• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ ‘ইসতিকলাল মসজিদ’

  • ফিচার ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৩ নভেম্বর ২০২০

‘ইসতিকলাল’ আরবি শব্দ। অর্থ স্বাধীনতা। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় অবস্থিত ইসতিকলাল মসজিদটি নির্মিত হয়েছে দেশটির স্বাধীনতার স্মরণে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম ও তৃতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ইন্দোনেশিয়া। ১৯৪৫ সালে নেদারল্যান্ডস থেকে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। আর দেশের এই বিশাল অর্জনের কৃতিত্ব স্বরূপ দেশটি স্বাধীনতা মসজিদ তৈরি করে, যা ইসতিকলাল মসজিদ নামে সুপরিচিত।

বিখ্যাত ইসতিকলাল মসজিদ স্থাপনের প্রথম প্রস্তাবটি করেন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম ধর্মমন্ত্রী ওয়াহিদ হাশিম ও আনোয়ার চক্রমেনিতো। এই আনোয়ার চক্রমেনিতো পরবর্তী সময়ে ইসতিকলাল মসজিদ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হন। এই দুজন ১৯৫৩ সালে ইন্দোনেশিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট তথা ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট সুকর্ণকে ইসতিকলাল মসজিদ স্থাপনের প্রস্তাব করেন। প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ সানন্দে রাজি হন এবং ইসতিকলাল মসজিদ নির্মাণের কাজ অতি দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দেন। প্রেসিডেন্ট সুকর্ণের প্রস্তাবে ইসতিকলাল মসজিদটির স্থান হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত চার্চ ‘জাকার্তা ক্যাথেড্রাল’-এর নিকটে মারদেকা স্কয়ারে গৃহীত হয়।

মসজিদটি নির্মাণে ১৭ বছর সময় লাগে। নির্মাণ ব্যয় হয় ১২ মিলিয়ন ইউএস ডলার। অবশেষে ১৯৭৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সুহাত্রো ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় মসজিদ হিসেবে ইসতিকলাল মসজিদের উদ্বোধন করেন। ২০১৩ সালে এই মসজিদটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহৎ মসজিদ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববির পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ এটি। মসজিদটিতে একই সাথে ২ লক্ষ ২০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। ইন্দোনেশিয়ার মসজিদগুলো সাধারণত তিন স্তরের ছাদ বিশিষ্ট হলেও এই মসজিদটির নকশা করা হয়েছে আরবের স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে। মসজিদটি এক অসাধারণ নির্মাণশৈলীতে নির্মিত। মসজিদটিতে ৭টি প্রবেশ গেট রয়েছে, যা জান্নাতের ৭টি প্রবেশের দরজাকে নির্দেশ করে। মসজিদের প্রধান গম্বুজটি অর্ধচন্দ্র-তারা দ্বারা সুশোভিত, যা ইসলামের প্রতীককে নির্দেশ করে। মসজিদের গম্বুজগুলো ১২টি স্তম্ভের ওপর স্থাপিত। আর ১২ দ্বারা হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিবস তথা ১২ রবিউল আউয়ালকে বোঝানো হয়েছে। মসজিদটি ৫ তলা। আর ৫ তলা দিয়ে ইসলাম ৫টি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত তা বোঝানো হয়েছে। মসজিদের গম্বুজের ব্যাস ৮ মিটার। ৮ মিটার ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতার মাস আগস্ট মাস তথা বছরের ৮ম মাসকে বোঝানো হয়েছে। মসজিদের কিবলার দেয়াল তথা প্রধান দেয়াল আল্লাহ, মোহাম্মদ আর সুরা ত্বহার ১৪ নং আয়াতের ক্যালিওগ্রাফি দ্বারা সুশোভিত।

মসজিদের একটি মিনার, যা আল্লাহর একত্ববাদকে নির্দেশ করে। মিনারের দৈর্ঘ্য ৬৬.৬৬ মিটার যা পবিত্র কোরআনের ৬৬৬৬ আয়াতকে নির্দেশ করে। মসজিদের নিচতলায় রয়েছে একটি মাদরাসা ও অনুষ্ঠান হল। মসজিদের দক্ষিণভাগ ফুল বাগান দ্বারা বেষ্টিত। মসজিদটির পাশে রয়েছে ৪৫ মিটার সুউচ্চ ঝরনা। মসজিদটির পূর্ব পাশে সিলিং নদী প্রবাহিত। মসজিদটি পর্যটনের জন্যও বিখ্যাত। ইসতিকলাল মসজিদে এ পর্যন্ত বারাক ওবামা, বিল ক্লিনটন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল, সৌদি বাদশাহ সালমান, ইরানের মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ও লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফি, চার্লস প্রিন্স, ভারতের নরেন্দ্র মোদিসহ বিশ্বনেতারা ঘুরতে এসেছেন। দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক প্রতিদিন ইসতিকলাল মসজিদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। ইসতিকলাল মসজিদ ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম ইসলামী স্থাপত্য এবং দেশের স্বাধীনতার প্রতীক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads