• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই কেমিক্যাল ব্যবসা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই কেমিক্যাল ব্যবসা

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৫ এপ্রিল ২০২১

ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই ৮ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছেন পুরান ঢাকার কয়েক হাজার কেমিক্যাল ব্যবসায়ী। ব্যবসা করার প্রাথমিক সনদ ছাড়াই বিদেশ থেকে মালামাল আমাদানি, রক্ষণ ও বাজারজাত করছেন তারা। বছরের পর বছর ধরে তারা এভাবেই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। এতে বিস্মিত সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৩ সাল থেকে ওই এলাকার সব ধরনের কেমিক্যাল কারখানার জন্য ট্রেড লাইসেন্স অনুমোদন ও নবায়ন বন্ধ রাখে সিটি করপোরেশন। তবে ২০১৯ সালে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বন্ধ থাকা ট্রেড লাইসেন্স শর্তসাপেক্ষে নবায়ন করতে শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী জানান, কয়েক বছর ধরে পুরান ঢাকার কোনো কেমিক্যাল কারখানা বা গোডাউনের ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া আগে যারা লাইসেন্স নিয়েছেন তাদেরটাও নবায়ন করা হচ্ছে না। তবে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া তারা কীভাবে ব্যবসা করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা বিস্ময়কর। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কীভাবে তারা ব্যাংক থেকে লোন নিচ্ছেন, পণ্য আমদানি করছেন, বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করানো থেকে বিক্রি পর্যন্ত এতগুলো পর্যায়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে তারা ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কীভাবে কাজ করছেন তা আমরা জানি না। তবে মাঠপর্যায়ে ডিএসসিসি’র তদারকি অব্যাহত আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যখন মাঠপর্যায়ে কাজ করতে যাই, তখন তারা দোকানপাট বন্ধ করে পালিয়ে যান। এসব ব্যবসায়ীর একটা তালিকা করছি আমরা। এই তালিকা আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও পাঠাব।

সরকারি হিসাবে পুরান ঢাকায় প্রায় দুই হাজার কেমিক্যাল কারখানা ও গুদাম থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। বেসরকারি হিসাবমতে এই সংখ্যা ৮ হাজারেরও বেশি।

ডিএসসিসি’র রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পুরান ঢাকায় এক হাজার ৮৯৬টি কেমিক্যাল কারখানা ও গুদামের লাইসেন্স আছে।

পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের তিনটি সংগঠন রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পেইন্ট অ্যান্ড ডাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ এসিড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। এই তিন সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে  সদস্য সংখ্যা সহস্রাধিক।

সরেজমিনে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড, আরমানিটোলা, নিমতলী, মাজেদ সরদার রোড, চকবাজার, মৌলভীবাজার, রহমতগঞ্জ, হাজী আজগর লেনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কেমিক্যালের গুদাম, দোকান ও নানা ধরনের কারখানা রয়েছে। এসব গুদাম ও দোকানে রয়েছে থিনার, গ্লিসারিন, সোডিয়াম অ্যানহাইড্রোস, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, সোডিয়াম থায়োসালফেটসহ ভয়ংকর রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ। প্রায় প্রতিটি বাসাবাড়ির নিচে প্লাস্টিক দানা ও পণ্য তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে শিল্প এলাকার মতো। এসব কেমিক্যাল পণ্যের প্রায় সিংহভাগই আমাদিন করতে হয়। কিন্তু ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যাংকিং ও বন্দর কার্যক্রমসহ গুদামজাত পর্যন্ত এতগুলো ধাপ কেমন করে ব্যবসায়ীরা অতিক্রম করছেন এ বিষয়ে একাধিক ব্যবসায়ীকে প্রশ্ন করা হলেও কেউ উত্তর দেননি।

নাম না প্রকাশের শর্তে এফবিসিসিআই’র কেমিক্যাল বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সদস্য ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক এক নেতা বলেন, সবকিছু ম্যানেজ করেই ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। তিনি জানান, অনেক ব্যবসায়ী বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আনছেন। অনেকে অসৎ পথে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে লাইসেন্স নিয়েই অবৈধ কারবার করছেন। আবার অনেকে অনুমতি ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্রকৃত কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা অবৈধ কারবারে সম্পৃক্ত নন বলে জানান তিনি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads