• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

দেশে এইডসের ঝুঁকি বাড়ছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

আক্রান্ত কম হলেও হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস-এইচআইভি সংক্রমণ থেকে সৃষ্ট প্রাণঘাতী রোগ এইডসের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। বর্তমানে  দেশে মরণব্যাধি এই রোগে সংক্রমিত ১৪ হাজার। যেখানে গত এক বছরেই এইডসে আক্রান্ত ৭২৯ জন।

পার্শ্ববর্তী দেশে ভারত ও মিয়ানমার এ রোগের উচ্চঝুঁকিতে। সীমান্তগুলোর বিবেচনায় বর্তমানে ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশও। সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে মোট শনাক্ত রোগীর বড় একটি অংশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। তাই সবকিছু বিবেচনায় এইচআইভির সংক্রমণ রুখতে দেশের বিমানবন্দর, নৌবন্দর ও স্থলবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ভাইরোলজিস্ট ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, এইচআইভি সংক্রমণের দিক থেকে বাংলাদেশ লো প্রিভিলেন্স (স্বল্প ব্যাপকতা) ও উচ্চঝুঁকির দেশ। দেশে মোট ১৪ হাজার এইচআইভি সংক্রমিত (এইডস) রোগী আছে। তবে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে রয়েছে বিভিন্ন কারণে। দুটি দেশের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত। দুটি দেশই উচ্চঝুঁকিতে। এদেশে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে।

ভারত ও মিয়ানমার থেকে লোকজন বাংলাদেশে আসে। এজন্য বিমানবন্দর, নৌবন্দর ও স্থলবন্দরে এইচআইভি স্ক্রিনিং টেস্ট চালু করা জরুরি। এই টেস্টে খুব বেশি খরচ হবে না, কিছু কিট দিলে ১০ মিনিটেই পরীক্ষা করা সম্ভব। জাতিসংঘের অনেক অলস টাকা পড়ে আছে। আমরা এইচআইভি স্ক্রিনিং টেস্ট করানোর জন্য এই অর্থ ব্যবহার করতে পারি।

তিনি আরো বলেন, সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত থেকে, আক্রান্ত মা থেকে শিশুর এবং অনিরাপদ যৌন মিলনের ফলে এই রোগ ছড়ায়। এখন সমাজের পরিবর্তন হয়েছে। এইচআইভি সংক্রমণরোধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাণঘাতী এই রোগ প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারিভাবে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে তেমনি নাগরিকদের মধ্যেই বাড়াতে হবে সচেতনতা। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার উচ্চঝুঁকির দেশ। তাদের সঙ্গে এদেশের ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের নানারকম যোগাযোগ আছে। তাই জনগোষ্ঠী সচেতন না হলে এই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসর তথ্যমতে, দেশের ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ নারীই এইডস বিষয়ে পর্যাপ্ত জানে না। অবশ্য এইডসের অন্তত একটি বাহক সম্পর্কে অবগত ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ নারী। ৩৬ শতাংশ নারী সবগুলো বাহক সম্পর্কে অবগত। পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে এ হার ছিল ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ বাহক সম্পর্কে নারীদের মধ্যে সচেতনতার হার বেড়েছে ৭ শতাংশ। যদিও ৮-১০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল সরকারের।

সচেতনতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত হারে প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় নারীদের মধ্যে এইডস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করে সরকারি সংস্থা বিবিএস।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল (এনএএসসি) প্রোগ্রামের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ১২ লাখ ৯১ হাজার ৬৯ জনের এইচআইভি/এইডস শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়েছে।  যেখান থেকে ৭২৯ জনের দেহে এই রোগ ধরা পরে। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৫৮৯।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে গত বছর নতুনভাবে এইচআইভি সংক্রমিত ৭২৯ জনের মধ্যে পুরুষ ৪২০ জন, নারী ২১০ ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ১২ জন। গত এক বছরে নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ জনগোষ্ঠীর ১৮৬ জন (২৬%), রোহিঙ্গা ১৮৮ জন (২৬%), বিদেশফেরত প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্য ১৪৪ জন (২০%), ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারী ৬১ জন (৮%), নারী যৌনকর্মী ১৭ জন (২%), সমকামী ৬৭ জন (৯%), পুরুষ যৌনকর্মী ৫৩ জন (৭%) ও ট্রান্সজেন্ডার ১৩ জন (২%) রয়েছেন।

বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। বাংলাদেশে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার ০.০১ শতাংশের নিচে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই সংক্রমণ কিছুটা বেশি।

তবে ১৯৮৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত  মোট এইচআইভি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৭৬১ জন এবং মোট মারা গেছেন ১ হাজার ৫৮৮ জন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads