• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

অপ্রত্যাশিত গতিতে ছড়াচ্ছে ওমিক্রন

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৬ ডিসেম্বর ২০২১

ক্রমেই ভয়ানক বিস্তার লাভ করছে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। গোটা বিশ্বেই তা অপ্রত্যাশিত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদিত তিনটি করোনা টিকার সুরক্ষা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। তবে এই তিন টিকার বুস্টার ডোজ ওমিক্রনের বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর হতে পরে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

নতুন করোনাভাইরাস মানবদেহে সংক্রমণের পর অসংখ্যবার রূপবদল করলেও এক বছরের বেশি সময় পর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই মহামারির মাত্রা ভয়াবহ করে তোলে। এরপর কোভিড টিকা যখন মহামারি নিয়ন্ত্রণের আশা দেখাচ্ছে, তখন গত নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকায় ধরা পড়ে ভাইরাসটির নতুন রূপ ওমিক্রন। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে যুক্তরাজ্য। এই ওমিক্রন যে কতটা দ্রুত ছড়াচ্ছে, গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সেই সতর্কবার্তাই দেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর প্রধান তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ৭৭টি দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এর চেয়েও বেশি দেশে তা ছড়িয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, জানা তথ্যের বাইরেও অনেক দেশে ওমিক্রন সংক্রমণ ঘটে থাকতে পারে, যা এখনো শনাক্ত হয়নি। ওমিক্রন ঠেকানোর কাজটি যে ঠিকভাবে হচ্ছে না, তা নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেন গ্যাব্রিয়েসুস। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে বলা যায় সত্যিকার অর্থেই আমাদের বিপদ আরো বাড়িয়ে তুলেছে। যদি ওমিক্রনে রোগীদের অসুস্থতা মারাত্মক নাও হয়, তাতেও এটা যে হারে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে, তাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বড় চাপ তৈরি করতে পারে। ওমিক্রনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টও আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এতে আক্রান্ত রোগীদের লক্ষণ-উপসর্গ মৃদু থাকার কথা জানিয়েছেন দেশটির চিকিৎসকরা। ওমিক্রন ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনলেও এর বিস্তার ঠেকানো যায়নি। এই পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলো টিকার বুস্টার ডোজের পথে হাঁটলেও গ্যাব্রিয়েসুস উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বব্যাপী টিকার বৈষম্যের চিত্র নিয়ে। তিনি বলেন, যারা অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিতে, তাদের টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া মানে হচ্ছে অধিকতর ঝুঁকিতে থাকা অনেককে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে রাখা, যারা এখনো টিকার প্রাথমিক ডোজের অপেক্ষায় রয়েছেন। বিশ্বে কোভিড টিকাদানের শুরু থেকেই বৈষ্যমের বিষয়টি আলোচিত। উন্নত দেশগুলো তাদের নাগরিকদের সুরক্ষায় টিকা মজুত করছে। বিপরীতে গরিব দেশগুলোতে চলছে টিকার হাহাকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বরাবরই বলে আসছে, শুধু নিজেরা টিকা নিয়ে বাকিদের টিকাহীন রেখে এই মহামারি নির্মূল করা যাবে না। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ওমিক্রনের দুজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওমিক্রন শনাক্ত হয়।

এদিকে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদিত তিনটি করোনা টিকার সুরক্ষা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম। তবে এই তিন টিকার একটি বুস্টার ডোজ দেওয়া হলে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ সুরক্ষা ফিরিয়ে আনে। যুক্তরাষ্ট্রে ল্যাবরেটরিতে চালানো এই পরীক্ষার ফলাফল গত মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে।

দেশটির ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল (এমজিএইচ), হার্ভার্ড এবং এমআইটির গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদিত মডার্না, জনসন অ্যান্ড জনসন এবং ফাইজার-বায়োএনটেকের তিনটি ভ্যাকসিন ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কেমন কার্যকর তা জানতে ওই গবেষণা করেছেন। তাদের এই গবেষণা এখন পর্যন্ত রিভিউড কোনো সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়নি।

ওই তিন কোম্পানির টিকা যারা নিয়েছেন তাদের শরীর থেকে রক্তের নমুনা নেওয়ার পর ল্যাবরেটরিতে সম্পাদিত ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে পরীক্ষা চালানো হয়। এতে গবেষকরা দেখতে পান, দুই ডোজের মডার্না অথবা ফাইজার-বায়োএনটেক এবং এক ডোজের জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা দেওয়ার পর ওমিক্রনের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কম মাত্রার অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে।

তবে সম্প্রতি যারা এই তিন টিকার একটি বুস্টার ডোজ হিসেবে নিয়েছেন, তাদের শরীর থেকে নেওয়া রক্তের নুমনায় ওমিক্রনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

বিজ্ঞানীরা অবশ্য করোনার নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট আগের অন্যান্য ধরনের তুলনায় অধিক-সংক্রামক বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আধিপত্য বিস্তারকারী অতি-সংক্রামক ডেল্টার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সংক্রামক। তবে শিগগিরই ডেল্টাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ওমিক্রন।

সম্প্রতি প্রকাশিত অন্যান্য গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে মিল রয়েছে মার্কিন বিজ্ঞানীদের ল্যাবরেটরিতে চালানো পরীক্ষার এই ফলে। গত সোমবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিরুদ্ধে দুই ডোজের ফাইজার এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারছে না।

গত সপ্তাহে বায়োএনটেক এবং ফাইজার জানায়, ল্যাবরেটরিতে চালানো এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, তাদের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার তৃতীয় ডোজ নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে নিস্ক্রিয় করতে সক্ষম। তবে দুই ডোজে এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়কারী অ্যান্টিবডির মাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম তৈরি হয়।

তবে নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে নিজেদের ভ্যাকসিন কেমন সুরক্ষা দিচ্ছে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি মডার্না এবং জনসন অ্যান্ড জনসন।

এর আগে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, প্রচলিত টিকার দুই ডোজ করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়া থেকে দূরে রাখতে যথেষ্ট নয়। তবে ২ ডোজের পর আরেকটি বুস্টার ডোজ ৭৫ শতাংশের কাছাকাছি সুরক্ষা দিতে পারে বলে জানান সেদেশের বিজ্ঞানীরা। দেশটিতে ওমিক্রন ও ডেল্টা ধরনে আক্রান্তদের তথ্য নিয়ে হওয়া প্রাথমিক পর্যালোচনাগুলোতেও দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত ধরনটিকে থামাতে এখনকার টিকাগুলো কম কার্যকর বলে উঠে এসেছিল। নতুন ভ্যারিয়েন্টটি টিকার বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর তা জানতে ওমিক্রন শনাক্ত হওয়া ৫৮১ জন এবং ডেল্টা শনাক্ত হওয়া কয়েক হাজার রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা। বুস্টার নেওয়ার পর কোভিড উপসর্গের বিরুদ্ধে ৭৫ শতাংশ সুরক্ষাও আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর বিরুদ্ধে টিকার যে কার্যকারিতা দেখা গেছে, তার তুলনায় কম। তবে টিকা তুলনামূলক কম কার্যকর হলেও টিকাদানের গুরুত্ব এখনও অনেক বেশি বলেও বলছেন তারা। বিদ্যমান টিকাগুলোতে এখনও যে মাত্রার সুরক্ষা পাওয়া যাবে, তা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ঠেকাতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে অনুমান যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থারও।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads