• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ফুরিয়ে আসছে টিকার মজুত

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

ফুরিয়ে আসছে টিকার মজুত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ এপ্রিল ২০২১

শেষ হয়ে আসছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার মজুত। দেশে যে হারে টিকা দেওয়া হচ্ছে তাতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মজুত ফুরিয়ে যাবে। সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া থেকে কেনা টিকার পরের চালান কবে আসবে তা অনিশ্চিত। টিকা পাওয়ার অনিশ্চয়তার মধ্যে ভারত থেকে টিকা আনতে সরকারের সহায়তা চেয়েছে বেক্সিমকো। কারণ নতুন টিকা না এলে টিকাদান কার্যক্রম স্থগিত রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ৭৭ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬১ জন টিকা নিয়েছেন। ভারত থেকে এ পর্যন্ত ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। সে হিসাবে এখন মজুত আছে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৯ ডোজ। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, এখন যে টিকা আছে তাতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেওয়া যাবে। এরই মধ্যে নতুন টিকা আনার বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। তা না হলে টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত রাখতে হবে।

এ নিয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান পাপন বলেন, দয়া নয়, ভারতের কাছে বাংলাদেশ অগ্রিম টাকা দিয়ে কেনা টিকা চাইছে। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর তিনি এ কথা বলেন। ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা পাওয়ার জন্য অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা টাকায় কেনা ৭০ লাখ টিকা পেয়েছি। বাকি টিকা সময়মতো দ্রুত দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

চুক্তি ছিল টিকা নিতে অগ্রিম টাকা দিতে হবে। সরকার সেটা করেছে। সার্বিক দায়িত্ব পালন করছে আমাদের কোম্পানি। তাদের ওখানে কী অনুমোদন দেওয়া লাগবে, কী না লাগবে এটা আমাদের সমস্যা নয়। সঠিক সময় টিকা না দিলে সরকার অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তারা বলে আসছে বাংলাদেশের বন্ধু ভারত। এটা দেখার সময় এসেছে।  এই ব্যাপারটা অবশ্যই আমাদের দেখতে হবে। এত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার দরকার নেই। তাদের কাছ থেকে আমরা কোনো দয়া চাচ্ছি না; টাকায় কেনা টিকা চাচ্ছি। সরকারকে টিকা পাঠানোর কথা জোরালোভাবে বলতে হবে ভারতের কাছে।

তিন কোটি টিকার চুক্তি হলেও দেড় কোটি টিকার টাকা আমরা দিয়ে দিয়েছি। এই টিকা মে মাসের মধ্যে দেওয়ার কথা ছিল। সেখানে আমরা পেয়েছি মাত্র ৭০ লাখ। বাকি টিকা আমাদের দিয়ে দিক। তারপর হয়তো ওদের দিকে তাকিয়ে থাকব না। আমরা বার বার বলছি, যেটার জন্য টাকা দিয়েছে সরকার, এই টিকা আটকানোর কোনো অধিকার তাদের নেই। যত সংকটই হোক, অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকে মিলালে হবে না। এমনকি ভারতও সেরামকে অগ্রিম টাকা দেয়নি। সেরামকে বিশ্বাস করে অগ্রিম টাকা দিয়েছে। কাজেই আমাদের টিকা দিতেই হবে। টাকা নিয়ে টিকা দেবে না এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নই। টিকা না পেলে আমাদের দ্বিতীয় ডোজের সংকট দেখা দেবে। সেরাম লিখিতভাবে জানিয়েছে ভারত সরকার টিকা আটকিয়ে রেখেছে। কাজেই আমি মনে করে এরপরও আমাদের সরকারের চুপ করে থাকার কোনো সুযোগ নেই।

এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, রাশিয়ার ফর্মুলার টিকা বাংলাদেশে তৈরি হবে। এ সম্পর্কে পাপন বলেন, বিশ্বে এখন অনুমোদন পাওয়া চারটি টিকা রয়েছে। ফাইজার, মর্ডানা, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসন। এগুলো ছাড়া অনুমোদনের আগে রাশিয়ার টিকা উৎপাদন করে লাভ নেই। রাশিয়ার টিকার অনুমোদন নিয়ে পাপন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এদের কোনো একটাতে অনুমোদন পেতে হবে। যদি এদের কোনো একটিতেও অনুমোদন না হয়ে থাকে তাহলে কেন এটা আমরা বানাব? এটা সরকার অনুমোদনও দেবে না। আমি বলতে পাচ্ছি, অনুমোদন পেলে অবশ্যই আমরা সেটি বানাব। আমাদের পরিকল্পনা ছিল সরকারকে টিকা আনতে সহযোগিতা করব। তবে এখন যে অবস্থা, টিকা না বানিয়ে কোনো উপায় নেই। বেক্সিমকো এ বছরের মধ্যে টিকা উৎপাদনে যেতে পারে। তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

ভারতে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় দেশটি থেকে টিকার নতুন চালান আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমন বাস্তবতায় গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে দেশটির হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, এই মুহূর্তে ভারত নিজেই টিকা সংকটে আছে। তবে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে, শিগগিরই বাংলাদেশে টিকা রপ্তানি করা হবে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনতে সরকার যে চুক্তি করেছে, তার অংশীদার বেক্সিমকো ফার্মা। চুক্তি অনুযায়ী তারাই টিকা নিয়ে আসবে দেশে। পরিবহনের পাশাপাশি দেশে সংরক্ষণের দায়িত্বও তাদের। অর্থও পরিশোধ করবে প্রতিষ্ঠানটি। পরে সরকার বেক্সিমকোকে দেবে টাকা। সেরাম থেকে তিন কোটি টিকা আনতে গত বছরের ৫ নভেম্বর হয় সমঝোতা স্মারক। পরে ১৩ ডিসেম্বর হয় ক্রয়চুক্তি। চুক্তির আওতায় দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ দেশে এলেও বিপুল চাহিদা আর বিশ্বজুড়ে টিকার সংকটের মধ্যে ফেব্রুয়ারির চালানে বাংলাদেশ ২০ লাখ ডোজ হাতে পায়। এরপর কেনা টিকা আর আসেনি। এর বাইরে ভারত সরকার দুই দফায় উপহার হিসেবে দিয়েছে মোট ৩২ লাখ ডোজ, সেগুলোও সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, যার মধ্যে ১২ লাখ ডোজ এসেছে গত ২৬  মার্চ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads