• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ঢাকাকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

ঢাকাকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২২ জুন ২০২১

সীমান্ত জেলাগুলো থেকে ধেয়ে আসছে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। এবার রাজধানী ঢাকাকে সুরক্ষিত রাখতে আশপাশের ৭ জেলায় ঘোষণা করা হয়েছে কঠোর লকডাউন। এর মধ্য দিয়ে কার্যত সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে ঢাকাকে। এই জেলাগুলো হচ্ছে-নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ।

এদিকে দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলাতে লকডাউন ও কঠোর বিধিনিষেধও থামছে না ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ। প্রতিদিনই রাজশাহী ও খুলনাতে বাড়ছে মৃত্যু আর আক্রান্তের সংখ্যা। ডেল্টায় বিপর্যস্ত এসব বিভাগের প্রায় সব জেলা। পাশাপাশি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তৃতীয় টিকা হিসেবে পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে ফাইজার টিকার।

শুধু সীমান্তবর্তী জেলাই নয়, দেশজুড়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর এক দিনের ব্যবধানে শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১ হাজার। গতকাল সোমবার সারা দেশে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৪ হাজার ৬৩৬ জনের, আগের দিন শনাক্ত হয়েছিলেন ৩ হাজার ৬৪১ জন। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে আক্রান্ত শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। রোববার এই হার ছিল ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

ইতিমধ্যে সীমান্তবর্তী জেলায় ভয়াবহ আকার ধারন করছে করোনা। এখন সীমান্ত ছাড়িয়ে এই ভাইরাস অগ্রসর হচ্ছে দেশের কেন্দ্রবিন্দু রাজধানী ঢাকার দিকে। এমন পরিস্থিতিতে করোনার ভয়াবহতা থেকে ঢাকাকে সুরক্ষিত রাখতেই সাত জেলায় কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত এই লকডাউন চলবে। গতকাল বিকেলে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তবে লকডাউনে এসব জেলার পোশাক কারখানা চালু থাকবে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, করোনার বিস্তার রোধে চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলেও তৈরি পোশাক খাত এর আওতাবহির্ভূত থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, লকডাউনে এসব জেলার সরকারি-বেসরকারি-আধাসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ঢাকাগামী কোনো যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। এমনকি সাধারণ জনচলাচলও বন্ধ থাকবে। শুধু জরুরি পরিষেবা, যেমন খাদ্য, ওষুধ, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের মতো সেবা চলমান থাকবে। জানা গেছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় রাজশাহী ও খুলনাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ১৩। মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর ৩ জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৬ জন, নাটোরের ৩ জন ও নওগাঁর একজন রয়েছেনন।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, এ নিয়ে গত ২১ দিনে রামেক হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২১৬ জন। রাজশাহী মেডিকেলে করোনায় মারা যাওয়াদের বেশিরভাগই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। তিনি আরো বলেন, মৃতদের বেশিরভাগেরই চিকিৎসাকালে অবস্থা খারাপ থাকছে। তাদের শারীরিক সমস্যা গত বছরের করোনার লক্ষণের চেয়ে আলাদা। 

হাসপাতালে গ্রামের রোগী বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর ৪০ শতাংশই গ্রামাঞ্চলের। কারণ হিসেবে তিনি বলেন- গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যবিধি কম মনে, অবাধে সব জায়গায় চলাচল করে এবং মাস্কও পরেন না।

আর খুলনা বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও বেড়েছে শনাক্তের সংখ্যা। একদিনে এই বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় তিনজন, কুষ্টিয়ায় তিনজন, ঝিনাইদহে দুজন ও চুয়াডাঙ্গায়, যশোরে, বাগেরহাটে এবং নড়াইলে একজন করে মোট চারজন মারা গেছেন। একই সময়ে এই বিভাগে ৯৪৫ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত রোববার (২০ জুন) আগের ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে সর্বোচ্চ ২৮ জনের মৃত্যু এবং ৭৬৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। তার আগে শনিবার (১৯ জুন) ২২ জনের মৃত্যু এবং ৬২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। সেই তুলনায় গতকাল সোমবার করোনায় মৃতের সংখ্যা কমলেও বেড়েছে শনাক্তের সংখ্যা। এদিকে গতকাল সোমবার রাজধানীর তিনটি হাসপতালে পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হয়েছে কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এটি তৃতীয় টিকা। প্রথম দিন ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩৬০ জনকে এই টিকা দেওয়া হয়। টিকাগ্রহীতাদের পর্যবেক্ষণ শেষে ৭ থেকে ১০ দিন পর অন্যদের এই টিকা দেওয়ার কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।

গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকাদান কার্যক্রম পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, পরীক্ষামূলকভাবে টিকা দেওয়ার পর পর্যবেক্ষণ করা হবে। পরবর্তীতে আরো বেশি মানুষের ওপর এই টিকা প্রয়োগ করা হবে।

তিনি বলেন,ফাইজারের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাপমাত্রা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া টিকার মিশ্রণ ঠিকমতো করাও বড় ব্যাপার। এ কারণে এই টিকা দেওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। টিকা দেওয়ার জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা সেভাবেই কাজ করছেন। যারা টিকা নিয়েছেন তারাও কোনো সমস্যার কথা জানাননি। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বোঝার মতো সময় এখনও হয়নি। তারপরও যেহেতু এই টিকা আমরা প্রথম দিচ্ছি সে কারণে যেসব হাসপাতালে আইসিইউ আছে, স্পেশাল কেয়ার নেওয়ার ব্যবস্থা আছে সেগুলোকে কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করেছি।

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ফাইজারের টিকার জন্য কোনো অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করা হয়নি। তবে যারা বিদেশগামী তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে গণটিকাদান কর্মসূচির আওতায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান শুরু হয়। গত ২৫ মে দ্বিতীয় টিকা হিসেবে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয় চীনের সিনোফার্মের টিকা। এরপর গত শনিবার থেকে দেশের ৬৭টি কেন্দ্রে সিনোফার্মের টিকার গণপ্রয়োগ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে তৃতীয় টিকার চালান হিসেবে গত ৩১ মে দেশে এসে পৌছায় টিকার আর্ন্তজাতিক প্ল্যাটফরম কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি বায়োএনটেকের তৈরি এক লাখ ৬২০ ডোজের চালান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads