• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
পাবলিক পরীক্ষার  বিকল্প অ্যাসাইনমেন্ট!

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

পাবলিক পরীক্ষার বিকল্প অ্যাসাইনমেন্ট!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ এপ্রিল ২০২১

করোনার কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে প্রায় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্থবির হয়ে পড়েছে সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম। গত বছরের পঞ্চম শ্রেণি সমাপনী, জেএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া সব শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করে পরবর্তী শ্রেণিতে অটোপ্রমোশন দেওয়া হয়। আশা করা হচ্ছিল করোনা সংক্রমণ কমলে সিলেবাস কমিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু সংক্রমণ না কমায় ২০২১ সালের সব পাবলিক ও স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাগুলো নেওয়া যাবে কি তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় পাবলিক পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে অ্যাসাইনমেন্টকে স্থায়ী করার চিন্তা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ইতোমধ্যে ২০২০ সালের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখছে, কোথায় কোথায় দুর্বলতা তা শনাক্ত করতে সমীক্ষা চালানো শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না তারও সম্ভাব্যতা যাচাই করতে দুটি কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, করোনা সময় অ্যাসাইনমেন্ট কতটা কার্যকর তা যাচাই করতে সারা দেশে ২ হাজার স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনলাইন জরিপের মাধ্যমে সমীক্ষা করা হবে। কার্যক্রমটি পরিচালনা করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বেডু)। সমীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্টের (কাজ) মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখছে, কোথায় কোথায় দুর্বলতা তা শনাক্ত করতে সমীক্ষা শুরু হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থায় অ্যাসাইনমেন্ট একটি মাইলফলক। করোনা পরবর্তিত পরিস্থিতিতে এটা আরো কার্যকর প্রক্রিয়া হিসেবে বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই ফিজিক্যাল ক্লাসের বাইরে তথাকথিত পরীক্ষা পদ্ধতির মূল্যায়ন বাদ দিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যাওয়াটা এখন সময়ের দাবি। তাই কন্টিনিউ অ্যাসাইনমেন্ট বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিতেই এ সমীক্ষা চালানো হচ্ছে।

জানতে চাইলে বেডুর পরিচালক প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, সারা দেশের ২৭ হাজার স্কুলের মধ্যে ২ হাজার স্কুল স্যাম্পলিং করে নির্ধারণ করা হবে। হাওর, পাহাড়, চরাঞ্চলের স্কুলগুলোকে ক্যাটাগরিজ করে নির্ধারণ করা হবে। আশা করছি চলতি মাসের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সমীক্ষা কীভাবে পরিচালনা করা হবে জানতে চাইলে বলেন, ফেস টু ফেস সাক্ষাৎকার নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে আমরা সরাসরি সাক্ষাৎকার নিতে পারছি না। অনলাইনে কোশ্চেনিয়ারের মাধ্যমে সমীক্ষা করা হবে। দুই হাজার স্কুলের যেসব শিক্ষক অ্যাসাইনমেন্ট কাজে জড়িত ছিলেন তাদের মতামত নেওয়া হবে। শিক্ষার্থী স্যাম্পলিং ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে। প্রতি শ্রেণির ১০ জন শিক্ষার্থীর মতামত নেব। আর প্রতি শ্রেণির পাঁচ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মতামত নেওয়া হবে। তারপরও অন্যরা মতামত দিতে চাইলে সুযোগ দেওয়া হবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কীভাবে অনলাইনে প্রশ্ন পাঠানো হবে জানতে চাইলে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা এবং প্রধান শিক্ষকদের সহায়তায় নির্বাচিত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের লিংক পাঠানো হবে।

বেডু সূত্র জানায়, ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনের (এফজিডি) মাধ্যমে সমীক্ষার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে করোনা বেড়ে যাওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে। অ্যাসাইনমেন্ট স্টেকহোল্ডার (অংশীদার) যারা ছিল অর্থাৎ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মূলত লক্ষ্য করেই সমীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করা হয়েছে। এভাবে তথ্যগুলো তুলে আনা হবে। তথ্যের ভিত্তিতে রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।

সমীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর মো. বেলাল হোসাইন বলেন, অ্যাসাইনমেন্টগুলো কত শতাংশ কার্যকরী হলো, কতভাগ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে, কি কি পরিবর্তন আনা দরকার তা জানতে বেডুকে সমীক্ষা করতে বলা হয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য আনা না হলে অ্যাসাইনমেন্টের বাস্তবতা বোঝা যাবে না। তাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী সিদ্বান্ত নেব। অ্যাসাইনমেন্টে কোনো পরিবর্তন আনতে হবে কিনা, কার্যকরী কিনা, পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে নেওয়া যাবে কিনা এ ধরনের অনেক সিদ্বান্ত নিতে সমীক্ষা প্রতিবেদন সহায়ক হবে।

দেশে করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির কারণে ক্ষতি পোষাতে ৩০ কার্যদিবসের জন্য তৈরি করা হয়েছিল সিলেবাস। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয় মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। এরপর সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে পাঠদান শেষে শিক্ষার্থীদের বাসায় বসে বিষয়ভিত্তিক অ্যাসাইনমেন্ট (কাজ) দেওয়া হয়। শিক্ষার্থী তা শেষ করে শিক্ষকের কাছে জমা দেয়। শিক্ষার্থীকে প্রতি সপ্তাহে তিনটি করে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছিল। অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়া, মূল্যায়ন, পরীক্ষকের মন্তব্যসহ শিক্ষার্থীকে দেখানো এবং পরে প্রতিষ্ঠানে সেটি সংরক্ষণ করার কাজ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads