• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

সফর অবস্থায় নামাজ আদায়ের বিধান

  • প্রকাশিত ২৫ ডিসেম্বর ২০২০

মুফতি নাঈম কাসেমি

 

 

মানবজাতির ওপর এমন কোনো বিধান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চাপিয়ে দেননি, যা তাদের জন্য কষ্টকর। সব ক্ষেত্রে সহজতা এবং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। বান্দার যেন কষ্ট না হয়, সেদিকে আল্লাহতায়ালা প্রতিটি বিধানের ক্ষেত্রে খেয়াল রেখেছেন। নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের মাঝেও অনেক সুযোগ করে দিয়েছেন। যেমন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য নামাজ বসে বা শুয়ে আদায় করার সুযোগ রয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে সফর অবস্থায় চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ দুই রাকাত আদায় করার বিধান করেছেন। যাতে করে সফরের কষ্ট কিছুটা হলেও লাগব হয়। যদি কোনো ব্যক্তি ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার ইচ্ছায় পনেরো দিনের কম সময় থাকার নিয়তে ঘর থেকে বের হয়, তাহলে সে শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে মুসাফির বলে গণ্য হবে। মুসাফির রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ আদায় করলে কসর করা জরুরি। অর্থাৎ চার রাকাতের পরিবর্তে দুই রাকাত আদায় করবে। এক্ষেত্রে পূর্ণ নামাজ আদায় করা ঠিক নয়। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘নামাজ ফরজ করা হয়েছে মুকিম ও সফর অবস্থায় দুই দুই রাকাত করে। অতঃপর সফর অবস্থার নামাজ দুই রাকাতই বহাল রাখা হয়েছে আর মুকিম অবস্থার নামাজকে দুই রাকাত বৃদ্ধি করা হয়েছে (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৮৫)।

সহিহ মুসলিমে আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘আমি সফরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গী হয়েছি। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের অধিক পড়েননি। আমি আবু বকর (রা.)-এর সঙ্গী হয়ে সফর করেছি, তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের বেশি পড়েননি। আমি উমর (রা.)-এর সঙ্গী হয়ে সফর করেছি, তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের বেশি পড়েননি। আমি উসমান (রা.)-এর সাথে সফর করেছি, তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের বেশি পড়েননি।

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-কে সফরের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সফরের নামাজ দুই রাকাত। যে সুন্নাহকে পরিত্যাগ করল সে (এ হুকুম) অমান্য করল (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৪২৮১)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (কসর নামাজ) সদকা, আল্লাহতায়ালা তা তোমাদের দান করেছেন। অতএব, তোমরা আল্লাহতায়ালার দানকে কবুল করে নাও (মুসলিম, হাদিস : ৬৮৬)। হজরত মুসা ইবনে সালাম (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, মক্কায় অবস্থানকালে ইমামের পেছনে যখন নামাজ আদায় না করি, তখন কীভাবে নামাজ পড়ব? তিনি বললেন, দুই রাকাত পড়বে। এটা আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ (মুসলিম, হাদিস : ৬৮৮)।

সফর অবস্থায় নামাজ কসর করা সম্পর্কে আরো অনেক হাদিস রয়েছে। এসব হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর অবস্থায় সর্বদা নামাজ কসর পড়েছেন। সফর অবস্থায় তিনি চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ পূর্ণ পড়েছেন এটা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। এসব হাদিসের ওপর ভিত্তি করে ফিকহবিদগণ বলেছেন মুসাফির যখন একাকী বা মুসাফির ইমামের পেছনে নামাজ পড়বে তখন তার জন্য চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ কসর করা ওয়াজিব। তবে মুসাফির যদি মুকীম ইমামের পেছনে নামাজ পড়ে সেক্ষেত্রে সে ইমামের অনুসরণে চার রাকাতই পড়বে। দুই রাকাত পড়বে না। নাফে (রহ.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) মিনায় ইমামের পেছনে চার রাকাত পড়তেন। আর যখন একাকী পড়তেন তখন দুই রাকাত পড়তেন (মুআত্তা মালেক, হাদিস : ৫০৬)।

কসরের বিষয়টি শুধু ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে। সুন্নত, নফল নামাজ পড়লে পুরাই আদায় করতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে তার সকল হুকুম আহকাম সঠিকভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক : পরিচালক, জামিয়া শায়খ আরশাদ মাদানী, ময়মনসিংহ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads