• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

নিরাপত্তা নেই মেইল ট্রেনে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

মেইল ট্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ মেইল এক্সপ্রেস কমিউটারে কোনো পুলিশ সদস্যই দিতে পারে না বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশ। অন্যদিকে ২১/২২টি বগির আন্তঃনগর ট্রেনের নিরাপত্তায় দেওয়া হয় মাত্র দুই থেকে তিনজন কনস্টেবল। ময়মনসিংহগামী মেইল এক্সপ্রেসে ডাকাতি ও যাত্রী খুন হওয়ার পর ট্রেনের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন বড় করে দেখা দেয়। তাই যাত্রীবাহী ট্রেনের নিরাপত্তা আরো জোরদারের দাবি জানান যাত্রীরা।

এদিকে ট্রেনের ছাদে মহামারির মধ্যে যাত্রী বোঝাই করে নেওয়ার দায় এড়িয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেছেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনা হলেও ট্রেনের নিরাপত্তা রেলওয়ে পুলিশ তাদের মতো করে করেন।

গত বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা দেওয়ানগঞ্জগামী ৫১নং কমিউটার ট্রেনটি গফরগাঁও রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে এলে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্যরা ছাদের ভ্রমণরত যাত্রীদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় জামালপুর পৌর শহরের বাগেরহাট বটতলা এলাকার সাগর (২৫) ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ী মিতালী বাজার এলাকার রুবেল (২৫) নিহত হন।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানায় মামলা হয়েছে এ ঘটনায়। এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন একজনকে আটক করা হয়েছে।

গত শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার এস আই মো. আকবর হোসেন জানান, গত শুক্রবার রাতে মামলাটি করেন নিহত মো. সাগরের মা হনুফা বেগম। মামলায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

ট্রেনে ডাকাতির ঘটনা ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে রেলওয়ে পুলিশ। ট্রেনটিতে ছাদে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা গন্তব্যে যাচ্ছিল। করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেনে উঠার কথা থাকলেও যাত্রী, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কেউ তা মানেনি। এতেই ডাকাতির ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছে রেলওয়ে পুলিশ ও বাংলাদেশ রেলওয়ে। কেউ ছাদে না উঠলে এমন ঘটনা ঘটতো না বলেই তারা মনে করছেন। ট্রেনের প্রয়োজন অনুযায়ী নিরাপত্তা দেওয়া হয় উল্লেখ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল্লাহ আল মামুন  বলেন, আমরা আন্তঃনগর ট্রেনে পুলিশ দিয়ে থাকি। এসব ট্রেনে অস্ত্রসহ দুই থেকে তিনজন কনস্টেবল দিতে পারি। কখনো কখনো এএসআই বা এসআইরাও থাকেন। তবে কমিউটারে বা মেইলে ফোর্স দিতে পারি না। কারণ, আমাদের ফোর্সের সংখ্যা কম। আমার জোনে ৯০ জোড়া (আসা-যাওয়া ১৮০) আন্তঃনগর ট্রেন চলে। তাদের দুইজন, তিনজনের বেশি ফোর্স দেওয়া যায় না। যারা একবার ট্রেনে ডিউটিতে উঠেন, তারা গন্তব্যে যাবার পর আবার ওই ট্রেনেই নিরাপত্তা দিতে দিতে ফিরেন। তাদের পরের দিন ছুটি দিতে হয়। তা না হলে তাদের শরীর ঠিক থাকবে না। আমরা এভাবেই প্রয়োজন ও জনবল অনুযায়ী ট্রেনে পুলিশ সদস্য দিয়ে থাকি।

তিনি বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা গোয়েন্দা তথ্য ও প্রয়োজন অনুসারে করে থাকি। যখন কোনো তথ্য থাকে তখন সেসব ট্রেনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। রাত-দিন সমান এই নিরাপত্তা থাকে।

ময়মনসিংহগামী যে ট্রেনটিতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে তাতে তারা ফোর্স দিতে পারেননি বলেও জানান তিনি। যাত্রীদের ছাদে উঠে না যাওয়ার অনুরোধও করেন তিনি।

রেললাইন ছাড়াও রেলস্টেশন ও রেলওয়ের ভেতরের অপরাধ দমনও এই বাহিনীর দায়িত্বে। রেললাইনের নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে তাদের কোনো কাজ নেই। তবে নির্দিষ্ট ওই এলাকার মধ্যেই অনেক ঘটনাই ঘটে। এসব দেখতে হয় রেলওয়ে পুলিশকে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ঘটছে ট্রেন দুর্ঘটনাও। এসব কিছুই দেখভাল করতে হয় রেলপুলিশকে। এছাড়াও রেলওয়ে পুলিশ ট্রেনের নিরাপত্তার পাশাপাশি মামলার তদন্ত, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া, মাদক উদ্ধারের অভিযান, প্রশাসনিক কাজ, স্টেশনের নিরাপত্তাসহ আরো কিছু কাজ করে। এসবের মধ্যেই যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। সর্বোচ্চ কর্মকর্তাসহ প্রায় আড়াই হাজারের জনবল নিয়ে রেলওয়ে পুলিশের অধীনে ৩৪৭টি যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালিত হয়। এরমধ্যে আন্তঃনগর ১০৪টি; মেইল, এক্সপ্রেস ও ডেমু ১২০টি এবং লোকাল ১৩৫টি ট্রেনের নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

রেলওয়ে পুলিশের চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাসান চৌধুরী বলেন, আমি নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রেনে দেওয়া ফোর্সের কথা বলবো না, তবে আন্তঃনগর ট্রেনে আমরা নিয়মিত ফোর্স দিয়ে থাকি। মানুষকে সচেতন করতে কার্যক্রমও পরিচালনা করে থাকি।

ময়মনসিংহের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনটি ময়মনসিংহ অতিক্রম করার পর ডাকাত দল লুটপাট শুরু করে। তারা কেউ ভেতরে প্রবেশ করেনি। ট্রেনের শব্দের কারণে ভেতরের কেউ শব্দও পায়নি। ডাকাতরা খুন ও লুট করে নির্বিঘ্নে পালিয়েছে।

যাত্রীরা ট্রেনটির ছাদে না উঠলে ময়মনসিংহগামী মেইল ট্রেনে যে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে তা এড়ানো যেতো বলে মনে করছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনা হলেও ট্রেনের নিরাপত্তা রেলওয়ে পুলিশ তাদের মতো করে করেন। নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের। আমরা যাত্রীদের ছাদে উঠতে নিষেধ করি, তারপরও তারা ছাদে উঠে ভ্রমণ করেন। যাত্রীদেরও আরো সচেতন হতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads