• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

দান-সদকার উপকারিতা

  • প্রকাশিত ১২ নভেম্বর ২০২০

আব্দুল্লাহ মাসউদ

 

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘গোপন দান বরকতময় আল্লাহতায়ালার ক্রোধ নিপতিত করে’ (তাবরানি, তারগিব)। গোপনে দানকারী ব্যক্তির জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেয়ামত দিবসে একটি বিশেষ মর্যাদার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি (সা.) ইরশাদ করেন, গোপনে দানকারী ব্যক্তি কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের নিচে ছায়ালাভ করবে।

একজন আল্লাহওয়ালা। শুধুই আল্লাহতায়ালার ভালোবাসার টানে তিনি কিছু সদকা করার ইচ্ছে করলেন। তিনি চান না সদকার কথাটা মানুষ জানুক। তাই রাত মোটামুটি গভীর হলে তিনি টাকার ব্যাগটা নিয়ে পথে বের হলেন। পূর্ণিমা গত হয়েছে কয়েকদিন হলো। মধ্যরাতে চারদিকে খুব অন্ধকার। অন্ধকারের মধ্যেই তিনি একজনের হাতে সদকার সমুদয় টাকা তুলে দিলেন। সকাল বেলা তিনি শুনতে পেলেন, লোকজন বলাবলি করছে— গতরাতে কে যেন এক চোরকে অনেক টাকা দান করেছে। তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। মনে মনে ভাবলেন, হয়তো আল্লাহতায়ালা তার দান কবুল করেননি। তাই তা একজন চোরের হাতে পড়েছে। তিনি আবার সদকা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। শুধুই আল্লাহতায়ালার একটু ভালোবাসার জন্য। রাত গভীর হলে পুনরায় তিনি টাকার থলে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। অচেনা একজনের হাতে টাকা তুলে দিয়ে ঘরে ফিরে এলেন। সকালবেলা জানা গেল, গত রাতে কে যেন এক ধনাঢ্য লোকের হাতে অনেকগুলো টাকা তুলে দিয়েছে। কথাটা শুনে তিনি ব্যথিত হলেন। হয়তো এবারো আল্লাহতায়ালা তার সদকা কবুল করেননি। তিনি আবারো আগের সম-পরিমাণ টাকা সদকা করার প্রতিজ্ঞা করলেন। ঘটনাক্রমে সেই সদকা গিয়ে পড়ল এক ব্যভিচারী মহিলার হাতে। সকাল বেলা লোকমুখে শুনতে পাওয়া গেল, আজ রাতে কে যেন এক ব্যভিচারী মহিলাকে অনেক টাকা দিয়েছে।

সদকা করার মতো হাতে যা ছিল সবই তো শেষ হয়ে গেছে। আল্লাহতায়ালা তার কোনো দানই কি তাহলে কবুল করলেন না? দুশ্চিন্তায় তার সময় কাটতে লাগল। কদিন যেতে না যেতেই তিনি সংবাদ পেলেন, সেই চোরটি নাকি চুরি করা বাদ দিয়েছে। মধ্যরাতে পাওয়া টাকাগুলো দিয়ে সে এখন বৈধ পথে অর্থ উপার্জনের জন্য দিনান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আর সেই ধনী লোকটি ছিল কিটকিটে এক কৃপণ। অন্যের কাছ থেকে নিঃস্বার্থ দানের শিক্ষা পেয়ে সেও নাকি এখন অভাবী ও দুঃখী মানুষকে দান করা শুরু করেছে। আর ব্যভিচারী মহিলা, এতিম সন্তানদের জন্য যে এই জঘন্য পথ বেছে নিয়েছিল, সেও এখন এই পাপের পথ থেকে তওবা করেছে। এরকম আরো অনেক ঘটনা কিতাবাদিতে উল্লেখ রয়েছে।

লন্ডন থেকে প্রকাশিত আরবি সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘আল মুসলিমুন’-এর ১৮১তম সংখ্যায় সদকার মাধ্যমে চিকিৎসার একটি বাস্তব ঘটনা উঠে এসেছে, যা পাঠকের সামনে তুলে ধরছি- দামেস্কের হাসপাতালে চাকরিরত অবিবাহিত ডাক্তার ঈসা মারযুকী। কদিন যাবত শরীর বেশ খারাপ যাচ্ছে মারযুকীর। চেকআপে জানা গেছে সে ক্যানসারে আক্রান্ত। তখন তার বিয়ের কথা চলছিল। পাত্রীকে জানানো হলো তাকে যেন বিয়ে না করে। কারণ সে ক্যানসারে আক্রান্ত। কিন্তু হবু স্ত্রী তাদের খবরকে প্রত্যাখ্যান করল। চিকিৎসা শুরু হলো। কিছুতেই কিছু হলো না। দিন দিন শরীর খারাপ হতে থাকল। মেডিকেল রিপোর্ট এলো। সে আর দিনকয়েক পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারে।

ডা. ঈসা মারযুকী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিস পড়েছিলেন, যেখানে বর্ণিত ছিল- হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সদকার মাধ্যমে তোমাদের রোগীদের চিকিৎসা কর (সহিহুল জামে, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, আবু দাউদ ফি মারাসিল)। হাদিসটি পড়ে কিছুটা আশ্বাস পেলেন তিনি। বহু চিকিৎসাই তো করা হলো। এবার রাসুলের একটি হাদিসের ওপর আমল করে দেখি। একটি নিঃস্ব পরিবার সম্পর্কে তার জানা ছিল। তাদের গৃহকর্তা মৃত্যুবরণ করেছে। খুব মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। চিকিৎসায় ঈসা মারযুকীর পুঁজি প্রায় শেষ। যেটুকু ছিল তা তিনি এক বন্ধুকে দিয়ে ওই বাড়িতে পৌঁছে দিলেন এবং সবকিছু তাদের জানালেন যে, তিনি এ সদকার মাধ্যমে আরোগ্য লাভ করার আশা করেন। তার সুস্থতার জন্য দোয়া করুন। সত্যিই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণীর প্রতিক্রিয়া সত্যে পরিণত হলো। মারযুকী ধীরে ধীরে সুস্থতা লাভ করতে লাগলেন। কিছুদিন পর চিকিৎসকদের বোর্ডের সামনে তিনি আবারো এলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্টে দেখা গেল তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। তিনি বোর্ডকে জানালেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা নিয়েছি।

দান-সদকার ফলে মনের ভেতর আনন্দের এক ধরনের তরঙ্গ আলোড়ন সৃষ্টি হয় বলে দানকারী ব্যক্তির মনের ভেতরে এক অসাধারণ শান্তি আসে। শক্তি বৃদ্ধি পায়। দান-সদকা এতই বেশি শক্তিশালী যে, কিছু সময় দেহে রক্তের শ্বেতকণিকাকে পর্যন্ত আন্দোলিত করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় বলে এই শক্তিতে দেহের রোগব্যাধি দূর হয়। রোগের সময় বেশি করে দান-সদকা করা উচিত। দান-সদকার দরুন আল্লাহ খুশি হয়ে রোগ দূর করে দেন এবং আয়ু বাড়িয়ে দেন। এ ছাড়াও সদকা গুনাহকে মিটিয়ে দেয়। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সদকা বা দান পাপাচারের কারণে আল্লাহর গজবের যে আগুন সৃষ্টি হয় তাকে নিভিয়ে দেয় (তিরমিজি)।

 

লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক, যাত্রাবাড়ী মাদরাসা, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads