• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

ইসলামেই আছে প্রকৃত সুখ

  • প্রকাশিত ২২ ডিসেম্বর ২০২০

আবু তালহা রায়হান

 

 

 

মানুষ সুখসন্ধানী। সারাটা জীবন সুখের  পেছনেই ছুটে মানুষ। খুঁজে বেড়ায় একটুখানি শান্তি আর ভালোবাসার ছোঁয়া। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের ঘাম ঝরানো পরিশ্রম কেবল সুখ-শান্তির জন্যই। আর গোটা মানবজাতিকে মহান আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করেছেন তাঁর গোলামি করার জন্য। সুন্দর জীবনযাপনের জন্য। আরাম-আয়েশের জন্য। মানুষ আল্লাহর হুকুম-আহকাম মেনে সরল-সঠিক পথে চললে ইহকাল, পরকাল উভয়জগতেই  তার জন্য রয়েছে সুখ ও শান্তি। মানুষের জীবনের সবচে’ বড় স্বপ্ন থাকে তার গাড়ি-বাড়ি হওয়া, টাকা-পয়সা হওয়া। মানুষ ভাবে, এসব কিছুতেই তার জীবনের পরম সুখ নিহিত আছে। মানুষ এটাও ভাবে, পৃথিবীর প্রকৃত সুখী সেই ব্যক্তি, যার টাকা আছে। গাড়ি আছে। বাড়ি আছে। কিন্তু একসময় মানুষের গাড়ি-বাড়ি, টাকা-পয়সা সব হয়। তবুও মানুষ সুখের দেখা পায় না। শান্তিতে একটুখানি ঘুমাতেও পারে না। হতাশায় দিন কাটে।

ক্লাস অষ্টমের বাংলা বইয়ে আমরা পড়েছি অন্যের টাকা মেরে, গরিবের হক মেরে অসৎপথে উপার্জিত বিশাল সম্পদের মালিক মুড়লের কথা। মুড়লের স্বপ্ন ছিল জীবনে সুখী হওয়া। তাই সে চুরি-ডাকাতি করে হারামপন্থায়  সম্পদ অর্জন করেছে। কিন্তু একসময় মুড়ল অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার জীবনে সুখ নেই, শান্তি নেই। এত সম্পদের পরও মুড়লের জীবনে সুখের কোনো দেখা নেই। কবিরাজকে ডাকা হলো, মুড়লের ব্যাধি দূর করতে হবে। তাকে সুখ এনে দিতে হবে। কবিরাজ মুড়লের জন্য ওষুধ দিলেন। মুড়লকে সুখী মানুষের জামা পরাতে হবে। তবেই তার ব্যাধি দূর হবে, সে সুখী হবে। এবার সুখী মানুষের জামা খুঁজতে গেল মুড়লের গোলাম রহমত আলি। অনেক খুঁজলো, কিন্তু কোথাও কোনো সুখী মানুষের দেখা পেল না। যার যত আছে, তাকে আরো দাও। ধনীকে ধন দাও, ফকিরকে ভিক্ষা দাও, সবাইকে শুধু দিতেই থাকো।

কেউ সুখী না। অবশেষে বনের মাঝে এক সুখী মানুষকে পাওয়া গেল। সে সারাদিন কাঠ কাটে, বিকেল হলে ডাল-ভাত খায়। এতেই তার শান্তি। এতে তার সুখ। বনের কাঠুরিয়াকে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করা হলে বলল, ‘আমি সুখী মানুষ, সুখের রাজা’। মুড়লের গোলাম রহমত আলি সুখী মানুষের জামা কিনতে চাইলে সে বলল, আমার কিছু নেই। জামা নেই। গাড়ি নেই। বাড়ি নেই। আর তাই আমি সুখী।

মোটকথা পৃথিবীতে কেউ-ই সুখী না, যতক্ষণ না সে আত্মতৃপ্ত হবে। ইসলামের সাজে সজ্জিত হবে। ধনসম্পদে প্রকৃত সুখ পাওয়া অসম্ভব। মানবজাতিকে সুখ-শান্তির জীবন ভোগ করতে হলে ইসলামের রঙে নিজেকে রাঙাতে হবে। ইসলাম শান্তি ও মানবতার ধর্ম। ইসলাম ন্যায় ও নীতির ধর্ম। ইসলাম সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা বলার শিক্ষা দেয়। ইসলামে ধনী-গরিবে কোনো ভেদাভেদ নেই। মানুষে মানুষে সমপ্রীতির সেতুবন্ধন তৈরি করেছে ইসলাম। ইসলামে অন্যায়ভাবে গরিবের হক নষ্ট করতে নিষেধ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকের কাছে পেশ করো না।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৮)

ইসলাম হালালকে বৈধ করেছে, হারামকে নিষেধ করেছে। কোরআন আমাদেরকে হালাল উপার্জনের শিক্ষা দেয়। আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে মানবজাতি! পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে, তোমরা তা আহার করো এবং কোনোক্রমেই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১৬৮) সর্বোপরি অন্যায় ও অনৈতিকভাবে উপার্জিত অর্থ-বিত্তই মানুষের অশান্তির  মূল কারণ। বরং ইসলামের আলোকে সৎপথে নিজ পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করলেই জীবনে শান্তি মেলে। সুখ মেলে। সুতরাং নীতিহীন পথে সম্পদ উপার্জনের পথ পরিহার করে আমাদেরকে সঠিক পথে ফিরে আসতে হবে। তবেই আমরা পাব জীবনের কাঙ্ক্ষিত সুখ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সরল-সঠিক পথে চলার তাওফিক দিন।

 

লেখক : সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads