• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ওমিক্রন ‘সুনামি’র শঙ্কা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

ওমিক্রন ‘সুনামি’র শঙ্কা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩০ জানুয়ারি ২০২২

ভয়ংকর ডেল্টার রেকর্ডকে পেছনে ফেলে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কবলে পড়ে দেশে দৈনিক রোগী শনাক্তের হারের রেকর্ড হচ্ছে। ডেল্টার তুলনায় পাঁচ থেকে ছয়গুণ বেশি সংক্রমণক্ষমতা নিয়ে ওমিক্রন ছড়াচ্ছে ‘সুনামি’র গতিতে। তবে ওমিক্রন নিয়ে শঙ্কার পাশাপাশি স্বস্তির কথাও শুনিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ওমিক্রনের প্রভাবে দেশের আগের সব রেকর্ড ভেঙে যাবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের সে কথাকেই সত্যি করে ডেল্টার সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের রেকর্ড ভেঙেছে ওমিক্রন।

ওমিক্রন মৃদু, এতে জটিলতা তেমন হয় না এবং মৃত্যুও ডেল্টার মতো হবে না বলা হলেও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, যখন অনেক বেশি রোগী শনাক্ত হতে শুরু করবে তখন আনুপাতিকহারে মৃত্যুও বাড়বে। পাশাপাশি তারা বলছেন, বিশ্বজুড়ে দেখা যাচ্ছে, ওমিক্রন যে হারে ঊর্ধ্বগতি পেয়েছে, সেভাবে দ্রুত নেমেও গেছে। সেই হিসাবে আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে শনাক্তের হার কমতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে এখনো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাধান্য বেশি। তবে জায়গাটা ওমিক্রন দখল করে নিচ্ছে। দেশে ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন তথা সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, একে অনেকেই তৃতীয় ঢেউ বলছে। তবে ওমিক্রনের যে ভয়াবহতা দেখা যাচ্ছে তাকে আমি ‘সুনামি’ বলতে চাই। এ সুনামি কতটা বিধ্বংসী হতে পারে, সেটা দেখতে আরো দুই থেকে তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। তবে এই সময়ের মধ্যে মানুষকে মাস্ক পরাতে বাধ্য করাতে হবে বলে মনে করেন তিনি। সেইসঙ্গে টিকা কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে। নয়তো কোথায় গিয়ে ঠেকে বলা যাচ্ছে না।

ওমিক্রন সুনামি কতদিন চলতে পারে জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের বর্তমান উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যে সংক্রমণ দ্রুত ওঠে, সেটা দ্রুত নেমেও যায়। ফেব্রুয়ারির প্রথম ধাপ পর্যন্ত বাড়বে। শেষ সপ্তাহ নাগাদ কমে যেতে পারে। তবে সংক্রমণের এ পর্যায়ে নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি। ডা. মুশতাক বলেন, সরকারি ১১ দফা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পাশাপাশি মানুষকে সম্পৃক্ত করার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

এদিকে গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৩২৯ জনে। একই সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৮ জনের। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ১৪৯ জনে। শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ।

শুক্রবার জানানো হয়, আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ২০ জনের মৃত্যু হয়; শনাক্ত হন ১৫ হাজার ৪৪০ জন; শনাক্তের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

২৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গত বছর ডেল্টার সময় ২৪ জুলাই শনাক্তের সর্বোচ্চ হার ছিল ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত ১৫ হাজার ৪৪০ জন। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিনের মতো নতুন শনাক্ত ১৫ হাজারের বেশি। তার আগে ২৭ জানুয়ারি ১৫ হাজার ৮০৭ জন, ২৬ জানুয়ারি ১৫ হাজার ৫২৭ জন আর গত ২৫ জানুয়ারি ১৬ হাজার ৩৩ জন রোগী শনাক্তের কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

শনিবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ১০৯ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৩৩ হাজার ২৩০টি। পরীক্ষা করা হয় ৩৩ হাজার ৩৭৩টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। গেল বছরের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads