• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

টিকায় পিছিয়ে হাওরবাসী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

যাতায়াতে সমস্যা, রেজিস্ট্রেশন জটিলতা, সচেতনতার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে দেশের হাওর এলাকায় করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করার হার কম বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

নেত্রকোণার হাওর এলাকা খালিয়াজুরীর বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা স্বপন ধর (৫৫)। গত ৭ আগস্ট ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্যাম্পেইনের আওতায় কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা পাননি তিনি। এখন টিকা নিতে হলে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে তাকে। সেখানে ট্রলারে যাওয়া আসায় খরচ হবে দুইশো টাকার বেশি। তাই আবার যদি ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেওয়া হয় তখন তিনি টিকা গ্রহণ করবেন। স্বপন ধর বলেন, ৭ তারিখ আমিসহ অনেকে টিকা না পেয়ে ফিরে এসেছি। আবার ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দিলে যাব। টিকা নিতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে উপজেলায় গেলে অনেক টাকা খরচ হবে, তাই আপাতত টিকা নিতে যাবো না।

শুধু নেত্রকোণার স্বপন ধর নয়, যাতায়াত সমস্যার কারণে টিকা নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে হবে বলে টিকা নেননি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার জাফর আলি (৬৫)। তিনি বলেন, আমি করোনার টিকা নিতে চাই। কিন্তু টিকা নিতে উপজেলায় যেতে অনেক কষ্ট, নৌকায় যেতে দুই থেকে আড়াইশো টাকা লাগবে। আমাদের জন্য ইউনিয়নে টিকা দিলেই বেশি ভালো হয়।

সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরের সংখ্যা প্রায় ৯৫টি। জেলায় এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০.৮৪% মানুষ একডোজ ও ৩.৮৭% মানুষ দুইডোজ টিকা নিয়েছেন। নেত্রকোণার ১০.৬৭% মানুষ একডোজ ও ৪.০৩% মানুষ দুইডোজ টিকা পেয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলায় হাওরের সংখ্যা ৯৭টি, জেলার মাত্র ৯.৮৩% মানুষ একডোজ ও ৩.৪% মানুষ দুইডোজ টিকা পেয়েছে।

দ্রুত অধিক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে গত ৭-১২ আগস্ট ক্যাম্পেইন করে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে সারা দেশে টিকা দেয় সরকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ক্যাম্পেইনের ৬ দিনে নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জে টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষ। ক্যাম্পেইনের প্রথম দিন ৭ আগস্ট সুনামগঞ্জে টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৬৪৪৮ জন, এখন তা দিনে ৩ হাজার জনে নেমে এসেছে। হাওরের অন্যান্য জেলাগুলোতেও এখন দিনে দুই থেকে তিন হাজার টিকা দেওয়া হচ্ছে।

সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন বলেন, ক্যাম্পেইনের পর মানুষের টিকা নেওয়ার আগ্রহ বেড়েছে। হাওর এলাকার মানুষের টিকা পেতে যাতায়াত ও রেজিস্ট্রেশন একটি সমস্যা। আমাদের হাতে বেশি টিকা আসলে আবার ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেওয়া হবে।

নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলের তিনটি উপজেলা হচ্ছে-খালিয়াজুরী, মদন ও মোহনগঞ্জ। এ তিন উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৪ লাখ ৩৪ হাজার জন। এর মধ্যে টিকা পেতে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৬৩ হাজার। নিবন্ধিতদের মধ্যে এ পর্যন্ত টিকার আওতায় এসেছেন (১ম ডোজ গ্রহণ করেছেন) ৩২ হাজার । আর দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করেছেন মাত্র ১০ হাজার জন। অন্য কয়েকটি উপজেলার তুলনায় এ তিন উপজেলায় টিকা গ্রহণকারী লোকের সংখ্যা কম। এর মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি কম খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলায়।

খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আতাউল গণি ওসমানী বলেন, পিছিয়েপড়া এলাকা, সচেতনতা কম, এছাড়া রয়েছে যোগাযোগের সঙ্কট। সবকটি ইউনিয়ন থেকে উপজেলা সদরে আসতে হয় ট্রলারযোগে। এতে কিছু টাকা খরচ হয়। এছাড়া নিবন্ধন করার ক্ষেত্রেও কিছু জটিলতা রয়েছে। সব এলাকায় কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সুবিধা নেই। আছে লোডশেডিং। এসব সমস্যার কারণে এখানে একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে প্রথম দিককার তুলনায় এখন আগ্রহী লোকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

মদন উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাসানুল হোসাইন বলেন, প্রথম দুইমাস টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ খুবই কম ছিল। এখন ধীরে ধীরে কিছুটা বাড়ছে। আমরা প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে আগ্রহী করে তুলছি।

নেত্রকোণার সিভিল সার্জন ডা. সেলিম মিয়া বলেন, মোহনগঞ্জে খালিয়াজুরী এবং মদন উপজেলায় টিকা গ্রহণে একটু কম সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। দুর্গম যাতায়াতব্যবস্থা এর বড় কারণ। সেপ্টেম্বর মাসে আরো একবার গণটিকা দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করা হলে হয়ত আরো কিছুটা সাড়া পাওয়া যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, শুধু হাওর নয়, সব প্রান্তিক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি। গ্রামের বয়স্ক মানুষদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হবে। হাতে পর্যাপ্ত টিকা আসলে আবার ক্যাম্পেইন করে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক ড. আহমেদ মুশতাক রাজা চৌধুরী বলেন, যাতায়াত খরচ ও সময়ের কারণে হাওরের মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভ্যাকসিন সেন্টারে যেতে চায় না। তাদের কাছে টিকা পৌঁছানোর দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। হাওরের ছোট ছোট গ্রামগুলোতে ভ্যাকসিন সেন্টার স্থাপন করে তাদের ভ্যাকসিন দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার এনজিও সম্পৃক্ত করতে পারে। কারণ প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা এনজিওদের রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads