• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

দেশে ৫ উৎস থেকে ছড়াচ্ছে ভয়াল করোনা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ৩০ জুলাই ২০২১

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও সংক্রমণ থেমে নেই। সচেতন না হওয়ায় এখন চিকিৎসা কেন্দ্রসহ ৫ উৎস থেকে করোনার বিস্তার ঘটছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হাসপাতাল। এরপর টিকাদান ও নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্র, অ্যাম্বুলেন্স, রোগীর স্বজন থেকে ছড়াচ্ছে। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী স্বজন, ডাক্তার নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী স্বজন, ডাক্তার নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। টিকাদান কেন্দ্র, নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্রও করোনা বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। এছাড়া রোগী ও যাত্রীবাহী অ্যাম্বুলেন্স থেকে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের ১৭ মাস শেষ হতে চলছে। এই সময়ে ভাইরাসটি যতটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তার চেয়ে ছড়িয়েছে বেশি। চিহ্নিত উৎসগুলো দ্রুত নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের প্রায় কোথাও ‘ইনফেকশন কন্ট্রোল মেজার’ মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রামগঞ্জে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। ফলে গ্রামে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে শহর এলাকায় হাসপাতাল থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে আগে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের থাকতে দেওয়া হতো না। কিন্তু এখন রোগীপ্রতি একাধিক স্বজন হাসপাতালে পালাক্রমে থাকছে। এমনকি তারা এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করছেন না।

অবাধে হাসপাতালের ভেতর থেকে বাইরে আসছেন আবার যাচ্ছেন। অনেক সময় রোগীর পাশ থেকে সরাসরি বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। এদের মাথ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।

হাসপাতালে যারা রোগীদের চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে থাকেন, বিশেষ করে চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ওয়ার্ড মাস্টারসহ অন্য কর্মীদের আগে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হতো। কিন্তু এখন সেই ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে সারাদিন কোভিড চিকিৎসা শেষে এসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিজ নিজ বাড়িতে ফিরছেন। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে একত্রে বসবাস করছেন। এসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

অনেক ডাক্তার করোনা ওয়ার্ড থেকে সাধারণ ওয়ার্ডেও যাচ্ছেন। এতেও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকছে। বর্তমানে মহামারি চলাকালীন সরকারি পর্যায়ের অ্যাম্বুলেন্স রোগীরদের পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরতদের আনা নেওয়ার কাজ করে। অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়ের অ্যাম্বুলেন্স রোগী এবং যাত্রী উভয়ই আনা-নেওয়া করে থাকে। রোগী আনার আগে বা পরে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়িটি পরিষ্কার করা হয় না। এতে করে এসব অ্যাম্বুলেন্স থেকেও ছড়িয়ে পড়ছে করোনা।

এছাড়া টিকাদান কেন্দ্র এবং কোভিড পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো থেকেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। যারা টিকা নিতে যাচ্ছেন বা পরীক্ষা করাতে যান তাদের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই বললেই চলে। গত বুধবার নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্রে একজন মারা গেছেন। তিনি অসুস্থাবস্থায় নমুনা পরীক্ষা করতে গেছেন। সেখানে তার কাছ থেকেও করোনা ছড়িয়েছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে প্রাণ রসায়নবিদ এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে ইনফেকশন কন্ট্রোল মেজার মানার প্রবণতা ছিল।

কিন্তু বর্তমানে তার উলটো আচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টিন বন্ধ করে তাদের পরিবারের মানুষদের ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে। হাসপাতালে টোটাল কেয়ার অব পেশেন্টের অবনতি হয়েছে।

ফলে রোগীর স্বজনদের বাধ্য হয়েই হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। এতে তারাও সংক্রমিত হচ্ছে এবং পরিবার-পরিজনকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন। অধ্যাপক ইকবাল বলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। লকডাউনের উদ্দেশ্য হলো, আক্রান্ত মানুষ যেন নিজ বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র যেতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা। কিন্তু এখানে লকডাউন হলে আক্রান্তদের ভ্রমণের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে অনেক জেলায় সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এর মধ্যে চলতি সপ্তাহে রাঙ্গামাটিতে ৭৫ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৬৮ শতাংশ, কুষ্টিয়া ৬২, শরীয়তপুর ও বরিশাল ৬১, বান্দরবান ৬০ শনাক্তের হার। বর্তমানে শনাক্তের হার সবচেয়ে কম পাবনায় ১৪ শতাংশ এবং এর ওপরে রয়েছে জয়পুরহাট ১৫ শতাংশ। বাকি সব জেলার সংক্রমণের হার ২০ থেকে ৬০-এর মধ্যে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে চক্রাকারে। হাসপাতাল থেকে রোগীর স্বজন, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। তাদের মাধ্যমে তাদের পরিবারের সদস্য, গাড়ির ড্রাইভার, কাজের মানুষ এভাবে দোকান বাজার সবখানে ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ গত বছর মার্চ-এপ্রিলে এ ধরনের সমস্যা ছিল না বললেই চলে। তখন চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা ছিল। সবার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার একটা প্রবণতা ছিল। এক্ষেত্রে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ছিল।

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, বিজ্ঞানসম্মতভাবে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করা হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে আক্রান্তরা কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। ফলে মাতৃদুগ্ধ পানকারী ছোট শিশুও করোনা আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, মহামারি নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা গুরুত্বপূূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে সে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

বিশেষ করে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণায় ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এতে করে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মক হারে ছড়িয়ে পড়ছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের শরীরে দ্রুত নিউমোনিয়ার সংক্রমণ দেখা দেয় এমনকি স্বল্প সময়ে ফুসফুস আংশিক বা পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে মৃত্যু ডেকে আনে। তাই সংক্রমণের এই চক্র ভাঙতে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে এবং ব্যাপক হারে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads