• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
এবারো হজযাত্রীদের জিম্মাদার ‘বিত্তশালীরা’

যারা হজগাইড হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

এবারো হজযাত্রীদের জিম্মাদার ‘বিত্তশালীরা’

  • কামাল মোশারেফ
  • প্রকাশিত ২৬ জুন ২০১৮

প্রতিবছরই সরকারি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সেবা এবং সুষ্ঠুভাবে হজ পালনের সুবিধার্থে গাইড নিয়োগ করা হয়। প্রতি ৪৫ জনের সেবায় একজন করে হজগাইড (হজকর্মী) থাকেন; যাদের যাবতীয় খরচ বহন করে সরকার। অভিযোগ আছে, হজগাইড হিসেবে পাঠানো হলেও অনেককে সৌদি আরবে খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেকেই অর্থের বিনিময়ে বিদেশি হজযাত্রীদের সেবা দেন। তাদের অধিকাংশই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজিরও নেই। আর এবারো যারা হজগাইড হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। অবশ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জানিয়েছেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে ছাড় দেওয়া হবে না; ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ বছর (২০১৮ সালে) বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার। সরকারি ব্যবস্থাপনার ৭ হাজার ১৯৮ জনকে সেবা দিতে সম্প্রতি ১৪৯ জনকে হজগাইড হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের গাইড করা এবং মিনা, আরাফা, মুজদালিফা ও অন্যান্য স্থানে সেবা প্রদানের জন্য এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

অভিযোগ উঠছে, ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগকৃত হজগাইডের অনেকেই বাংলাদেশিদের সেবা না করে বিদেশিদের সেবা করে। অনেকে যাত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে না; অনেককে খুঁজেও পাওয়া পায় না। ‘লাভজনক হওয়ায়’ হজগাইড হতে অর্থের লেনদেনও হয়। কারণ সৌদিতে এক-দেড় মাস কাজ করতে পারলে ৭-৮ লাখ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। এই লোভে অনেকে ৩-৪ লাখ টাকা খরচ করে হজকারী হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন। এ কারণে তাদের সার্বক্ষণিক চিন্তা থাকে কীভাবে টাকা কামানো যায়। কেউ কেউ এই সুযোগে বিনা খরচে হজও করে আসে। যদিও তাদের কারোরই হজ পালন বৈধ নয়।

এদিকে, এবার যে ১৪৯ জন হজগাইড নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে ময়মনসিংহেরই রয়েছেন ২৪ জন, রংপুরের ২০ জন ও গাইবান্ধার ১০ জন। অন্যান্য জেলায় ১ জন থেকে ৫ জন করে রয়েছেন। সিলেট ও চট্টগ্রামের কেউ তালিকায় নেই। তালিকায় রয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক একেএম আজাদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক (বরিশাল) আবুল বশার মো. ইউসুফ, পরিচালক (ল’ এস্টের বিভাগ) মো. আনছুর রহমান, ফিল্ড সুপারভাইজর জাহাঙ্গীর আলম ও খোরশেদুল আলম, বায়তুল মোকাররমের দ্বীনি দাওয়াতের জুবায়ের আলম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (রাজশাহী) গোলাম আযম, ড. একেএম মুস্তাফিজুর রহমান, উপপরিচালক হাফেজ আহমেদ, হিসাবরক্ষক সাজেদুল রহমান, মাস্টার ট্রেইনার শাহ আলম, আবদুস সালাম ও এসএম সালাউদ্দিন এবং অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপরেটর (কুষ্টিয়া) আবু আইয়ুব আনছারী।

গতবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়া একজন বলেন, হাজযাত্রীদের সেবার জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হজগাইড হিসেবে যান। তবে সেখানে তাদের পাওয়া যায় না। গাইডের অভাবে পথ হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় কাঁদতে হয় অনেককে। বিশ্বের যেকোনো দেশের হজযাত্রীদের তুলনায় বেশি দুর্ভোগ হয় আমাদের দেশের হাজীদের। ভারত ও পাকিস্তানের গাইডরা তাদের যাত্রীকে সুন্দরভাবে সহযোগিতা করেন। তাদের ধারে-কাছেও না আমাদের গাইডরা। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. আবদুল্লাহ আল নাসের বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকার যে উদ্দেশে প্রতিনিধিদল সৌদি আরবে পাঠায়, হাজিরা তাদের কাছ থেকে সেই সেবা পান না। অনেক সময় তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। দেখা গেছে, অন্য দেশের সেবকরা আমাদের দেশের হাজীদের দেখাশোনা করছেন। অতীতে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেন, হাজীদের সেবাদানকারী হিসেবে তারা ঠিকই সৌদি যান। কিন্তু তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার এমন উচ্চপর্যায়ের সব কর্মকর্তারা এই প্রতিনিধিদলের সদস্য হন, যারা অসুস্থ হাজীদের ‘ময়লা-আবর্জনা’ পরিষ্কারে অভ্যস্ত নন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (হজ) মো. হাফিজ উদ্দিন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, হাজীদের সেবায় ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন দল পাঠানো হয়। এরই মধ্যে চিকিৎসাসেবা দিতে ২৩৭ সদস্যের টিম করা হয়েছে। হজগাইড হিসেবে ১৪৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক গাইড নিজ গ্রুপের ৪৫ জন হজযাত্রীর জিম্মাদার হিসেবে কাজ করবে। তারা হজযাত্রীদের কাছ থেকে কোনো বখশিস, সম্মানী ও উপহার দাবি বা গ্রহণ করতে পারবেন না। হজযাত্রীদের সঙ্গে বিনীত, নম্র ও ভদ্র আচরণ করতে হবে তাদের। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটলে বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads