• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

এবার হাটিকুমরুলে হচ্ছে ইন্টারসেকশন

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ২৭ আগস্ট ২০২১

উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগে নবদিগন্তের সূচনা হচ্ছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গার মতো উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে নির্মিত হবে দৃষ্টিনন্দন আরেকটি ইন্টারসেকশন। চারলেনের এ ইন্টারসেকশন নির্মাণ হলে এ অঞ্চলের ২৭ জেলার সড়ক যোগাযোগে গতি আসবে, মহাসড়কে থাকবে না যানজট।

প্রতি বছর ঈদ উৎসব ঘিরে ভোগান্তির যে চিত্র উঠে আসে সেটি দূর হবে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ঘটবে ব্যাপক পরিবর্তন। আর এই ইন্টারসেকশন নির্মাণে ব্যয় হবে ৭৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এটি নির্মাণ করবে। আগামী ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই ইন্টারসেকশনের সঙ্গে আরো দুটি প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। 

সড়ক ভবনে এ কাজের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর এবং প্যাকেজ-৫ এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেডের পক্ষে ফারহানা মোমেন, প্যাকেজ-১৩ এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ ঝু লিবো নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। পুরো প্রকল্পের নাম হচ্ছে সাসেক রোড কানেক্টিভিটি - ২।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত মোট ১৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার সড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজ করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড। প্যাকেজটির চুক্তিমূল্য ৬০১ কোটি ১১ লাখ টাকা। একই সঙ্গে হাটিকুমরুল মোড়ে ইন্টারসেকশন নির্মাণ করবে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। এই প্যাকেজটির চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৭৪৩ কোটি টাকা ২৮ লাখ টাকা।

দুটি প্যাকেজ বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ৩ বছর। এর সঙ্গে যুক্ত হবে এক বছরের ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড (ডিএলপি)। এ ছাড়া প্রকল্পটি ছয় বছরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও থাকবে ঠিকাদারের। সড়ক ও জনপথ বিভাগ মনে করছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে যোগাযোগ আরো বাড়বে।

সাসেক-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. ওয়ালিউর রহমান বলেন, প্রথমটি হচ্ছে ডব্লিউবি জিরো ফাইভ, এতে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার রাস্তা দুইলেন থেকে চারলেনে উন্নীতকরণ। এতে আরো আছে আটটি ব্রিজ, একটি ফ্লাইওভার এবং ১০টি কালভার্ট।’ তিনি বলেন, ‘এই প্যাকেজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এটি একটু দেরি করেই আমরা শুরু করতে পারলাম। এর কারণ হলো, আগের যে কনট্র্যাক্ট ছিল সেগুলো বিভিন্ন কারণে ক্যান্সেল করতে হয়েছে। কাজটি যাতে দ্রুত শেষ করা হয় সে জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেডকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

দ্বিতীয় প্যাকেজটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আরেকটি প্যাকেজ ডব্লিউবি থার্টিন, এটিরও চুক্তি হয়েছে। চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এটি সম্পন্ন করবে। এটির মূল্য হচ্ছে ৭৪৩ কোটি টাকা ২৮ লাখ টাকা। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, হাটিকুমরুল মোড়ে সব সময় যানজট লেগে থাকে, বিশেষ করে উৎসবের সময়। দুই ঈদেই আমরা দেখি এই মোড়টিতে প্রচণ্ড যানজট তৈরি হয়। এখানে একটি ইন্টারসেকশন নির্মাণ করা হলে যানবাহন নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচল করতে পারবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের আশা হচ্ছে, এ দুটি প্যাকেজই ঠিকাদার সময়ের আগেই শেষ করে দেবে। একই সঙ্গে মানুষ যেন এই নির্মাণ কাজের জন্য ভোগান্তিতে না পড়ে সেটিও আমরা নিশ্চিত করতে বলেছি। নির্মাণ কাজের সময়েও যেন মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সে বিষয়টিতে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুদ্দিন মোনেম বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য স্ট্র্যাটেজিক একটি প্রজেক্ট। এর মাধ্যমে সাসেক-২ এর অন্য নয়টি প্যাকেজ যে আছে তারা মিলে একসঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি তৈরি করবে। একই সঙ্গে ভারত ও নেপালের সঙ্গেও এটি যুক্ত হবে। ‘আমরা সময় মতোই কাজটি শেষ করার চেষ্টা করব। যদিও কোভিডের কারণে আমাদের অনেকগুলো প্রকল্পই পিছিয়েছে, কিন্তু আমরা টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে আগের যে গ্যাপ হয়েছে সেগুলো ঠিক করে ফেলব। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা আশাকরি, উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে যাবে। তৈরি হবে কর্মসংস্থান। এই সঙ্গে আমাদের চেষ্টা থাকবে এই নির্মাণ কাজের সময় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি যতটুকু কমানো যায়।’

ঢাকা-রংপুর মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত করতে মোট ১১ ভাগে কাজ চলছে। পুরো প্রকল্পটির খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ৬৬২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) দিচ্ছে ১১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা আর সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৫ হাজার ৩৬ কোটি।   

সূত্র বলছে, ইন্টারসেকশনের সঙ্গে ৪ লেনের যে সংযোগ তাতে সড়কের যানজট থাকবে না।  ঢাকা-রাজশাহী-ঢাকা, ঢাকা-রংপুর-ঢাকা এবং পাবনা-রংপুর, রংপুর-পাবনা পৃথক লেন থাকায় যানজট আর হবে না। আর এটি ভাঙ্গার মতো দৃষ্টিনন্দন হবে।

হাটিকুমরুল গোলচত্বর, এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২৭টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। ফলে প্রায়ই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রী ও চালকদের। এই ইন্টারসেকশনের মাধ্যমে গোলচত্বরের ১ কিলোমিটার আগেই ভাগ হয়ে যাবে বিভিন্ন জেলার যানবাহনগুলো।

আধুনিক এ ইন্টারসেকশন নির্মাণশৈলীতে থাকবে নানা সুযোগ-সুবিধা। থাকছে গাড়ি পার্কিং সুবিধাসহ চালকদের বিশ্রামাগার। পথচারীদের পারাপারের জন্য ফ্লাইওভার ও ওয়াকওয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কমে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে বলে মনে করছেন চালক ও যাত্রীরা।

আন্তর্জাতিক মানের এ ইন্টারসেকশনে এ দূরপাল্লার যানবাহনের পাশাপাশি ধীরগতির পরিবহনের জন্য থাকছে আলাদা লিংক রোড। এতে খুশি স্থানীয় পরিবহন চালকরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উত্তরবঙ্গের পরিবহন ব্যবস্থায় গতি আসবে বলে মনে করেন সিরাজগঞ্জ বাস-মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, উত্তরের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত এই স্থানটি যেভাবে উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে তাতে করে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগের যে উন্নয়ন হবে তাতে এই এলাকায় বিনিযোগেরও পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

প্রসঙ্গত, সাসেক-২ এর আওতায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুরের মডার্ন মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৯০ কিলোমিটার মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। উত্তরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগে এটি একটি বড় মাইলফলক। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads