• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

নবীজিকে স্বপ্নে দেখার আমল

  • প্রকাশিত ১৪ নভেম্বর ২০২০

হাফেজ মাওলানা মুফতী আবু ইউসুফ ফারুকী

 

প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমান মনের মধ্যে স্বপ্ন বুনেন প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জীবনে একবার হলেও স্বপ্নযোগে দেখার। কিন্তু সেই সৌভাগ্য সবার জীবনে ঘটে না। মানুষ স্বপ্নযোগে নানা কিছু দেখে। অনেক সময় শয়তান মানুষকে বিভিন্ন কিছু স্বপ্নে দেখিয়ে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু শয়তান প্রিয়নবীর রূপ ধারণ করতে পারে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে আমাকেই দেখল। কেননা বিতাড়িত শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না। আর যে ব্যক্তি আমার ওপর মিথ্যাচার করল, সে তার আসন দোজখে গ্রহণ করল।’ (সহিহ বোখারি-১১০)। অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে আমাকে স্বপ্নে দেখল, শিগগিরই সে আমাকে জাগরণে দেখবে অথবা সে যেন আমাকে জাগরণেই দেখল। আর শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম-২২৬৬)। ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়, অনেক সাহাবি, তাবেঈ ও বুজুর্গরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখেছেন। ইসলামের বিধান হলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখা বাস্তবে দেখার মতো। কেননা, শয়তান কখনো নবীজির আকৃতি ধারণ করতে পারে না।

এখন আমাদের জানা দরকার, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন ছিলেন? কোন আকৃতিতে তাঁকে স্বপ্নে দেখা যাবে। শামায়েলে তিরমিযির বর্ণনায় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আকার-আকৃতির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তিনি ছিলেন মানানসই দীর্ঘদেহি। তাঁর গায়ের রঙ দুধে-আলতায় মিশ্রিত গোলাপের মতো। গোলগাল হালকা-পাতলা চেহারা। ঘন দাঁড়ি। মুখগহ্বর প্রশস্ত। ঘাড় যেন রৌপ্যপাত্রে রক্তঢালা। কেশরাশি সামান্য কোঁকড়ানো-বাবরি। মেদহীন সুঠাম দেহ। হাত-পায়ের আঙুলগুলো শক্তিশালী ও মজবুত। বাহু, কাঁধ ও বুকের ওপরে পশমবিশিষ্ট। অতিরিক্ত পশমমুক্ত শরীর। বুকে নাভি পর্যন্ত পশমের দীর্ঘ রেখা। দুই কাঁধের মাঝখানে মোহরে নবুওয়ত। মাথা ও অস্থিবন্ধনীগুলো কিছুটা বড়সড়। প্রশস্ত ললাট। চক্ষুগোলক ডাগর ডাগর। চোখের মণি কুচকুচে কালো। পাপড়ি লম্বাটে। ভ্রূ-যুগল অমিলিত প্রশস্ত ঘন। ভ্রূ-দ্বয়ের মাঝখানে প্রস্ফুটিত একটা রগ, যা রাগের সময় স্ফীত হতো। উন্নত চকচকে নাসিকা। দাঁতগুলো বিযুক্ত রুপার গাঁথুনি। এক কথায় তার অপূর্ব রূপমাধুর্য বর্ণনাতীত। যে কেউ তাকে প্রথম দর্শনে হতভম্ব হয়ে পড়ত। সে একথা বলতে বাধ্য—জীবনে এমন সুন্দর মানুষ দ্বিতীয়জন দেখিনি।’

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখা যাবে ঈমান অবস্থায়। পূর্ণ ইসলাম পরিপালনকারী ও সুন্নতের অনুসারীরাই কেবল তাকে দেখতে পাবেন। এছাড়া কেউ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখার দাবি করলে সেটা মিথ্যা। মনে রাখতে হবে-যে যাকে ভালোবাসে, তার সঙ্গলাভে নিজেকে ধন্য মনে করে। তার চালচলন, ভাবভঙ্গি ও বচনাচার অনুকরণ করে। যে নবীজিকে ভালোবাসে, পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করে এবং সবসময় তাঁর সাক্ষাতের প্রতীক্ষায় থাকে। সে-ই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখে। এভাবেই যুগে যুগে হাজারো নবীপ্রেমিক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখেছেন। নবীজিকে স্বপ্নে দেখেছিলেন-ইমাম আবু হানিফা, আবদুর রহমান জামি, জালালুদ্দীন রুমি, শেখ সাদি, সাদুদ্দীন তাফতাজানি, হযরত শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভি, আবদুল আজিজ, শায়খ জাকারিয়াসহ অসংখ্য নবীপ্রেমিক (র.)। বর্ণিত আছে, ইমাম মালেক (র.) অধিকাংশ রাতেই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখতেন।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখতে হলে করণীয় হলো—সত্যিকারের নবীপ্রেমে মাতোয়ারা হওয়া। তাঁর সুন্নতসমূহ পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে উদ্গ্রীব হওয়া। তাহলেই কেবল নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখা সম্ভব। কোনো কোনো আলেম বলেছেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখার আমল হলো, বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। অজুসহকারে পবিত্র হয়ে বিছানায় শয়ন করা। শেষ রাতে উঠে তওবা করা। তবে সর্বাগ্রে যেটা মনে রাখা দরকার সেটা হলো- ফরজ ইবাদত তার হকসহ পরিপূর্ণভাবে পালন করেই তবে নফল ইবাদতে মনোনিবেশ করত হবে।

 

লেখক : খতিব, কাজীপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads