• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
নতুন টিকা না এলে সংকট!

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

নতুন টিকা না এলে সংকট!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৮ মে ২০২১

আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই দেশে টিকার মজুত ফুরিয়ে যাবে। ফলে নতুন টিকা না এলে সংকট দেখা দেবে। যদিও ঈদের আগেই চীন থেকে টিকা আসার কথা রয়েছে। আবার দেরি টিকা আসার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে মোট ৩ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসেছে মাত্র এক কেটি দুই লাখ ডোজ। বাকি ১ কোটি ৯৮ লাখ ডোজ টিকা প্রাপ্তি নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। কারণ, ইতিমধ্যে টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। ফলে বাংলাদেশে টিকা নিয়ে সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী ১০ মে চীনের সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের পাঁচ লাখ ডোজের চালান দেশে এসে পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ ছাড়া ছাড়পত্র দেওয়া হলে রাশিয়া থেকে স্পুটনিকের ৪০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। মডার্নার ভ্যাকসিন আমদানি করার আবেদন করেছে রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস। এ নিয়েও আলোচনা চলছে। তবে সিনোফার্ম এবং স্পুটনিকসহ যেকোনো টিকাই প্রথম কিছু মানুষকে দেওয়া হবে এবং তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পরে কর্মসূচি শুরু হবে।  গত ৫ মে পর্যন্ত এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৮১১ জন। দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৩২ লাখ ১০ হাজার ৫০৯ জন। দুই ডোজ মিলিয়ে ৯০ লাখ ৩০ হাজার ৩২০ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া শেষ হয়েছে। গত ২ মে থেকে বন্ধ রয়েছে ভ্যাকসিনের নিবন্ধন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির চেয়ার অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, ‘সিনোফার্ম বা স্পুটনিকের জন্য কেন্দ্রে কিছু সমন্বয় করতে হবে। যেহেতু এখন অ্যাস্ট্রাজেনেকা দেওয়া হচ্ছে, দুই রকমের টিকা নিয়ে সেখানে দ্বিধা তৈরি হবে কি না-সে বিষয়টি রয়েছে। কেন্দ্র কোথায় করা হবে তা-ও ঠিক হয়নি।’

কোন টিকা আসবে জানতে চাইলে অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘দ্বিতীয় ডোজের জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকা আমাদের লাগবেই। এ ছাড়া সিনোফার্ম, স্পুটনিকও চেষ্টা করা হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. শামসুল হক বলেন, টিকা আসবে, তবে দেরি হতে পারে। দুই থেকে তিন মাস সময়ের মধ্যে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যেতে পারে এবং প্রয়োজনে এর সময়সীমা আরো বাড়ানো যেতে পারে মন্তব্য করে ডা. শামসুল হক বলেন, নাইট্যাগ (ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ) বলছে ভবিষ্যতে তারা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সময় আরো বাড়াতে বলতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ফাইজারের টিকা আসার সম্ভাবনা রয়েছে মের শেষের দিকে। তবে ফাইজার সংরক্ষণ করতে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার দরকার। টিকা অনুযায়ী যে অ্যাডজাস্টমেন্ট দরকার হবে, সেভাবেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে- বলেন অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

ফাইজারের ডোজ আসবে ১ লাখ। এমনটা জানিয়ে ডা. শামসুল হক বলেন, এটাকে পুরো দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। একই সঙ্গে এর সংরক্ষণ পদ্ধতি নিয়েও একটু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই যেখানে ৭০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রার ফ্রিজ রয়েছে সেখানেই স্পট ঠিক করা হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, বিভিন্ন ধরনের টিকা দিতে হলে আরো দক্ষতার প্রয়োজন। একেক টিকা একেকভাবে সংরক্ষণ করতে হয়। কোম্পানিভেদে মেয়াদও ভিন্ন।’

যত দিন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে টিকা থাকবে, তত দিন কার্যক্রম চলবে বলে জানান অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, যদি আগামী ১৫ মে পর্যন্ত এখনকার টিকা দিয়ে কার্যক্রম চলে, তবে এর মধ্যে টিকা না আসলে ১৫ মের পর থেকে যাদের আট সপ্তাহ হবে, তাদের টিকা দেওয়া যাবে না। আর ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করাই যাবে।

আবার এই ১২ সপ্তাহটাও কারো এক দিনে পার হবে না মন্তব্য করে অধ্যাপক সেব্রিনা বলেন, ২৬ এপ্রিলে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয়েছে। সে হিসাবে ২৬ জুন আট সপ্তাহ হবে এবং ১২ সপ্তাহ ধরে ২৬ জুলাই পর্যন্ত সময়সীমা থাকছে। এ জন্য আমরা অতটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নই জানিয়ে অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সবাই টিকা নেওয়া ছেড়ে দেবে সে আশঙ্কাও আমরা করছি না।

কোভ্যাক্স থেকে প্রথম টিকা আসবে ফাইজারের। সেটা চলতি মাসের শেষে অথবা জুনের শুরুর দিকে আসবে বলে জানায় সূত্র। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চলমান জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে পরিবর্তন আসছে। একই সঙ্গে টিকাদান কেন্দ্র, টিকা রাখার স্থানসহ বিভিন্ন পদক্ষেপেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads