• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
সমস্যার আবর্তে রাজধানীবাসী

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

সমস্যার আবর্তে রাজধানীবাসী

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২

রাজধানীবাসীর ভাগ্যে একদিনও জোটেনি নির্মল বায়ু। এর মধ্যে গণপরিবহন সংকট ও নৈরাজ্য, ফুটপাত অবৈধ দখল, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে খোঁড়াখুঁড়ি, বেশিরভাগ এলাকার সড়ক ভাঙাচোরা, গ্যাস-সুপেয় পানি ও খেলার মাঠ সংকট এবং সর্বোপরি নিয়ন্ত্রণহীন বাড়ি ভাড়াসহ নানা সংকট ও সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে রাজধানীবাসী। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনের আইনে ২৮ ধরনের সেবার উল্লেখ থাকলেও কোনোটি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী কোনো সরকারই ঢাকাকে পরিকল্পিত নগরী তৈরি করতে কাজ করেনি। নাগরিক সেবাকে পুঁজি করে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীন ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ দিনে দিনে বাড়ছে। তাই রাজধানীতে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা ও জনদুর্ভোগ দূর করতে প্রয়োজন কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ। নইলে এ মহানগরীকে আগামীতে নতুন নতুন সমস্যা ও সংকটের মুখোমুখি হতে বলে মনে করছেন তারা।  

ঢাকাকে একটি আধুনিক রূপ দিতে ২০১১ সালে সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করে শহর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপরও দুই সিটি করপোরেশন তাদের আওতাধীন এলাকাগুলোয় এমন সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি।

এখনো রাজধানীর বেশির ভাগ রাস্তায় পর্যাপ্ত সড়ক বাতি নেই। এমনকি কয়েকটি ফ্লাইওভারও রাতে থাকে অন্ধকারে। সড়কে ও ফ্লাইওভারে আলোর অভাবে ঘটছে দুর্ঘটনা। তৎপর ছিনতাইকারী গ্যাং। নিরাপত্তাহীন উড়াল সড়কে আছে খুন-জখমের ঘটনাও।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার প্রধান সড়ক ও অলিগলি মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান সড়কগুলো বেশিভাগ ভালো থাকলেও অলিগলি ও পাড়া মহল্লার বেশিভাগ সড়কের অবস্থাই বেহাল। অলিগলির এসব সড়ক নির্ভর আবাসিক এলাকাগুলোতে নেই পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা। কয়েক বছরজুড়ে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রধান সড়ক এলাকার বেহাল দশা।

স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের মোট ১৮টি খাতে নাগরিক সেবা দিয়ে থাকে। তবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশেনের ওয়েব সাইটে গিয়ে তাদের সেবা দেওয়ার তালিকা থেকে আলাদা তথ্য জানা যায়। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ১৪টি খাতে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১৮টি খাতে সেবা দেওয়ার তথ্য উল্লেখ করেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যেসব সেবার কথা জানানো হয়েছে তা হলো- রাস্তার বৈদ্যুতিক লাইট, হাসপাতাল, ডিএসসিসি হাসপাতাল, রাস্তা/নর্দমা/ফুটপাত, বাজার, জন্ম নিবন্ধন, ভস্মীকরণ সমাধির স্থান, ব্যায়ামাগার, কমিউনিটি সেন্টার, মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র, রাস্তার গাড়ি পার্কিং, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা, গ্রন্থাগার, সংগীত এবং স্কুল, বাস টার্মিনাল, পাবলিক টয়লেট, পার্ক এবং খেলার মাঠ বিষয়ক সেবা দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটে যেসব সেবার উল্লেখ আছে তা হল-রাস্তা খননের অনুমতি, নতুন হোল্ডিং নম্বর, হোল্ডিং ট্যাক্স সার্ভিস কার্যপ্রণালী, হোল্ডিংয়ের নামজারী, ডিএএমএফএ, ট্রেড লাইসেন্স ও নবায়ন পদ্ধতি, জন্ম সনদ, কবরস্থান ব্যবস্থাপনা, ধূমপান মুক্ত-করন নির্দেশিকা, যান-যন্ত্রপাতি ভাড়ার হার ও নিয়মাবলী, কমিউনিটি সেন্টার বুকিং, বহুতল ভবনের জন্য অনাপত্তিপত্র, জিআইএস ম্যাপ ক্রয়, উদ্যোক্তাদের সেবা কেন্দ্র।

এদিকে সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের কাজের পরিধির মধ্যে যেসব কাজের উল্লেখ রয়েছে সেগুলোর বিভিন্ন ভাগ ও উপ-ভাগ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

১. জনস্বাস্থ্য : করপোরেশন নগরীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য দায়ী থাকবে এ সম্পর্কিত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করার থাকলে সেটিও গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে আরো যেসব বিষয় রয়েছে তা হলো, অস্বাস্থ্যকর ইমারতের ব্যবস্থাপনায় পদক্ষেপ গ্রহণ, আবর্জনা অপসারণ, সংগ্রহ এবং ব্যবস্থাপনা, পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা ও পর্যাপ্ত পায়খানা স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা করবে করপোরেশন।

২. জন্ম, মৃত্যু এবং বিয়ে রেজিস্ট্রি : করপোরেশনের সীমানার মধ্যে যে সব জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ে হয় সেগুলো বিধান অনুসরণ করে রেজিস্ট্রি এবং এর পরিসংখ্যান ও উপাত্ত সংগ্রহ করা।

৩. সংক্রামক ব্যাধি : নগরীতে সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, এর জন্য প্রয়োজনে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা।

৪. স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মাতৃসদন ইত্যাদি : স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মাতৃসদন প্রতিষ্ঠা, নারী-শিশু-কিশোরদের জন্য কল্যাণকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা, ধাত্রী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

৫. জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন : করপোরেশন স্বাস্থ্যমূলক শিক্ষাসহ জনস্বাস্থ্যের উন্নতির বিধান কল্পে প্রয়োজনীয় যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

৬. হাসপাতাল ও ডিসপেনসারি : করপোরেশন নগরবাসীর চিকিৎসার সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাসপাতাল ও ডিসপেনসারি প্রতিষ্ঠা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে।

৭. চিকিৎসা, সাহায্য ও স্বাস্থ্যশিক্ষা : প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা, ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সাহায্য ইউনিট স্থাপন ও পরিচালনা, চিকিৎসা বিদ্যার উন্নয়ন, স্কুল ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাও সিটি করপোরেশনের কাজের আওতাধীন।

৮. পানি সরবরাহ ও পানি নিষ্কাশন প্রণালী : এর আওতায় পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছাড়াও স্নান ও ধৌত করার স্থান, ধোপী ঘাট এবং ধোপা, সরকারি জলাধার ইত্যাদি করপোরেশনের আওতাধীন থাকবে।

৯. রাস্তা : করপোরেশন নগরের অধিবাসী এবং নগরীতে আগন্তুকদের আরাম ও সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তা এবং অন্যান্য যোগাযোগরে ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। এগুলো ছাড়াও সিটি করপোরেশনে আইনে সব মিলিয়ে এই করপোরেশনের মোট ২৮ ধরনের কাজের উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো নাগরিকরা তাদের সুবিধার জন্য পেতে পারেন। বাস্তবে এর কোনো সেবাই পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত করেতে পারেনি সংস্থা দুটি।

এদিকে রাজধানীর নাগরিক সেবা দিতে সিটি করপোরেশনের যেখানে ব্যর্থ, সেখানে অনেকটা সফল হয়েছে আবাসিক এলাকার সোসাইটিগুলো। বিশেষ করে গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরার মতো কয়েকটি সোসাইটিতে গেলে দেখা যায়- ফুটপাত ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে, ড্রেনেজ সিস্টেম এমনকি যান চলাচল সব কিছুতেই রয়েছে একটি আধুনিক নগরের শৃঙ্খলার ছাপ। কারণ সেখানকার সার্বিক ব্যবস্থাপনা দেখভাল করছে স্থানীয় কমিউনিটির লোকজন।

গুলশান, নিকেতন, বনানী, বারিধারা ও বসুন্ধরার মতো এই জনবহুল এলাকার রাস্তাঘাটে কোনো আবর্জনা নেই। ফুটপাতগুলো হাটার জন্য অনেকটা নিরাপদ। রয়েছে নির্মল বায়ুর অনেকটা ব্যবস্তা। বলতে গেলে সবখানেই ছিমছাম পরিবেশ। এর প্রতিটি এলাকা তাদের নিজস্ব কমিউনিটির উদ্যোগে এই কাজগুলো করিয়ে থাকেন। এজন্য তারা স্থানীয়দের থেকে চাঁদা ও দানের মাধ্যমে বাড়তি জনবল নিয়োগ দিয়ে থাকেন যেমন কমিউনিটি নিজস্ব পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ট্রাফিক পুলিশ, পাহারাদার ইত্যাদি। যেসব ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের সহায়তার প্রয়োজন হয় সেখানে এই সোসাইটি তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে কাজ আদায় করে থাকে বলে জানান গুলশান ও বারিধারা সোসাইটি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে এই নগরীতে ঢাকা ওয়াসা, তিতাস, ডেসকো, ডিপিডিসি, বিটিআরসি ও সিটি করপোরেশনের খোঁড়াখুঁড়ি তো লেগেই আছে। সংস্থাগুলোর ইউটিলিটির সংস্কার মানেই আগে রাস্তা কাটো। এজন্য আগে সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনের পর সংশ্লিষ্ট বিভাগ মিটিং করে অনুমোদন দেয়। অনেক ক্ষেত্রে অনুমতি পাওয়ার আগেই সংস্থাগুলো সড়ক কেটে তাদের লাইন সংস্কার করে ফেলে।

ফুটপাত ধরে মানুষ হাঁটার কথা থাকলেও সেখানে মানুষকে হাটতে হয় রাস্তা দিয়ে। আবার রাস্তায় পার্ক করা গাড়ির কারণে তিন ভাগের দুই ভাগ রাস্তাতে গাড়ি চলাচল করতে পারেনা। ফলে সৃষ্টি হয় জ্যাম। রাজধানীর খিলগাঁও, কুড়িল ও মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারে নেই রাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। তাই অন্ধকারে প্রায়ই ঘঠছে ছিনতাইয়ের ঘটনা।

পথচারীদের চলাচলে নিরাপত্তার জন্য বানানো হয়েছে ফুটওভার ব্রিজ। অন্ধকার ও ছিনতাইয়ের ঘটনাসহ অনিরাপত্তার কারণে সন্ধ্যার পরে পথচারীদের পা-ই পড়ে না অধিকাংশটায়। তাই ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পারাপার হচ্ছেন হাজারো মানুষ।

শুষ্ক মৌসুমে একদিনও রাজধানীবাসীর ভাগ্যে জোটে না নির্মল বায়ু। বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য খুঁড়ে রাখা সড়ক থেকে সৃষ্ট ধুলাবালিতে শুষ্ক মৌসুম বিপর্যস্ত রাজধানীবাসী। ঠান্ডা, কাশি, চোখের বিভিন্ন সমস্যা ও ফুসফুসের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন পথচারীরা। এমনকি ২৩ জানুয়ারি থেকে টানা তিনদিন বায়ুদূষণে শীর্ষে ছিল ঢাকা। যদিও সরকারের একাধিক সংস্থা বায়ুদূষণে ভূমিকা রাখলেও দূষণ রোধে সমন্বিত কার্যক্রম নেয়া হচ্ছে না। তবে বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের বায়ুদূষণ প্রতিরোধ কমিটির মাধ্যমে সিটি করপোরেশন, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তরকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে নিয়মিত চিঠি দেয়া হচ্ছে। সে চিঠিতে বায়ুদূষণ রোধে খোলা ট্রাকে বালি পরিবহন না করা, নির্মাণাধীন ভবন ঢেকে রাখা, নিয়মিত পানি ছিটানোর কথা বলা হলেও যথাযথভাবে নির্দেশনা মানছে না সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দিয়ে বায়ুদূষণ রোধে ব্যবস্থা নিতে বলতাম। আমাদের কথা না শোনার ফলে এখন সে নির্দেশনা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সে নির্দেশনাও যথাযথ মানা হচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করছেন পরিবেশবিদরা।

একদিকে গণপরিবহন সংকট অন্যদিকে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য রাজধানীবাসীর দীর্ঘদিনের। এর মধ্যে রাজপথে লক্কড়ঝক্কড় বাসের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রতিদিন রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে হাজার হাজার মানুষ নির্ভর করেন বাসের ওপর। রাজধানীর ১৯৩টি রুটে যাত্রী নিয়ে প্রতিদিন চলে ৫ হাজারের বেশি বাস। চলার যোগ্য নয় তারপরেও চলছে শত শত গণপরিবহন। কোনো বাসের জানালার কাচ ভাঙা, কোনোটির হেডলাইট, সিগন্যাল লাইট নেই। আবার কোনো বাসের সিট নড়বড়ে, খুলে পড়ছে গাড়ির বডির বিভিন্ন অংশ। কোনোটির রং চটেছে বহু আগেই। গাড়ির বেহাল দশা হলেও, ফিটনেস সনদ থাকায় এসবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না বলে জানান কর্মরত পুলিশ সদস্যরা। তবে বিআরটিএ বলছে, এমন বাস যাতে রাজপথে চলতে না পারে সেজন্য চলছে তাদের নিয়মিত অভিযান।

গ্যাসের তীব্র সংকটে রয়েছে রাজধানীর অনেক এলাকায়। দিনের শুরুতেই গ্যাস না পেয়ে রান্নাঘরে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে সেসব এলাকার গৃহিণীদের। আর সারা বছরই সুপেয় পানি সংকট থাকে নগরীর অনেক এলাকায়। সেসব যেটুকু মেলে তাও পান করার যোগ্য নয়। ময়লা আর দুর্গন্ধ পানি ফুটিয়ে পান করলেও মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়ায়।

রাজধানীতে একসময় প্রায় প্রতি ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি কলোনিতে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ছিল। সেখানে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণরা খেলাধুলা করত। ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতাসহ নানা ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। খেলার মাঠকে ঘিরে তরুণ প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটত। এখন সেই সব খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। একে একে খেলার মাঠ দখল কিংবা সরকার অধিগ্রহণ করে সরকারি ভবন বা স্থাপনা গড়ে তুলেছে। ফলে নগরীতে খোলা জায়গা ও খেলার মাঠের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রত্যেক মানুষের জন্য ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গা তথা খেলার মাঠ, পার্ক, শিশুপার্ক, ঈদগাহ ইত্যাদি প্রয়োজন। বাস্তবতা হচ্ছে, রাজধানীতে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় জনপ্রতি খোলা জায়গার পরিমাণ এক বর্গমিটারেরও কম। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ এবং সুস্থ বিনোদনের জন্য খেলার মাঠ অত্যন্ত জরুরি। শুধু শিশু-কিশোরই নয়, বয়োবৃদ্ধদের হাঁটাচলার জন্যও মাঠ প্রয়োজন।

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. সারওয়ার জাহান বলেন, রাজাধানীতে নাগরিক সুবিধার অনেক কিছুই পূরণ হচ্ছে না। যেমন বাসাবাড়ি থেকে ময়লা আবর্জনাটাই সংগ্রহ করতে পারছে না সিটি করপোরেশন। কমিউনিটি পর্যায়ে বেসরকারি উদ্যোগে আবর্জনা সংগ্রহের কাজটি চলছে। এতে বাড়ি মালিক ও ভাড়াটিয়ার তাদের কাছে জিম্মি হয়ে বর্জ্যসংগ্রহের জন্য অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার কাজ করছে সিটি করপোরেশন।

তিনি বলেন, নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, খেলার মাঠ ও পার্ক ব্যবস্থাপনাও সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে থাকলেও সেগুলোও ঠিকমত পালিত হচ্ছে না। তবে এর পেছনে কারণ হিসেবে তিনি শুধু সিটি করপোরেশনকে এক তরফা ভাবে দায়ী নয়। এখানে আরো অনেক বিষয় রয়েছে যা সিটি করপোরেশনকে তার কাজ করতে অনেক ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুযোগ দেয় না। 

এক্ষেত্রে তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে নগর পরিচালনার সাথে জড়িত নানা বিভাগ এবং মন্ত্রণালয়ের সাথে সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ের অভাব একটি বড় কারণ। এছাড়া সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকারের আওতায় হওয়ার কারণে কিছুটা সীমাবদ্ধতার মুখে পড়তে হয়। কারণ আমাদের দেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে ক্ষমতায়ন করা হয়নি। তাই স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি এর জবাবদিহিতারও ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে নাগরিক সেবা সুনিশ্চিত করা যাবে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, নাগরিক সুবিধা পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। তবে বিভিন্ন সংস্থা ঢাকাকে পুঁজি করে অপরিকল্পিতভাবে আমাদের সাথে কোনো সমন্বয় ছাড়া কাজ করছে। এতে ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ দিনে দিনে শুধু বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটিকে সমন্বয় করতে চেষ্টা চলছে। আমাদের মহাপরিকল্পনায় নগরীতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, উন্নত দেশগুলোর মতো যদি সব সেবা সংস্থার ইউটিলিটি সার্ভিস একসঙ্গে থাকতো তবে এমন সমস্যায় পড়তে হতো না। প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদনের কারণে নতুন রাস্তাও কেটে ফেলতে হয়। তবে আমরা অতি জরুরি ছাড়া কোনও রাস্তা খুঁড়তে দিচ্ছি না। তবে দ্রুতই নাগরিকদের সকল সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads