গায় রেখেছেন। অনেকে আবার টুকটাক কাজ করছেন। কারণ তৈরী করা কেনা মাটি বৃষ্টিতে চলে যাবে তাই নষ্ট হওয়া থেকে সময় করে বিভিন্ন প্রকার জিনিস তৈরী করে শুকিয়ে রাখছেন। তৈরী করা মাটির ওইসব জিনিসগুলো কী করবেন এ নিয়ে সবাই চিন্তিত।

তাছাড়া নানা কারণে আধুনিকতার ছোঁয়াই গ্রাম বাংলার আবহমান কালের ঐতিহ্য মৃৎ শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। অনেকেই বাপ দাদার এ পেশা বদল করে অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আর যেটুকু আছে করোনার কারনে তাদের কপাল পুড়ে  ভেঙ্গেছে নানান স্বপ্নও ।

দরুইন  গ্রামের মৃৎ শিল্পী কালুপাল (৬০) বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে বাপ দাদার এই ব্যবসা আকড়ে ধরে বেচে আছি।  বৈশাখ আর জৈষ্ঠ্য মাসকে ঘিরে সব সময় অপেক্ষায় থাকি। এই দুই মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক মেলা বসে। এসব মেলায় মাটির তৈরি জিনিসপত্র, খেলনা বিক্রি করে থাকি। প্রতি বছরের ন্যায় এবার ও আমরা তিন-চার মাস আগে মাটির জিনিসপত্র ও খেলনা তৈরি করে মেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়।  কিন্তু করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় কোথাও মেলা বসছে না। মেলার জন্য তৈরী করা প্রায় লক্ষাধিক টাকার উপর মাটির জিনিসপত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছি ।

সন্ধ্যা রানী পাল বলেন, প্রতি বছর অপেক্ষায় থাকি বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাসের। এই দুই মাস দেশের বিভিন্ন জায়গায় মেলায় গিয়ে  এক থেকে দেড় লক্ষটাকার মাটির জিনিস বিক্রি করা হয়। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে লাখ টাকার বেশি লাভ হয়। সেই টাকায় আমরা সারা বছরের সংসারের খরচ চালাই। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পুঁজি লাগিয়ে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে ঘরে ফেলে রেখেছি। কোথাও কোনো মেলা নেই। এই ক্ষতির ঘানি আমাদের অনেক বছর টানতে হবে।

ঝর্ণা রানী পাল  জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বাংলা নববর্ষসহ সব ধরনের উৎসব বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এখন খেলনা সামগ্রী বিক্রি করতে না পারলে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। তিনি আরো বলেন এখানে ১৫টির উপর মৃৎ শিল্পের পরিবার রয়েছে। অধিকাংশ পরিবারই খেয়ে না খেয়ে তাদের পৈতৃক এই পেশা ধরে রেখেছেন। মাটির তৈরীর জিনিসের আয় দিয়ে বাড়ি-ঘর মেরামত, মেয়ের বিয়ে দেওয়াসহ নানা রকম কাজ নির্ভর করে। কিন্তু এবছর ও করোনার কারণে  তাদের পুঁজি হারাতে হচ্ছে বলে জানায়। কারণ মেলা না থাকায় ‘মাটির জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে না। করোনার কারণে আমরা আরও বেশি দরিদ্র হয়ে গেলাম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads