• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

মতামত

স্বাগত ২০২১ খ্রিস্টাব্দ

এগিয়ে যাবে দেশ

  • বাংলাদেশের খবর
  • প্রকাশিত ০১ জানুয়ারি ২০২১

মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেল ২০২০। চাওয়া-পাওয়ার হিসাবে বছরটি ছিল বিশ্বব্যাপী অশনিমঙ্গলের ছায়া। ২০১৯-এর ডিসেম্বরে চীনের উহানে উদ্ভূত কোভিড-১৯ তথা করোনা মহামারী গেল বছরজুড়ে পৃথিবীর মানুষকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। শতকোটি মানুষের প্রাণহানি পৃথিবীবাসীকে করেছে শোকস্তব্ধ। ওই দুরারোগ্য ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাই দেশে দেশে প্রতিটি মানুষকে করতে হয়েছে সংগ্রাম। ভেঙে পড়েছে অর্থনীতির মেরুদণ্ড— পরিবার থেকে রাষ্ট্র প্রতিটি পর্যায়ে। কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে দেশে। বন্ধ হয়েছে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে শহর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে মানুষ। তবু ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারের প্রণোদনা আশার স্বপ্ন দেখিয়েছে সাধারণ জনগণকে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণে তৈরি পোশাক খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকাসহ ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে মোট পাঁচটি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। পরে সরকার দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এ ধরনের প্রণোদনা বাড়িয়ে প্রায় এক দশমিক ২২ লাখ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে কোভিড-১৯ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। তবে করোনাকালীন অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে নতুন বছরেও আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। দেখা গেছে, গত বছর সরকার প্রদত্ত ত্রাণসামগ্রী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কোনো কোনো সরকারি কর্মকর্তাও নয়ছয় করতে দ্বিধান্বিত হননি। এ অবস্থা চলতে থাকলে করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি সচল করতে আমাদেরকে বেগ পেতে হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে আরো সজাগ থাকা জরুরি।

করোনা মহামারীর এই বিরূপ প্রতিবেশ সহসা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। তাই বলে আমাদেরকে ভীতসন্ত্রস্ত হলে চলবে না। বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বছর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) নতুন উচ্চতা ছুঁয়েছিল, যা ৪০ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার কোটি ডলার। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ বেড়ে হয়েছিল ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত অর্থনীতির একধরনের শক্তি। সাধারণত তিন মাসের সমান রিজার্ভ বা মজুত রাখতে হয়। কিন্তু এখন বাংলাদেশে প্রায় দশ মাসের আমদানির সমান রিজার্ভ আছে। সুতরাং করোনাকালীন সংকট উত্তরণে হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করা যায়। উপরন্তু বছরের শেষে পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানোর মাধ্যমে যোগাযোগ ক্ষেত্রেও দেশ এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ শেষ হওয়ার পথে, যা বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মানকে গৌরবান্বিত করেছে। পাশাপাশি আমরা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্বতন্ত্র আবাসস্থল তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়েছি, যেখানে তাদের সামাজিক ও মানবিক মৌলিক অধিকারগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।

কিন্তু অন্যদিকে নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে বছরের প্রায় পুরোটা সময়জুড়ে। কাঁচাবাজারের অবস্থা ছিল হিসাবের বাইরে, রীতিমতো আতংকের। তার সঙ্গে যোগ হয় খুন, গুম এবং ধর্ষণের মতো বীভৎস সব ঘটনা। ফলে করোনার দুঃসময়ে আমাদের অর্থনীতি সেভাবে বিপর্যস্ত না হলেও সামাজিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা জনজীবনকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। এসব নিয়েই সমাজজীবন এগিয়ে গেছে সামনের দিকে। এখনো সাধারণ মানুষ আশায় স্বপ্ন বুনে চলেছে। নতুন বছরের সূচনালগ্নে সাধারণ মানুষ তাই আস্থা রাখে বর্তমান সরকারের ওপর।

সাফল্য আর ব্যর্থতার চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়তো চলতেই থাকবে। তবে আমরা বসে নেই, করোনা প্রতিরোধে অচিরেই পেয়ে যাব প্রতিষেধক। সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ চলছে দেশে দেশে। উন্নয়নের জাতি হিসেবে দারিদ্র্য দূর করার মহান তত্ত্ব সামনে রেখে করোনাকে জয় আমরাও করব। আরো অগ্রগতি, আরো উন্নতির লক্ষ্যে লড়বে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads