• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
খাওয়া কমিয়েছেন ৫২ শতাংশ মানুষ

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

সিপিডির জরিপ

খাওয়া কমিয়েছেন ৫২ শতাংশ মানুষ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ মে ২০২১

করোনা মহামারীর প্রকোপে দেশে ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই কাজ হারিয়েছেন গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে। কাজ হারানো বেশিরভাগ মানুষই নতুন করে কর্মসংস্থানে ফিরে এলেও আয় কমে গেছে। সেইসঙ্গে কমেছে কর্মঘণ্টা। আয় কমে যাওয়ায় ৫২ শতাংশ মানুষ খাওয়া কমিয়েছেন। অনেকের ঋণ বেড়েছে। কেউ কেউ সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছেন বলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপে উঠে এসেছে।

গতকাল বুধবার ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে আয়োজিত ‘কোভিডকালে আয় ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি : কীভাবে মানুষগুলো টিকে আছে’ শীর্ষক এক সংলাপে সিপিডির পক্ষে জরিপ প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন রিসার্চ ফেলো তৌফিক ইসলাম।

তিনি বলেন, ৬২ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা কখনো না কখনো কর্ম হারিয়েছেন। তবে সবাই একই সময়ে হারাননি। বেশিরভাগ মানুষ গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে কাজ হারিয়েছেন, যখন সাধারণ ছুটি বা লকডাউন চলছিল। যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের প্রায় ৮৫ শতাংশ এক মাসের বেশি সময় কর্মহীন ছিলেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমরা যখন জরিপ করি তখন প্রায় সবাই চাকরি ফেরত পেয়েছেন। সে হিসাবে মোট কর্মসংস্থানের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। এ কর্মসংস্থানটা এসেছে মূলত কৃষি খাত থেকে। কৃষিখাতে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। সেই তুলনায় আমাদের সেবা খাত যেটা কর্মসংস্থানের সব থেকে বড় জায়গা, সেখানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, প্রায় দেড় শতাংশের মতো কমে গেছে। শিল্প খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। কর্মসংস্থান সেবা খাত থেকে কৃষি খাতের দিকে গেছে। ফলে আমরা যে ধরনের কাঠামোগত রূপান্তরের কথা বলি, সেটা যতটা আধুনিক খাতে হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। উল্টো পেছনের দিকে চলে গেছে। নতুন যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলো তার প্রায় ৯০ শতাংশ হয় স্বনিয়োজিত খাতে গেছেন অথবা তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করছেন। অথবা দৈনিক শ্রমিকের কাজ করছেন। ফলে যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, তা মূলত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে হয়েছে।

জরিপে উঠে এসেছে, দৈনিক প্রায় ৪ শতাংশের মতো কর্মঘণ্টা কমেছে। সব থেকে বেশি কর্মসংস্থান যে কৃষি খাত দিয়েছে, সেখানে কর্মঘণ্টা কমে গেছে। অর্থাৎ আগে যেখানে কম সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কৃষিক্ষেত্রে কাজ করা যেত, সেখানে এখন অধিক হারে শ্রমিক যুক্ত হচ্ছে।

এ ছাড়া কাজ হারানোরা নতুন কর্মসংস্থানে ফিরলেও আয় কমে গেছে। প্রায় ৪৫ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে আগের তুলনায় আয় কমেছে। আয় কমার এই হার গড়ে ১২ শতাংশের মতো। এর মধ্যে সব থেকে বেশি কমেছে কৃষি খাতে। প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ আয় কমেছে কৃষি খাতে। একই সঙ্গে উৎপাদন খাতেও সাড়ে ১২ শতাংশের ওপরে আয় কমেছে।

আয় কমার চিত্র আমরা বয়সভেদেও উঠে এসেছে। করোনায় প্রায় সব বয়সের কর্মীদের আয় কমেছে। তবে সবচেয়ে বেশি কমেছে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সিদের। তাদের আয় কমেছে ১৫ শতাংশের ওপর। ৩০-৪৯ বছর বয়সিদের আয় কমেছে ১০ শতাংশের ওপর। ৪২-৪৩ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের কর্ম পরিস্থিতি আগের থেকে খারাপ। প্রায় ৮৬ শতাংশ জানিয়েছেন তারা আগের মতো যথেষ্ট আয় করছেন না। অর্থাৎ তারা যে ধানের আয়ের প্রত্যাশা করেন, এখন তার থেকে কম আয় করছে। তারা তাদের কার্মক্ষেত্রে সন্তুষ্ট নয়।

নতুন যে কর্মসংস্থান হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশ যুবক- যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। নতুন কর্মসংস্থান হওয়াদের প্রায় ৬৫ শতাংশ এই বয়সি। ৩০-৬৪ বছরের বয়সিদেরও বড় অংশ নতুন কর্মসংস্থানে যুক্ত হয়েছে, এ ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ৩২ শতাংশের ওপরে। এদের বড় অংশ নারী। এই নারীদের অনেকে কৃষিখাতেও যুক্ত হয়েছে। তবে নতুন কর্মসংস্থান বাড়লেও আয় বাড়েনি। যে কারণে ৭৮ শতাংশ খরচ কমিয়ে এনেছেন। ৫২ শতাংশ খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছেন। প্রায় অর্ধেক পরিবার জানিয়েছে, তারা সঞ্চয় কমিয়ে দিয়েছেন। প্রায় অর্ধেক পরিবার জানিয়েছে ঋণ বেড়েছে। ৫ শতাংশ জানিয়েছে, সম্পদ বিক্রি করে দিতে হয়েছে।

প্রসঙ্গত, শ্রমশক্তির যে কাঠামো আছে, সেটাকে ব্যবহার করে ২৬০০ থানার ওপর এই জরিপ পরিচালিত হয়। চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এই জরিপ করা হয়েছে। এ কারণে মার্চের শেষে বা এপ্রিলের শুরু থেকে করোনার যে দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে তার চিত্র জরিপে তুলে আনা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads