• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

সাহাবায়ে কেরাম সর্বোত্তম উম্মত

  • প্রকাশিত ১৩ ডিসেম্বর ২০২০

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

 

ঈমানের সঙ্গে যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সান্নিধ্য লাভ করেছেন এবং ঈমানের ওপর অটল অবিচল থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন, তাদের সাহাবি বলে। উম্মতে মোহাম্মদির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মহান জামাত হলো সাহাবায়ে কেরাম। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র সঙ্গ ও সান্নিধ্য লাভের বরকতে তাঁরা সকল প্রকার মলিনতা থেকে ছিলেন মুক্ত। সর্ব প্রকার জুলুম-নির্যাতন, দুঃখ-দুর্দশা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মাঝেও তাদের হূদয় ছিল নবীপ্রেমে ভরপুর। ধৈর্য, ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাঁরা অর্জন করেছিলেন মহান আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তুষ্টি। সকল হক্কানি ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে, কোনো অলি বা পীর-মাশায়েখ যতই উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছান না কেন, একজন সাধারণ সাহাবার সমতুল্য কখনো হতে পারবেন না। কেননা তাঁরা সার্বিক দিক থেকে অনন্য ও অতুলনীয়। সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বোঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে তাদের প্রশংসনীয় গুণাবলির আলোচনা করেছেন।

মহান আল্লাহতায়ালা মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘মোহাম্মদ আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর সাথে যারা আছে তাঁরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর। পরস্পরে একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সিজদারত দেখবেন। তাদের চেহারায় রয়েছে সিজদার চিহ্ন এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। (সুরা ফাতহ, আয়াত ২৯)। অন্যত্র রাব্বুল আলামিন সকল উম্মতে মোহাম্মাদীকে সাহাবাদের মতো ঈমান আনার প্রতি উৎসাহিত করে পবিত্র কোনআনে ইরশাদ করেন, ‘অতএব তাঁরা যদি ঈমান আনে, তোমাদের ঈমান আনার মতো, তবে তাঁরা হিদায়েত প্রাপ্ত হবে। আর যদি তারা বিমুখ হয় তাহলে তারা রয়েছে কেবল বিরোধিতায়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৩৭)।

মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা হাদিদের ১০নং আয়াতে সাহাবিদের ব্যাপারে জান্নাতের ওয়াদা করে বলেন, ‘তবে আল্লাহ তাদের সকলকেই কল্যাণের (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম তাঁরা যারা আমার যুগে রয়েছে অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মত অর্থাৎ তাবেয়ীন। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মত অর্থাৎ তাবে তাবেয়িন। (বুখারি, মুসলিম)।

হজরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ইরশাদ করেন, তোমরা আমার প্রত্যেক সাহাবিকে সম্মান কর। কেননা তাঁরা তোমাদের মধ্যে উত্তম মানব। (মুসনাদে আহমদ, নাসায়ি)।

সম্মানিত পাঠক, সাহাবায়ে কেরাম হলেন উম্মতে মোহাম্মদির জন্য অনুপম আদর্শ। তাই তাদের প্রতি পূর্ণ ভক্তি ও ভালোবাসা প্রদর্শন করা এবং তাদের অনুসরণ-অনুকরণ করা প্রত্যেক মুমিনের ইহকালীন কল্যাণ ও পরোকালীন মুক্তির অন্যতম উপায়। কোনো অবস্থাতেই সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করা যাবে না। যারা সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি বাণী উচ্চারণ করেছেন।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যাদের আমার সাহাবিদের সমালোচনা করতে তোমারা দেখবে, তাদের বলে দাও, তোমাদের ওপর আল্লাহ অভিশাপ। (তিরমিজি)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, যে মুমিন সে আমার সাহাবিদের মুহাব্বত করবে। আর যে আমার সাহাবিদের সমালোচনা করবে সে মুনাফিক। যে ব্যক্তি আমার সাহাবিদের মুহাব্বত করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে মুহাব্বত করবেন। আর যে ব্যক্তি আমার সাহাবিদের প্রতি বিদ্বেষ রাখবে, মহান আল্লাহতায়ালা তার প্রতি বিদ্বেষ রাখবেন। (বুখারি)। হজরত ইবনে উমর (রা.) বলেন, তোমরা মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবিদের গালি দিও না। কেননা এক মুহূর্তের জন্য যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোহবতে ধন্য হয়েছেন তাঁর আমল তোমাদের সারাজীবনের আমল থেকেও শ্রেষ্ঠ। (ইবনে মাজাহ)।

 

লেখক : প্রিন্সিপাল, মারকাযুল উলুম আজিজিয়া মাদরাসা

কাজলা (ভাঙ্গাপ্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads