• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
কোয়ারেন্টাইন না মানলে মামলা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

কোয়ারেন্টাইন না মানলে মামলা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ মে ২০২১

করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার এবং ভারতের সার্বিক করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। কোয়ারেন্টাইন থেকে পালালে কিংবা কোয়ারেন্টাইন না মানলে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮-এ কিংবা পেনাল কোডের ২৬৯ ধারায় মামলা করার সুযোগও আছে।

ইতোমধ্যে যশোরে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থেকে ভারত ফেরত ১০ জন পালানোর পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয়। পালিয়ে যাওয়া ওই ১০ করোনা রোগীর বিরুদ্ধে গত ৮ মে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮-এ এই মামলা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এর মধ্যে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর গত সোমবার সকালে তাদের আটক করা হয়। বর্তমানে ৮ জন জামিনে আছেন, আর দুজন চিকিৎসাধীন আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন।

সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮-এর ২৪ ধারায় বলা আছে,  যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেন, জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তার নিকট গোপন করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ।

একই ধারার দ্বিতীয় উপ-ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আইনের ২৭ ধারায় বলা আছে, এই আইনের অধীন সংঘটিত কোনো অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার ও আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে। আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তার ওপর অর্পিত কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনো নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কাজ হবে একটি অপরাধ। এই ধারায় যদি কোনো ব্যক্তি অপরাধ সংঘটন করেন তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ৩ মাস কারাদণ্ডে, অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই আইনের অধীনে সব অপরাধ অ-আমলযোগ্য,  জামিনযোগ্য এবং আপসযোগ্য হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেনাল কোডের ২৬৯ ধারা অনুযায়ী সংক্রমণ ঠেকাতে মামলা করার সুযোগ আছে। দেশব্যাপী লকডাউন চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে যশোর ছাড়াও কুমিল্লা, মৌলভীবাজার জেলায় মামলা হয়েছে আগেও।

১৮৮০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ২৬৯ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি বেআইনিভাবে বা অবহেলামূলকভাবে এমন কোনো কার্য করে যা জীবন বিপন্নকারী মারাত্মক কোনো রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তা জানা সত্ত্বেও বা বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও তা করে, তবে সেই ব্যক্তি ছয় মাস পর্যন্ত যে-কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভারত থেকে বাংলাদেশি নাগরিক যারা আসছেন, তাদের সীমান্ত অতিক্রম করার পর আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠাচ্ছি। এক্ষেত্রে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসন থেকে অনেক সহায়তা পেয়েছি। তারপরও আমরা দেখেছি যে যারা রোগী কিংবা রোগীর অ্যাটেনডেন্টসহ অনেকেই এই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এটি একেবারেই যৌক্তিক নয়। তার কারণ হচ্ছে, কোয়ারেন্টাইন থেকে চলে গেলে সেখানে যদি সম্ভাব্য কোনো রোগী থাকে, যাদের ভারত থেকে সংক্রমণ নিয়ে আসার সম্ভাবনা আছে, তারা কিন্তু পুরো দেশবাসীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যারা পালিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ফেরত আনা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া কিন্তু চালু হয়েছে। কাজেই আমরা বিনীত অনুরোধ করবো আইনের প্রতি যেন আমরা শ্রদ্ধাশীল থাকি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads