• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

বাণিজ্য

বাণিজ্য মেলার পর্দা উঠছে আজ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ জানুয়ারি ২০২২

করোনা মহামারির কারণে এবারো কম স্টল ও প্যাভিলিয়ন নিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিন নতুন ঠিকানায় শুরু হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর। আজ শনিবার পূর্বাচল নতুন শহরে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে আয়োজিত মাসব্যাপী মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মেলার উদ্বোধন করবেন।

মেলা উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার বিকেলে এক্সিবিশন সেন্টারে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এতে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাণিজ্য মেলায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল ও ১৫টি ফুড স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার (প্রায় ১,৫৫,০০০ বর্গফুট) আয়তনের দুটি হলে সব স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। মেলা কমপ্লেক্সের বাইরে (সম্মুখ ও পেছনে) প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও ফুড স্টল নির্মাণ করা হয়েছে।

পণ্যের বাজার সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কৌশল হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন ও মেলায় অংশগ্রহণ। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় বাণিজ্য মেলার নবনির্মিত এই স্থায়ী ভেন্যুতে এবারের মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে যুক্ত হতে যাচ্ছে এক নতুন অধ্যায়। দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা হচ্ছে।

মেলার সব আয়োজন যখন চূড়ান্ত, তখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা ফের বাড়তে শুরু করেছে; নতুন ধরন ওমিক্রনও উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। সবমিলিয়ে মেলা আয়োজন নিয়ে বিপাকেই পড়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। শেষমেশ শুরু হলেও ভালোভাবে শেষ হবে তো, এ নিয়ে চিন্তায় আছেন ইপিবির কর্মকর্তারা।

২০২০ সালের মেলায় মোট ২১টি দেশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছিল। তবে এবার করোনার কারনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম। এবার বাংলাদেশ ছাড়াও ইরান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তানের স্টল থাকবে।

মেলার পরিচালক ইপিবির সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, সরাসরি দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও তুরস্ক অংশ নিচ্ছে মেলায়। এছাড়া দেশি এজেন্টের মাধ্যমে অনেক দেশের প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। ব্রাজিল থেকে আসতে চেয়েছিল; কিন্তু ওখানে করোনার প্রকোপ বাড়ায় তারা আসতে পারেনি।

তিনি জানান, এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মাথায় রেখে মেলা সাজানো হয়েছে। মেলায় যেন অতিরিক্ত দাম না রাখা হয় সেই বিষয়টিও লক্ষ রাখা হবে বলে জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধু-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের মোট ফ্লোর স্পেস ৩৩ হাজার বর্গমিটার। এক্সিবিশন সেন্টারের ভেতরে ও সামনের ফাঁকা জায়গা মিলিয়ে স্টল থাকবে। এতে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

শেরে বাংলা নগরের মতো এখানেও প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন, জেনারেল স্টল, ফুডকোড, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টল ক্যাটাগরি রয়েছে। মিলনায়তনের ভেতরে নিজস্ব একটা ক্যাফেটরিয়া রয়েছে। সেখানে একসঙ্গে ৫০০ লোক বসে খাবার খেতে পারবেন।

ইফতেখার বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে মেলা বেশ ভালোই জমবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ এটা স্থায়ী ভবন, তার ওপর খোলামেলা পরিবেশ। পাশে নদীও আছে। অনেকে মেলায় এসে ঘুরতেও পারবেন আশেপাশে।

মেলা চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে ছুটির দিনে মেলা চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। এবার প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা।

‘মেলার মূল লক্ষ্য বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা। করোনার কারণে হয়তো কম আসবে তারা। তবে মেলা শুরুর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বিদেশি ক্রেতা আসতে থাকবে। উদ্যোক্তারা তাদের নতুন নতুন পণ্য নিয়ে মেলায় হাজির হবে,’ বলেন ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।

এবারই প্রথমবারের মতো মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য থাকছে ৩০টি বিআরটিসি বাস। কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মাসব্যাপী সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যাতায়াত করবে বাসগুলো। এসব বাসে ন্যূনতম ২৫ টাকা ভাড়ায় দর্শনার্থীরা যাতায়াত করতে পারবেন।

ইপিবি সচিব জানান, ৩০টি বাসের পাশাপাশি বিআরটিসির মতিঝিল থেকে যে বাস চলাচল করে সেগুলো কুড়িল হয়ে মেলা প্রাঙ্গণে যাবে।

বিআরটিসি জানিয়েছে, এখানে ৫০টি বাস প্রয়োজন হলেও দেবে তারা। রাস্তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। সেই শঙ্কা কেটে গেছে। পূর্বাচলের যাবার জন্য ১০ কিলোমিটার সড়ক ঠিক হয়ে গেছে।

বাণিজ্য মেলার গেটের প্রতি সবার নজর থাকে। এবার গেটের থিমে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে মেগাপ্রকল্পকে। মেলার প্রধান গেটে চারটি প্রবেশপথ রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলি টানেলের মতো গোল করা হয়েছে প্রবেশপথ। ওপরে সেতুবন্ধন হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে পদ্মা সেতুর প্রতীকী কাঠামো। রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মেট্রোরেলের প্রতীকী কাঠামোও থাকছে।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। তখন থেকেই দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্র্যান্ডকে পরিচিতি করার মাধ্যম হিসেবে নিচ্ছেন বাণিজ্য মেলাকে। ক্রেতাদের মধ্যেও মেলায় যাওয়ার জন্য ব্যাপক উৎসাহ থাকে। ১৯৯৫ সাল থেকে শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এই কারণে স্থানটি মেলা মাঠ নামেও পরিচিতি পেয়েছে।

সর্বশেষ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শেরে বাংলানগরে ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বসেছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে পূর্বাচলে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হলেও করোনার কারণে তা আর মাঠে গড়ায়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads