• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

পাঠ্যপুস্তক সংকটে রাজধানীর শিক্ষার্থীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ জানুয়ারি ২০২২

বছরের শুরুতে নতুন বই পাওয়ার আনন্দই আলাদা। নতুন বইয়ের গন্ধে খুশিতে পড়তে বসে শিক্ষার্থীরা। সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক নেওয়ার এই আনন্দ কয়েক বছর ধরে রূপ নিয়েছিল উৎসবে। কিন্তু করোনা মহামারির উপর্যুপরি আঘাতে এবারো বই উৎসব থেকে বঞ্চিত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। তবে উৎসব না থাকলেও বই পৌঁছে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছে। এদিকে, বই বিতরণ শুরুর ২০তম দিনেও নতুন বছরের সব বই পায়নি, এমন খারাপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এসব তথ্য পাওয়া গেছে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল ঘুরে ঘুরে।

মাধ্যমিকে এখনো বেশ কয়েকটি ক্লাসের বই পৌঁছায়নি স্কুলগুলোতে। ৩৫টি কোটি বইয়ের মধ্যে এখনো ৯৪ লাখ বই ছাপানো বাকি। ধাপে ধাপে কয়েকটি বই পেলেও বাকিগুলো এখনো পায়নি এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়।

জানা গেছে, প্রতিবছর ১ জানুয়ারি সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হতো। তবে করোনার সংক্রমণের কারণে গতবারের মতো এবারো উৎসব করে বই দেওয়া হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই দিচ্ছে। তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখনো সাধারণ বিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞান বই পাননি তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মশিউজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, এখনো কিছু বই বাকি রয়ে গেছে। বিশেষ করে নবম শ্রেণির বই নিয়ে আমরা সমস্যায় আছি।

তিনি বলেন, পিডিআইয়ের সবশেষ রিপোর্ট (বুধবার দুপুর পর্যন্ত) অনুযায়ী, ৩৫ কোটি বইয়ের মধ্যে ৯৪ লাখ বই এখনো পিডিআই করা বাকি আছে। এগুলোর মধ্যে কারিগরির ১৬ লাখ বই আছে। বইগুলো নতুন করে রচিত হয়েছে। সে কারণে দেরি হয়েছে। এছাড়া রি-টেন্ডারের কারণেও কিছুটা দেরি হয়েছে।

অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, আমরা আশা করেছিলাম এই মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সব বই পাঠিয়ে দিতে পারব। এক সপ্তাহ কাগজকল বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তবে আমাদের বই ছাপানোর কাজ শেষের দিকে। বাইন্ডিং, কাটিংয়ের কাজ চলছে। আশা করছি বইগুলো আগামী সপ্তাহের মধ্যে চলে যাবে।

তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহরীন খান রূপা বলেন, শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ধাপে ধাপে সব ক্লাসে বই বিতরণ করেছি। তবে নবম শ্রেণির সব বই আসেনি। সাধারণ বিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞান বই পাওয়া মাত্রই আমরা বিতরণ করে দেব।

একই সুর তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা নাহিদ সুলতানার। তিনি বলেন, আমাদের স্কুলের নবম শ্রেণির তিনটি বিষয়ের বই এখনো আসেনি।

শুধু তেজগাঁওয়ের এই দুটি প্রতিষ্ঠানই নয়, রাজধানীর অধিকাংশ স্কুল এখনো সব ছাত্রছাত্রীদের পুরো সেট বই দিতে পারেনি। সেখানে শিক্ষার্থীদের আংশিক বই দেওয়া হচ্ছে। এতে ঠিক মতো মনযোগ দিয়ে পড়া শুরু করতে পারছে না অনেক শিক্ষার্থী।

মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিকের দুয়েকটি শ্রেণির শিক্ষার্থী পুরো সেট বই পায়নি। তবে প্রাথমিকের বাংলা মাধ্যমের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই এখনো আসেনি।

বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ ‍বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ ভুঁইয়া আব্দুর রহমান বলেন, আমরা বইয়ের সংকটে আছি। বাচ্চাদের সব বই এখনো দিতে পারিনি। থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি।

সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাব উদ্দিন মোল্লা বলেন, অন্যান্য বছর সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শতভাগ বই চলে আসতো। এবার সেসব বই সেপ্টেম্বরে আসেনি। বই এসেছে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। তবে এরই মধ্যে আমার স্কুলে ৯৮ শতাংশ বই চলে এসেছে।

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আবু সাইদ ভুঁইয়া বলেন, ৬ষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে ১-২টি বই কম এসেছে। আমরা থানা শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি, তারা বলেছে বই পাওয়া মাত্রই পাঠিয়ে দেবে।

ব্রাইট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মাহাবুবুর রহমান রানা বলেন, আমাদের মোটামুটি সব বই চলে এসেছে। তবে অষ্টম শ্রেণির পাঁচটি বই এখনো বাকি আছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে বই চলে আসতে পারে। এলেই আমরা বই বিতরণ করব।

জানতে চাইলে ডেমরা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কাছে যে বইগুলো এসেছে, আমরা সেগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দিয়েছি। যে বইগুলো বাকি রয়েছে, সেগুলো আসা মাত্রই স্কুলগুলোতে চলে যাবে। বইগুলো দ্রুতই আসবে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রাজধানীর একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়েশা বলেন, অন্য বছরগুলোতে আগে আগে বই পেলেও এবার বেশ দেরি হচ্ছে। ১৪টি বইয়ের মধ্যে ১২টি বই হাতে পেয়েছি। বাকি বইগুলো কবে দেওয়া হবে তা এখনো জানানো হয়নি।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ইন্সপেকশন অ্যাজেন্ট প্রত্যেকটা প্রেস থেকে বই ছাড় দেয়। এটাকে পোস্ট ডেলিভারি ইন্সপেকশন (পিডিআই) বলে। পিডিআই করার পর বইগুলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে যায়। পিডিআই যখন করা হয়, তখন ধরে নেওয়া হয় বইগুলো ট্রাকে উঠে গেছে।

এবার বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৩৫ কোটি বই ছাপানো হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৪টি, আর মাধ্যমিকে ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৬টি বই আছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads