• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

রাসুল (সা.)-এর প্রতি সাহাবিদের নজিরবিহীন ভালোবাসা 

  • প্রকাশিত ১২ নভেম্বর ২০২০

হাফেজ মাওলানা মাহাথির মোবারক

 

 

কোরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছে, তারা আল্লাহতায়ালার প্রতি রাজি-খুশি আছেন এবং আল্লাহতায়ালাও তাদের প্রতি রাজি-খুশি। দুনিয়ায় থাকতেই তাদের আল্লাহপাক তাদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। কেননা তারা ছিলেন পরিপূর্ণ মুমিন। আর তারা মুমিন হয়েছেন রাসুলের হাতে বায়াত হয়ে ঈমান আনয়ন করে রাসুল (সা.)-কে অধিক ভালোবাসার কারণে। মুমিন হওয়ার জন্য অন্যতম একটি শর্ত হলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ (পরিপূর্ণ) মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তার কাছে তার পিতামাতা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হবো (বুখারি, হাদিস : ১৫)। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি তাঁর সাহাবিগণের যে ভালোবাসা ছিল, সত্যিই তা পবিত্র ও অতুলনীয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এর কোনো নজির খোঁজে পাওয়া যায় না।

ইসলামের সূচনালগ্নের কথা। তখন মাত্র ঊনচল্লিশ জন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুমতিক্রমে হজরত আবুবকর (রা.) প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করলেন। প্রথম যেদিন বক্তৃতা করলেন, সেদিনই মুশরিকদের গায়ে আগুন জ্বলে উঠল। হিংস্র হায়েনার মতো হজরত আবু বকর (রা.)-এর ওপর  ঝাঁপিয়ে পড়ল ওরা। ক্ষতবিক্ষত করে দিল তাঁর সারা শরীর। দীর্ঘ সময় বেহুঁশ হয়ে পড়ে রইলেন তিনি। অতঃপর সম্বিৎ ফিরে পাওয়া মাত্রই প্রথমে জিজ্ঞেস করলেন প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন আছেন? তাঁর মমতাময়ী মা তাঁকে কিছু খাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করলেন। কিন্তু হজরত আবু বকর (রা.) শপথ করে বললেন, নবীজির সাক্ষাৎ লাভের আগে আমি কোনো আহার গ্রহণ করব না।

কিশোর সাহাবি হজরত জায়েদ বিন হারেসা (রা.) মুসলমানদের হাতে বন্দি হয়ে আসার পর তার পিতা কেঁদে কেঁদে তাকে খুঁজে ফিরছিলেন। একসময় সন্ধান পেয়ে তার পিতা ও চাচা মদিনায় গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হলেন। তারা বিনীত সুরে আরজ করলেন, হে হাশেম বংশধর! আপনি বন্দি মুক্ত করেন। ক্ষুধার্তদের আহার দেন। মুক্তিপণ নিয়ে আমাদের ছেলেকে মুক্ত করে দিন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জায়েদের পিতাকে বললেন, আপনি ওকে জিজ্ঞেস করুন। সে যদি যেতে চায় তাহলে নিয়ে যান। কোনো মুক্তিপণের প্রয়োজন নেই। এরপর জায়েদ (রা.) উপস্থিত হলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগন্তুক দুজনের দিকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এদের চেনো? জায়েদ বললেন, হ্যাঁ, ইনি আমার বাবা আর ইনি আমার চাচা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যাও, তোমার বাবা তোমাকে নিতে এসেছেন। বালক জায়েদ জবাব দিলেন- আমি আপনাকে রেখে কোথাও যাব না।

হজরত জায়েদ ইবনে দাসানা (রা.) কাফিরদের হাতে বন্দি হওয়ার পর পাপিষ্ঠরা তাকে শূলে চড়ানোর আয়োজন করে। তামাশা দেখার জন্য সমবেত হয় অনেক মানুষ। আবু সুফিয়ান তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি নরম সুরে জিজ্ঞাসা করলেন, জায়েদ! সত্যি করে বলো তো; আল্লাহর শপথ দিয়ে তোমাকে জিজ্ঞেস করছি, তুমি কি এটা পছন্দ কর যে, তোমার পরিবর্তে মোহাম্মদের গর্দান উড়িয়ে দেয়া হোক আর তোমাকে হাসিমুখে তোমার পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হোক। হযরত যায়েদ (রা.) দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিলেন, আল্লাহর শপথ! নবীজির যাত্রাপথে একটি কাঁটা লুকিয়ে রাখা হবে আর আমি ঘরে বসে আরাম করব, এতটুকুও আমার সহ্য হবে না। হজরত জায়েদের জবাব শুনে সেদিন মক্কার কাফেররা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। আরব নেতা আবু সুফিয়ান মন্তব্য করেছিলেন, মোহাম্মদের প্রতি তার সাথীদের যে ভালোবাসা আমি দেখেছি, অন্য কারো প্রতি এমন ভালোবাসা আমি আর কখনো দেখিনি।

আমরা প্রিয়নবীর উম্মত। তাঁকে ভালোবাসা ঈমানি দায়িত্ব। বাস্তবতার আলোকে ফুটিয়ে তুলতে হবে নবীজির আদর্শ। করতে হবে তাঁর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ। তবেই পাওয়া যাবে মহান আল্লাহকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, (হে নবী) বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর। আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সুরা আল ইমরান : ৩১]

 

লেখক : খতিব, মসজিদে বায়তুন নূর, মাওনা, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads