• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

পানিবন্দি হাজারো পরিবার

নদনদীর পানি বৃদ্ধিতে ৮ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৩ আগস্ট ২০২১

ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মার পানি গত পাঁচদিন ধরে বেড়েই চলেছে। ফলে প্রতিদিনই ফরিদপুরের নিম্নাঞ্চলের পাশাপাশি নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে চার উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া  দেশের বিভিন্ন নদনদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ইতোমধ্যে আট জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বন্যাপ্রবণ নদ ব্রহ্মপুত্রের পানিও বাড়ছে। এই নদের অববাহিকাও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মার পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে, গঙ্গা ও সুরমা-কুশিয়ারার পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আজ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া স্থিতিশীল হতে পারে তিস্তা নদীর পানির সমতল। আজকের মধ্যে কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরিয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। এ সময়ে যমুনা নদী সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

পাউবো জানিয়েছে,  ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৭ আগস্টের মধ্যে জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ স্টেশন, বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি স্টেশন, সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর স্টেশনে পানি সমতল বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। মানিকগঞ্জের আরিচা স্টেশন, সিরাজগঞ্জের সিরাজগঞ্জ স্টেশন এবং টাঙ্গাইলের এলাসিন ঘাট স্টেশনেও পানির সমতল বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। ইতোমধ্যে এসব স্থানের কোথাও কোথাও পানির সমতল বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে।

গঙ্গানদীর পানির সমতল আগামী ৫ দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে পদ্মানদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্ট ও শরীয়তপুরের সুরেশ্বর পয়েন্টে পানির সমতল আগামী ৭ দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে, যার ফলে চলমান বন্যা পরিস্থিতি আগামী ৭দিন অব্যাহত থাকতে পারে।  এছাড়া মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকূল এবং মাওয়া পয়েন্টে পানি সমতল ২৫ আগস্ট নাগাদ বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। তবে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোতে পানি সমতল বাড়লেও বিপৎসীমা অতিক্রমের ভয় নেই। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, এখন পাঁচটি নদীর পানি ৮ স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে ধরলার পানি কুড়িগ্রামে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে যমুনার পানি ১ সেন্টিমিটার, পাবনার মথুরায় ১২ সেন্টিমিটার, মুন্সীগঞ্জের আরিচায় ২ সেন্টিমিটার, আত্রাইয়ের পানি সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে ৯ সেন্টিমিটার, পদ্মার পানি রাজবাড়ির গোয়ালন্দে ৪৯ সেন্টিমিটার ও শরীয়তপুরের সুরেশ্বরে ৮ সেন্টিমিটার এবং গড়াই নদীর পানি কুষ্টিয়ার কামারখালি স্টেশনে ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পাউবো জানিয়েছে,  তাদের পর্যবেক্ষণাধীন বিভিন্ন নদ-নদীর ১০৯ স্টেশনের মধ্যে রোববার পানির সমতল বেড়েছে ৫৮টিতে, কমেছে ৪৫টিতে। আর ছয়টি স্টেশনে পানির সমতল অপরিবর্তিত আছে এবং একটির তথ্য সংগ্রহ এখনো শুরু হয়নি। এছাড়া বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে আটটি স্টেশনে পানির সমতল।

ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফরিদপুরে পদ্মার পানি গত পাঁচদিন ধরে বেড়েই চলেছে। ফলে এ জেলায় প্রতিদিনই নিম্নাঞ্চলের পাশাপাশি নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলার চার উপজেলার শতাধিক গ্রামের ২৫ হাজারের বেশি পরিবার এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গোয়ালন্দ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি সাত সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা সদর, চরভদ্রাসন, সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলার শতাধিক গ্রামে এই পানি প্রবেশ করেছে। তলিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি সড়ক। ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল, ডিক্রিরচর ও চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের ৫০ গ্রামের পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুম রেজা বলেন, পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ও গবাদি পশুর খাদ্য মজুত আছে। বন্যা দুর্গতদের নিরাপদ স্থানে রাখার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে পাংশার সেনগ্রাম পয়েন্টের পানি কমেছে। অপরিবর্তিত রয়েছে সদরের মহেন্দ্রপুর পয়েন্টের পানি। গতকাল সকালে দৌলতদিয়া, পাংশা ও মহেন্দ্রপুরের পানি পরিমাপের গেজ লিডাররা এ তথ্য জানায়।

রাজবাড়ীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ জানান, শুধু দৌলতদিয়া পয়েন্টে পানি বেড়েছে। তবে এ বছর বন্যার তেমন কোনো আশঙ্কা নাই।

গতকাল সকালে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্টে রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ২৯ সেন্টিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার মাত্র ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কাজিপুর পয়েন্টে রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজিপুর, সদর ও চৌহালী উপজেলার যমুনা নদীর অভ্যন্তরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে অনেক ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাচ্ছে গোচারণ ভূমি ও ফসলি জমি। পানিবন্দি হতে শুরু করেছে চরাঞ্চলের মানুষ। 

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আরো দুই-একদিন বাড়তে পারে। এখন পর্যন্ত যে অবস্থা রয়েছে, তাতে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। তবে বন্যার কোনো শঙ্কা নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads