• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

পড়তে হবে মূলধারার গণমাধ্যম

  • শতাব্দী জুবায়ের
  • প্রকাশিত ২৪ নভেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশে অনলাইন নিউজ পোর্টালের কোনো নির্দিষ্ট হিসাব নেই। যে কেউ ডোমেইন হোস্টিং কিনে পোর্টাল চালু করতে পারে বা চালাতে পারে। শুধু কম্পিউটার থেকে নয়, মোবাইল ফোন থেকেও এসব পোর্টালে নিউজ আপলোড করা যায়। ফলে পোর্টালগুলো অনেকটা সহজলভ্য হয়ে গেছে। আর সহজলভ্য হওয়ায় যে কেউ পোর্টাল চালাতে পারছে। পাঠককে আকর্ষণ করে এমন শিরোনাম দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে অসচেতন পাঠক এখন ইন্টারনেটভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংবাদের দিকে ঝুঁকছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমেই বেশিরভাগ মানুষ দিনের আলোচিত ঘটনা জানতে পারে।

এর সুযোগ নিয়ে কিছু অপেশাদার ব্যক্তি ডোমেইন ও হোস্টিং কিনে অনলাইন পোর্টাল তৈরি করছেন। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এসব অনলাইন একদিকে যেমন পাঠকের কাছে কোনো দায়বদ্ধতার তোয়াক্কা করছে না, তেমনি নামসর্বস্ব অনলাইনের নাম ব্যবহার করে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে কলুষিত করছে। এজন্য প্রতিটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিচে নিজেদের বিস্তারিত পরিচয় দেওয়া বাধ্যতামূলক করা দরকার।

অনেক পোর্টালে দেখা যায় নাম, ঠিকানা কোনো কিছু নেই। এই নাম-ঠিকানাহীন পোর্টালগুলো নানা বিষয়ে গুজব ছড়ায়। মানুষকে করে বিভ্রান্ত। আজকাল অনলাইন পত্রিকার নাম দিয়ে বহু নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠেছে, যেগুলো সাংবাদিকতার নামে ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান। এগুলো সাংবাদিক সমাজকে বিতর্কিত করছে। এসব কারণে অনেক ক্ষেত্রে পেশাদার সাংবাদিকদের প্রশ্নবিদ্ধ হতে হচ্ছে। কলঙ্কিত হচ্ছে সাংবাদিকতার মতো মহান পেশা। এখনই এই পোর্টালগুলোর লাগাম টেনে ধরা দরকার। দেশে ‘নামসর্বস্ব’ শত শত অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে। এগুলোর কাজই হলো প্রোপাগান্ডা ছড়ানো। তারা অ্যান্টিএস্টেট প্রোপাগান্ডা ও ফেক নিউজ ছড়িয়ে বেড়ায়। এক-দুটো কম্পিউটার বসিয়ে পেশাদার অনলাইন

পত্রিকাগুলোর নিউজ নকল করে চটকদার আকর্ষণীয় হেডিং দিয়ে প্রকাশ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেসব শেয়ার করে। ফলে অনেক সময় সাধারণ মানুষ না বুঝেই সেসব খবর বিশ্বাস করে বিভ্রান্ত হয়।

যেসব প্রতিষ্ঠান বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ভাষ্য নেই। কিন্তু যারা প্রোপাগান্ডা ছড়ায় এবং ফেক নিউজ প্রকাশ করে তাদের শনাক্ত করতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। নিউজ পড়ার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের আরো সতর্ক হওয়া দরকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোর্টালের লিঙ্ক দেখলেই প্রবেশ করা যাবে না। কোন পোর্টালে প্রবেশ করছি, কোন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পড়ছি সেটাও দেখা দরকার। দেখে-শুনে মূলধারার বা পোশাদারি ও প্রতিষ্ঠিত অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর খবর বিশ্বাস করা প্রয়োজন। এদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেক নিউজের (ভুয়া খবর) ব্যবহার একটি নতুন সংযোজন।

আশঙ্কা করা যায়, এসব ভুয়া খবর সবাইকে প্রভাবিত না করতে পারলেও জনগণের বড় একটি অংশকে সন্দিহান করে তুলতে পারে। খবরের মাধ্যমে শুধু নির্বাচনেই নয়, অন্য সময়ও জনমত পরিবর্তন করা সম্ভব। এমন মনোভাব থেকে অনেক দেশেই কোনো কোনো মহলের অপতৎপরতা লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জনগণকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা হয়েছে।

গত আগস্টে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ছাত্র মারা গেছে বা পুলিশের হাতে শিক্ষার্থীরা নিগৃহীত হয়েছে, ফেসবুকের মাধ্যমে এমন মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়। এসব ঘটনা দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে। তাই ফেক নিউজ পড়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পড়তে হবে মূলধারার গণমাধ্যম। তা না হলে বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads