• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
কোয়ারেন্টাইনে অতিরিক্ত খরচে ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

কোয়ারেন্টাইনে অতিরিক্ত খরচে ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা

  • প্রকাশিত ০৮ মে ২০২১

দেশে ফিরে হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হচ্ছে প্রবাসীদের। এই টাকা অনেক প্রবাসীর কমপক্ষে দুই মাসের বেতনের সমান। এতে ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা। তাদের দাবি, সরকারি ব্যবস্থাপনা বা আরো কম দামে হোটেল কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর সরকার প্রবাসীদের দেশে আসতে নিরুৎসাহিত করে আসছিল। তবে বিভিন্ন শর্ত ও দেশে ফিরলে ৩ থেকে ১৪ দিন হোটেলে নিজ খরচে কোয়ারেন্টাইনে থাকার বাধ্যবাধকতা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এজন্য রাজধানীর ২৮টি হোটেল নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু সব হোটেলই প্রবাসীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও সরকার এসব হোটেল নিয়মিত ভাড়ার থেকে কম ভাড়ায় নির্ধারণ করেছে।

জানা গেছে, কোনো হোটেলেরই দৈনিক ভাড়া সাড়ে ৩ হাজার ৭’শ টাকার কম নয়। সেই হিসেবে একজন প্রবাসীকে ১৪ দিন হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা, যা প্রবাসে থাকার অনেক কর্মীর দুই মাসের বেতনের সমান। এসব কর্মীকে বিদেশে ফিরে গিয়েও নিজ খরচে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এজন্য ব্যয় করতে হবে অতিরিক্ত অর্থ। আবার অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় এবার দেশে ফিরতে বাড়তি উড়োজাহাজ ভাড়া ও করোনার টেস্টসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার জন্যও গুনতে হয়েছে বাড়তি টাকা।

ইতালি থেকে আসা সুমন রহমান জানান, রোম থেকে আসতে টিকিট, করোন টেস্ট, হোটেল বুকিংসহ তার প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া কোম্পানি থেকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কোম্পানি ছুটি না দেওয়ায় বিনা বেতনে ছুটি নিতে হয়। তিনি জানান, মাসে যে বেতন পান সব খরচ মেটানোর পর হাতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা থাকে। কিন্তু এবার হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতেই লাখ টাকা চলে যাবে। যা তার দুই মাসের বেতন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের উচিত আরো কম দামের কোন হোটেল নির্বাচন করা। তা না হলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা।

ব্যয়বহুল হোটেল কোয়ারেন্টাইনের সমালোচনা করে ইতালি থেকে আসা আবরার হোসেন বলেন, এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। অন্যান্য দেশে সরকারি তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র উল্টো।

ইতালির একটি রেস্টুরেন্টের কর্মী এই প্রবাসী বলেন, বাংলাদেশি টাকায় তার মাসিক বেতন প্রায় ৮০ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে হাতে থাকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। দেশে ফিরে তিনি যে হোটেল উঠছেন সেখানে ১৪দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে ব্যয় হবে প্রায় এক লাখ টাকা, যা তার দুই মাসের বেতনের সমান। এছাড়া এবার দেশে ফিরতেও অতিরিক্ত উড়োজাহাজ ভাড়া দিতে হয়েছে। বিমানবন্দরে ফিরে করোনাসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতেও দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকার নিরুৎসাহিত করলেও পরিবারের প্রয়োজনে আসতে হয়েছে। বাধ্য না হলে কোনো প্রবাসী এত ঝামেলা ও খরচ করে এ সময় দেশে আসবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দুবাই প্রবাসী হামজা আলী বলেন, শুধু কোয়ারেন্টাইনে থাকতেই তার আড়াই মাসের বেতন চলে যাচ্ছে। সরকারকে এসব নামিদামি ও ব্যয়বহুল হোটেলের বিকল্প ভাবা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গত ১৫ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২৮টি হোটেলে প্রবাসীদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেগুলো হলো- হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, বেঙ্গল ক্যানারি পার্ক লিমিটেড, সিক্স সিজন্স হোটেল, র্যাডিসন ব্লু, ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন, হোটেল বেঙ্গল ইন, রয়্যাল পার্ক রেসিডেন্স হোটেল, প্লাটিনাম রেসিডেন্স, গ্যালেসিয়া হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড, হোটেল প্লাটিনাম, হোটেল গার্ডেন রেসিডেন্স, স্কাইলিংক লিমিটেড, হোটেল দ্য রহমানিয়া ইন্টারন্যাশনাল, হলিডে এক্সপ্রেস, ওয়েস্ট পার্ক ইন রেসিডেন্স, ন্যাসেন্ট গার্ডেনিয়া, হোটেল স্প্রিং হিল অ্যাপার্টমেন্ট, এনকারেজ দ্য রেসিডেন্স, ব্লু ক্যাসল হোটেল,  রাফ্রেসিয়া সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট, হোটেল অ্যারিস্টোক্রেট ইন লিমিটেড, দ্য ওয়ে ঢাকা, ডরিন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট (সাবেক ফোর পয়েন্ট বাই শেরাটন), ন্যাসেন্ট গার্ডেনিয়া রেসিডেন্স, রেনেসাঁ ঢাকা গুলশান হোটেল, প্রিয় নিবাস স্টাইলিশ রেসিডেনশিয়াল হোটেল ও লেকশোর হোটেল।

হোটেল প্লাটিনামে একজনের কোয়ারেন্টাইন ও তিন বেলা থাকা-খাওয়ার খরচ দৈনিক তিন হাজার ৭০০ টাকা। ২৮টি হোটেলে মধ্যে এটির ব্যয়ই সবচেয়ে কম। হোটেল গার্ডেন রেসিডেন্স, স্কাইলিংক লিমিটেড, হোটেল দ্য রহমানিয়া ইন্টারন্যাশনাল এবং হলিডে এক্সপ্রেসে খরচ হয় চার হাজার টাকা।

এছাড়া র্যাডিসন, ইন্টারকন্টিনেন্টালের মতো পাঁচ তারকা হোটেলে প্রতি দিনের কোয়ারেন্টাইনের খরচ ১৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা।

প্রবাসীদের কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের জন্য হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া বাহরাইন, কুয়েত ও কাতারের ক্ষেত্রে তিন দিনের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক। আপাতত করোনার প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় কোয়ারেন্টাইন পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।

গত ১ মে থেকে শর্তসাপেক্ষে আন্তর্জাতিক কমার্শিয়াল ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বেবিচক। তবে ফ্লাইট চালুর ক্ষেত্রে ৩৮টি দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে তালিকা করে তারা। এসব দেশ থেকে আগতদের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়।

বেবিচক জানায়, ৩৮ দেশের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ২৩ দেশ থেকে ফিরলে ১৪ দিন হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। দেশগুলো হলো- ইরাক, ইতালি, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, নেদারল্যান্ড, প্যারাগুয়ে, পেরু, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, অস্ট্রিয়া, আজারবাইজান, বেলজিয়াম, চিলি, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি ও উরুগুয়ে।

এছাড়া বাহরাইন, কুয়েত ও কাতারের ক্ষেত্রে তিন দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এ তিন দেশের যাত্রীরা সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকার সুবিধা পাবেন। দেশে আসার তিন দিন পর নিজ খরচে যাত্রীদের করোনা টেস্ট করানো হবে। রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তারা বাকি ১১ দিন বাড়িতে গিয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন।

বেবিচকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ৩৮ দেশের মধ্যে বাকি ১২টি দেশ থেকে বাংলাদেশে আসা যাবে না। দেশগুলো হলো-ভারত, ওমান, ইরান, মঙ্গোলিয়া, সাইপ্রাস, জর্জিয়া, সাউথ আফ্রিকা, আর্জেন্টাইনা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা ও তিউনিসিয়া। তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে এ দেশগুলো থেকে বাংলাদেশি নাগরিক দেশে আসতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাদের নিজ খরচে সরকার নির্ধারিত হোটেলে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads