• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

ক্ষতিপূরণ পান না ক্ষতিগ্রস্তরা

আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন সংখ্যা কম

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৭ মে ২০২১

সড়ক, নৌ, অগ্নিসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা পরিবারকে আদালত ক্ষতিপূরণের আদেশ দেওয়ার পরও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ক্ষতিপূরণ আদায়ে মালামাল ক্রোক বা সম্পত্তি নিলামের আদেশও তামিল হয়েছে খুব কম। সেইসাথে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বা অঙ্গ হারানোর ঘটনায় অনেক মামলার রায় আটকে আছে উচ্চ আদালতে। দিনের পর দিন আপিল কার্যক্রম শেষ হচ্ছে না বেশ কিছু মামলার। বিচারপ্রার্থীরা বছরের পর বছর ঘুরছেন আদালতের বারান্দায়।

দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মন্টু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩০ বছর আগে। বাংলাদেশ বেভারেজ কোম্পানির একট গাড়ি দুর্ঘটনাটির জন্য দায়ী। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আদালত মন্টুর পরিবারকে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন। এর আগেই বাংলাদেশ বেভারেজ কোম্পানি উচ্চ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করে। পরে আপিল বিভাগও একই রায় বহাল রাখেন। ২৪ বছর পরও সেই ক্ষতিপূরণের টাকা আজো পায়নি মন্টুর পরিবার।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং এটিএন নিউজের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিশুক মুনীরসহ পাঁচ আরোহী। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মোটরযান অর্ডিন্যান্সের ১২৮ ধারায় বাসমালিক, চালক ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দুটি মামলা করেন। সেই মামলার একটির চূড়ান্ত রায়ে তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বাস মালিকপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করায় এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি তারেক মাসুদের পরিবার।

এ ছাড়া পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয় ৭৮ জনের। ক্ষতিগ্রস্ত, আহত এবং  নিহতের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছিল; কিন্তু সেটিরও আজ পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি।

তবে অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর আদালতের আদেশে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পায় শিশু জিয়াদের পরিবার।  ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি মাঠে খেলতে গিয়ে ওয়াসার পানির পাম্পের একটি পাইপলাইনে পড়ে মারা যায় শিশু জিয়াদ।

এদিকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার পর গ্রিন লাইন পরিবহনের মালিকের পক্ষ থেকে পুরো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি পা হারানো প্রাইভেট কারচালক রাসেল সরকারকে। আর বিনাদোষে ৩ বছর কারাভোগের পর পাটকল শ্রমিক জাহালমকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন আদালত। একইভাবে বিনাদোষে ৫ বছর কারাভোগে করা বেনারসি শ্রমিক আরমানকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

এভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি সাটুরিয়া থানায় আটকে রেখে পুলিশের পরিবহনে গণধর্ষণের শিকার নারী, কেরানীগঞ্জের শুভাড্য খালে পড়ে নিহত শিশুর পরিবারসহ অগ্নি, নৌসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবার কিংবা আহত ব্যক্তিরা।

ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। তাদের মতে, এমনিতেই এ ধরনের মামলা নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘ সময় লাগে। তার ওপর কোনোমতে ক্ষতিপূরণের রায় পাওয়ার পরও যদি তা বাস্তবায়িত না হয় তাহলে এসব খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম বলেন, দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয় বলে এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্তরা আদালতের শরণাপন্ন হতে চান না। তার ওপর যদি রায় পাওয়ার পরও তা বাস্তবায়িত না হয় তাহলে হতাশা বাড়বে। তবে এ ধরনের মামলা নিষ্পত্তিতে আদালতের দীর্ঘসূত্রতা দূর এবং মামলা পরিচালনায় আর্থিকভাবে অসচ্ছলদের সহায়তার ব্যবস্থা থাকা দরকার বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, রায় বাস্তবায়ন পরিস্থিতি তদারকিতে আদালতেরই একটি ম্যাকানিজম বের করা দরকার।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ নিয়ে আদালত বেশ কিছু রায় দিয়েছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এসব রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। গাড়ির মালিকরা সবদিক দিয়ে ক্ষমতাশীল হওয়ায় তারা গড়িমসি করে ক্ষতিপূরণ না দিতে। এটা গুরুতর অপরাধ। রায় অমান্যকারীকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা দরকার। তা না হলে চালকরা আরো বেপরোয়া হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads