• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
এবারো হজযাত্রীদের থেকে বাড়তি অর্থ নেবে সিন্ডিকেট

প্রতিবছরের মতো এবারো মাঠে নেমেছে বিমান টিকেট সিন্ডিকেট

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

এবারো হজযাত্রীদের থেকে বাড়তি অর্থ নেবে সিন্ডিকেট

  • কামাল মোশারেফ
  • প্রকাশিত ০৯ জুলাই ২০১৮

হজযাত্রীদের পকেট কাটতে প্রতিবছরের মতো এবারো মাঠে নেমেছে বিমান টিকেট সিন্ডিকেট। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই হজ মৌসুমে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে চক্রটি। এদিকে হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে কয়েকটি এজেন্সিতে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযান অব্যাহত থাকায় আতঙ্কে রয়েছে প্রতারক এজেন্সিগুলো।

পবিত্র হজ পালনে এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন সৌদি আরব যাবেন। হজ ফ্লাইট শুরু হবে আগামী ১৪ জুলাই থেকে। থার্ড ক্যারিয়ারের সুযোগ না থাকায় প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী মোট যাত্রীর শতকরা ৫০ ভাগ পরিবহন করবে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও বাকিদের সৌদি এয়ারলাইনস। ইতোমধ্যে সৌদি এয়ারলাইনস তাদের বরাদ্দ ৬৫ হাজারের মধ্যে ৪৫ হাজার টিকেট তিনটি ট্রাভেল এজেন্সিকে দিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার সানশাইন এক্সপ্রেস, ১৫ হাজার আল গাজী ট্রাভেলস এবং ১০ হাজার কাজী এয়ারকে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০ হাজার টিকেট ২৫ থেকে ২৭টি এজেন্সির মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে।

টিকেটগুলো এয়ারলাইনসের কাছ থেকে কয়েকটি এজেন্সির হাতে চলে যাওয়ায় বাকি এজেন্সিগুলোকে তাদের কাছ থেকে টিকেট কিনতে হচ্ছে। এই সুযোগে টিকেটপ্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করে মধ্যবর্তী এজেন্সিগুলো। আর শেষ এজেন্সি হজযাত্রীদের কাছ থেকে আরো ২-৫ হাজার টাকা বেশি হাতিয়ে নেয়। নিয়ম অনুযায়ী, একটি এজেন্সি সর্বোচ্চ ৩০০ হজযাত্রীর জন্য টিকেট নিতে পারবে।

বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবের একাধিক নেতা জানান, বিমান টিকেট নিয়ে অনিয়মের ঘটনা প্রতিবছরই ঘটছে। থার্ড ক্যারিয়ার ওপেন থাকলে এই অভিযোগ ওঠার সুযোগ থাকত না। তারা বলেন, হজের ফ্লাইট বিপর্যয়ের নেপথ্যে রয়েছে টিকেট সিন্ডিকেটের কারসাজি। এ কারসাজির কারণেই গত বছর বিমানের হজ ফ্লাইটগুলো বাতিল হওয়ায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে।

হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেন, ‘সৌদি এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে কয়েকটি এজেন্সিকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ধর্ম মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। একাধিকবার মন্ত্রী ও সচিবকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু সৌদি এয়ারলাইনস এ ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। এয়ারলাইনসটির কাছে আমাদের দাবি, বেসরকারি সব এজেন্সির নামে টিকেট দেওয়া হোক।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাবের এক কর্মকর্তা জানান, সৌদি এয়ারলাইনসের এই সিদ্ধান্তে বাধ্য হয়ে ওই তিন এজেন্সির কাছ থেকে সবাইকে টিকেট কিনতে হয়। এই সুযোগে তারা অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়।

জানা গেছে, আগামী ১৪ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সৌদি আরবে হজযাত্রী পাঠাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বিমানে বাংলাদেশ থেকে যেতে পারবেন ৬৩ হাজার ৬০০ জন। তবে গত শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৫ হাজার টিকেটও বিক্রি হয়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয় দফায় দফায় এজেন্সিগুলোকে বিমানের টিকেট কেনার তাগাদা দিলেও কাজ হয়নি। হজ অফিসের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার হজযাত্রীদের টিকেট সংগ্রহ করতে এজেন্সিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে অনিয়ম, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি এজেন্সিতে অভিযান চালিয়েছে দুদক। কয়েকজন যাত্রী জানান, তাদের কাছ থেকে হজের ফি ও খরচ নেওয়া হলেও কে কোন এজেন্সির মাধ্যমে যাবেন- সে বিষয়ে জানানো হয়নি। গত বছর ভিসা পাওয়ার পরও ৯৮ জন হজে যেতে না পেরে ১৮টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন। এ ছাড়া ভিসা পেয়েও অন্যান্য কাগজপত্রের অভাবে ৩৬৭ জন হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যেতে পারেননি। এ বছর যাতে তেমন ঘটনা না ঘটে সেজন্য কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে দুদকের এনফোর্সমেন্ট অভিযানের সমন্বয়কারী কমিশনের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী জানান, হজযাত্রীদের ফ্লাইট নির্ধারণ, মক্কা-মদিনায় বাসাভাড়া চুক্তি সম্পাদন, হাজীদের নির্বিঘ্নে মক্কা-মদিনায় অবস্থান নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি বিষয়ে যাতে কোনো দুর্নীতি না হয় সেজন্য বিভিন্ন এজেন্সির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। হজ সংক্রান্ত কোনো দুর্নীতি হলে তা প্রতিকারের জন্য ‘দুদক অভিযোগ কেন্দ্র-১০৬’ খোলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads