• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

অগ্রযাত্রার বিস্ময় বাংলাদেশ

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ০১ জানুয়ারি ২০২২

যুদ্ধবিধ্বস্ত এক বিরান জনপদ থেকে গেল পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন আজ বিশ্বের বিস্ময়। শিক্ষা, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি খাতে উন্নয়নসহ বদলেছে অর্থনীতিও। এগিয়ে যাচ্ছে মেগা প্রকল্পগুলো। সব মিলিয়ে এক নতুন বাংলাদেশকে দেখছে বিশ্ব। শুধু দেখছেই না, উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরা হচ্ছে বিভিন্ন দেশের কাছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে অনেক অর্জনই হয়তো এখনো অধরা। তবে বিগত এক দশকে এদেশের অর্জন অবিশ্বাস্য রকমের। বিশ্ববাসী যা ভাবতে পারেনি, তাই করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। তাই নীতি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা থাকলে ২০৪১ সালেই উন্নত দেশের মর্যাদা পাবে বাংলাদেশ। 

এদিকে সরকার বাস্তবায়ন করে চলেছে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি। লক্ষ্যে পৌঁছানোর কৌশল কী হবে তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। টার্গেট করা হয়েছে ২০৪১ সালে মাথাপিছু আয় (পিপিপি) হবে ১২ হাজার ৫০০ ডলার, যেখানে বর্তমানে দেশের মাথাপিছু আয় (পিপিপি-২০১৭) ৪০৪০ মার্কিন ডলার। পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে ০ দশমিক ৬৮ শতাংশে এবং দারিদ্র্য হার হবে ৩ শতাংশের নিচে।

২০৩১ সাল নাগাদ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে হবে ৯ শতাংশ, দারিদ্র্য হার ২০২০ সালের ১৮ দশমিক ৮২ শতাংশ থেকে কমে ৭ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্য ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ হবে। এ ছাড়া মানুষের গড় আয়ু হবে ৮০ বছর। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের তৈরি পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১-এর সারসংক্ষেপ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সত্তরের দশকে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল দারিদ্র্য, দুর্যোগ আর রাজনৈতিক অস্থিরতার দেশ হিসেবে। একাত্তরে বিশ্বের মানচিত্রে যখন নতুন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়, তখন অর্থনৈতিকভাবে এটির টিকে থাকা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। অথচ সেই দেশটিই অর্থনৈতিক ও সামাজিক এমন কোনো সূচক নেই যাতে অগ্রগতি লাভ করেনি। লড়াই-সংগ্রাম করে স্বাধীনতা পাওয়া এ দেশটি শুরুতেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে পরিচিতি পায়। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আলোচিত হয়েছে। এখনো বাংলাদেশ সম্পর্কে আলোচনায় প্রাধান্য পায় ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকই।

স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে বিগত এক যুগে যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশের বিস্ময়। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, নদীর তলদেশে টানেলসহ চলমান নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হবার পর পাল্টে যাবে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার সংকটময় অতীত। গল্পটা এখন এমন-কে কবে ভেবেছে, বালু মাটির এই দেশেও একদিন আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা কিংবা জার্মানির মতো চলবে মেট্রোরেল। সেই স্বপ্নও এবার পূরণ হতে চলেছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে খরস্রোতা নদী পদ্মাকে বশ মানিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে গর্বের পদ্মা সেতু, যা যুক্ত করেছে দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিশাঞ্চলকে। অথচ পঞ্চাশ বছর আগে যুদ্ধধ্বিস্ত বাংলাদেশের পুঁজি ছিল শূন্য। ৯ মাসের যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয় সব সড়ক, সেতুসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবন। রপ্তানিযোগ্য পণ্য ছিল শূন্যের কোঠায়। অথচ বিশ্ব মোড়লদের তাচ্ছিল্যের সেই তলাবিহীন ঝুড়ি আজ বিশ্বের বিস্ময়।

ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন সড়ক পাল্টে দিয়েছে পুরো অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত মহাসড়ক, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ, পাল্টে দিয়েছে যোগাযোগের বাধা। বাস রেপিড ট্রানজিট বা বিআরটি, পায়রা নদীর ওপর পায়রা সেতু, ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেন্ট, ক্রস-বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট। আছে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেন, ঢাকা-রংপুর চার লেন। এতসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এক অন্য বাংলাদেশের ছবি দেখবে বিশ্ব।

এদিকে সমাপ্তের পথে তিন মেগা প্রকল্প। আগামী বছরের (২০২২) বিজয় দিবসের আগেই বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেল যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার দিনক্ষণ স্থির করেছে সরকার। এ তিন বৃহৎ প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে অর্থায়নের ব্যাপারে যেন কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি না হয় সে বিষয়েও অর্থ বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য প্রযুক্তিবিদ, প্রকৌশলী, নির্মাণশ্রমিক, অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টরা বিরতিহীনভাবে পালা করে কাজ করছেন এসব প্রকল্পে। অর্থ বিভাগ, সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

অন্যদিকে পঞ্চাশ বছরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভঙ্গুর অথর্নীতির তকমা ঘুচে দেশের অর্থনীতির আকার ছাড়িয়েছে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের ঘর। স্থিতিশীল অর্থনীতি, প্রবৃদ্ধি আর সামাজিক সূচকে অগ্রগতি দিয়ে, পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ আজ এক বিস্ময়ের নাম।

বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থিতিশীল রাজনীতি থাকলে, আরও অনেক আগেই উন্নত দেশে পৌঁছে যেতো বাংলাদেশ। তারপরও যা অর্জন, সেটা রীতিমতো বিস্ময়কর।

যদিও বাংলাদেশে এখনো অর্থনীতির মূল শক্তিটা কৃষিখাত। সবজি, মাছ বা চালের উৎপাদনে হচ্ছে নিত্য রেকর্ড। নতুন আঙ্গিকে বিনিয়োগ আর পরিকল্পনায় এগুচ্ছে শিল্প আর সেবা খাত। বিজয়ের ৫০ বছরে এদেশ সমৃদ্ধি আর সোপানে বহু আগে ছাড়িয়েছে পাকিস্তানকে। দেশটির চেয়ে কমপক্ষে এক হাজার ডলার বাড়তি মাথাপিছু আয়। দারিদ্র্যের হার কিংবা সামাজিক সব সূচকেও অনন্য, বিস্ময়। অগ্রযাত্রার ৫০ বছরে বাংলাদেশ পেছনে ফেলেছে বহু দেশকেও। আর বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছাড়িয়েছে ৩৫ লক্ষ কোটির ঘরে। নিজেদের টাকায় তৈরি হচ্ছে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প।

নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধিন প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রসহ ১০-১২টি মেগা প্রকল্পসহ কয়েকশ প্রকল্প দেশি-বিদেশি অর্থায়নে হচ্ছে।

সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মেগা প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ৫৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যার মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পের তালিকার শীর্ষে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প (১৮ হাজার ৪২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা), মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টে (৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা), চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রকল্প (৫ হাজার ৫৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা), ঢাকা ম্যাস র্যাাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) (৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা), পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (১ম সংশোধিত), (৩ হাজার ৮২৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প (৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা), পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প (৩ হাজার ৫০০ কোটি), ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প (৩ হাজার ২২৭ কোটি ২০ লাখ), এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রকল্প (৩ হাজার ৫১ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সমপ্রসারণ (১ম পর্যায়) (১ম সংশোধিত) (২ হাজার ৮২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা)। মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিনিয়োগের সমাবেশ ঘটায় প্রবৃদ্ধির গতিশীলতা অব্যাহত থাকবে এবং আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে ২০৪১ সময় পর্যন্ত ১০ শতাংশ হবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সিটি ইউনিভার্সিটির ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মিহির কুমার রায় মনে করেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সত্ত্বেও আগামীতে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এগুলোর মধ্যে আছে- প্রথমত জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী যারা ১৫-২৯ বছর বয়সের এখনও ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষা, কাজে ও প্রশিক্ষণে যুক্ত নেই। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনশীল কাজে লাগাতে হবে।

দ্বিতীয়ত ভবিষ্যতে উন্নত দেশ হতে হলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরি করতে হবে। তৃতীয়ত রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে ব্যবসায় পরিবেশ উন্নয়নে আরও মনোযোগ দিতে হবে। চতুর্থত স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে, রফতানি পণ্যের ভেতরে ও বাইরে বহুমুখীকরণে নজর দিতে হবে। মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। অবকাঠামো খাতে আরও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পঞ্চমত বাংলাদেশে করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত হয়ে সামপ্রতিক দারিদ্র্য বৃদ্ধি, শ্রমজীবী ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্ম হারাদের দ্রুত কর্মসংস্থান করতে হবে। ষষ্ঠত মেগা প্রকল্পগুলোর সময়মতো শেষ করা, যেমন- আগামী বছরের জুন মাসে পদ্মা সেতু চালু হতে পারে। মনে রাখতে হবে, সময়ের কাজ শেষ করতে হবে যথাসময়ে। তবেই সুফল পাওয়া যাবে। এছাড়া নগরকেন্দ্রিক পরিকল্পনার পাশপাশি প্রান্তিক মানুষদেরও উন্নয়নের আওতায় আনার তাগিদ দিলেন তিনি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতি স্পষ্ট তবে একই সাথে বৈষম্য এখন বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। বৈষম্য শুধু রাষ্ট্র ও সমাজই নয়, দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিকেও পিছিয়ে দিতে পারে। তিনি বলেন, ১৯৭২-এ যখন বঙ্গবন্ধু ক্ষমতা গ্রহণ করলেন তখন বাংলাদেশ ছিল ২৪ বছরের শোষণে বিপর্যস্ত ভঙ্গুর এক অর্থনীতি। সেখান থেকে চরম শোষিত ও যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের ৫০ বছরের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, মোটেও কম নয়।

বৈদেশিক বাণিজ্য বিশ্লেষক হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত এই অর্থনীতিবিদ আরো বলেন— সত্তরের দশকে বহু বিদেশি অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন বাংলাদেশ এমন দেশ, যেখানে উন্নয়ন সম্ভব হলে পৃথিবীর যেকোনো দেশে উন্নয়ন সম্ভব। সেই বাংলাদেশের মধ্য আয়ের দেশের তালিকায় উঠে যাওয়া একটি বড় উত্তরণ। একই সময়ে অর্থনীতির সুষম বণ্টনের প্রশ্নটিও বড় হয়ে উঠেছে। আমাদের জাতীয় আয় বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে কিন্তু বণ্টন সূচক বেড়ে শূন্য দশমিক ৪৬ থেকে শূন্য দশমিক ৪৮ হয়েছে। 

তার মতে, গড় মাথাপিছু আয় দিয়ে বৈষম্যকে পরিমাপ করা যায় না। করোনা মহামারি সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অসহায়ত্ব বাড়িয়েছে। তাই নতুন অর্থনৈতিক নীতি ও সামষ্টিক ব্যবস্থাপনা নতুন করে ভাবতে হবে। মাথাপিছু গড় আয়ের আত্মতুষ্টিতে বসে থাকলে হবে না।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সমাজে বৈষম্য বেশি মানে কম আয়ের মানুষও বেশি। তাদের আয় না থাকায় চাহিদাও থাকে না, ফলে কমে যায় সরবরাহ। এভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। তাই শুধু সামাজিক ন্যায্যতা নয়, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থেই অর্থনীতিতে বৈষম্য দূর করা জরুরি। তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যেই একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার পথ আরো সহজ হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশকে প্রথম থেকেই দেখানো হতো অত্যন্ত দরিদ্র একটা দেশ। দেশের লোক খাবার পাচ্ছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বন্যার ছবি। আশির দশকে নব্বই দশকের মধ্যেই আমরা আমাদের সামাজিক যে সমস্ত উন্নয়ন আছে সেই সূচকে আমরা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলাম। তখনো বাংলাদেশকে আগের মতোই ভাবমূর্তি ছিল। কিন্তু গত দশ পনের বছরে যখন বাংলাদেশে ক্রমাগত জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে সেটা এখণ সবার নজরে এসেছে।

রওনক জাহান মনে করেন একটি দেশের উন্নয়নে সবার আগে বলতে হবে সে দেশে গণতন্ত্র চর্চা আছে কি-না। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকট হলো গণতন্ত্রের প্রশ্নে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন মিলিটারি শাসনের পরে যদিও আমরা গণতান্ত্রিক নির্বাচন ফেরত আনলাম। কিন্তু ২০১৪ এর পর থেকে আমাদের সব দলের অংশগ্রহণে সেরকম নির্বাচন হচ্ছে না। গণতন্ত্রের ইমেজ কিছুদিন ভাল ছিল, কিছুদিন খারাপ ছিল। অন্য সূচকে যেমন অর্থনীতি এবং সামাজিক উন্নয়নে ক্রমাগত একটা উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু গণতন্ত্র আমরা দেখছি উঠছে আবার নামছে। এদিকেও শাসকদের খেয়াল রাখতে হবে বলে তিনি মনে করেন। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads