• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

স্ত্রীর উপার্জনে স্বামীর অধিকার কতটুকু

  • প্রকাশিত ২৭ ডিসেম্বর ২০২০

বর্তমান সমাজে অনেক সংসারের স্বামী-স্ত্রী উভয়ই চাকরি করে থাকেন। নারীদের কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সে হিসেবে অনেক বিবাহিত নারীও চাকরি করেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে সংসারে স্ত্রীও চাকরি করেন তার উপার্জনে কী স্বামীর কোনো অধিকার রয়েছে কীনা বা সংসার খরচের জন্য ব্যয় করা বাধ্যতামূলক কীনা? ইসলামি শরিয়া মতে, সংসারে স্ত্রীর উপার্জন থেকে ব্যয় করার জন্য তাকে বাধ্য করা যাবে না। তবে খুশি মনে যদি স্ত্রী সংসারের জন্য ব্যয় করেন এটা তার জন্য সদকায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য হবে। তবে কোনো ক্রমেই তাকে বাধ্য করা যাবে না। স্ত্রীর উপার্জনের ওপর স্বামীর কোনো অধিকার নেই। তবে স্বামীর উপার্জনের ওপর স্ত্রীর ভরণপোষণসহ অন্যান্য অধিকার রয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পুরুষগণ নারীদের প্রতি দায়িত্বশীল, যেহেতু আল্লাহ একের ওপর অন্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তারা তাদের সম্পদ হতে ব্যয়ও করবে।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত-৩৪)

সংসারের ব্যয়ভার স্বামীর দায়িত্বে, স্ত্রীর নয়। সংসারের শুরুতেই স্বামীর দায়িত্ব হলো স্ত্রীর মহর পরিশোধ করা। বাকিতে হলেও তা পরিশোধ করতে হবে। কিস্তিতেও পরিশোধ করা যাবে। মহর পরিশোধ না করে মৃত্যু হলে তা ঋণরূপে পরিশোধ করতে হবে। বিয়ের পর স্বামীর দায়িত্ব হলো স্ত্রীকে খোরপোশ ও বাসস্থান দেওয়া। স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীর উপযুক্ত প্রয়োজনমতো খাদ্য যথাসময়ে নিয়মিত স্ত্রীকে দিতে হবে বা ব্যবস্থা করে দিতে হবে। উল্লেখ্য, খাদ্য বলতে তাৎক্ষণিক খাবারের উপযোগী দ্রব্য বা প্রস্তুত করা খাবার। স্বামী স্ত্রীকে স্বীয় সামর্থ্য অনুসারে স্ত্রীর প্রয়োজনমতো তাঁর যোগ্য পোশাক দেবেন। প্রয়োজনীয় পোশাক প্রদান করা যেহেতু স্বামীর দায়িত্ব; তাই সে পোশাক প্রস্তুত করার ব্যয়ও স্বামীর ওপরই বর্তাবে। স্ত্রীর নিরাপদ বাসস্থান বা নিরাপদ আবাসন। অর্থাৎ, স্বামী স্ত্রীকে থাকার জন্য এমন একটি ঘর বা কক্ষ দেবেন, যে ঘর বা কক্ষে স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া (স্বামী ব্যতীত) কেউই প্রবেশ করতে পারবেন না। এমনকী স্বামীর মা-বাবা, ভাইবোনও না। স্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে প্রয়োজনে এই ঘরে বা কক্ষে তিনি তালাচাবিও ব্যবহার করতে পারেন। (শরহে বেকায়া, কিতাবুন নিকাহ)

সুতরাং সংসারের কোনো খরচের দায়িত্ব স্ত্রীর নয়। তাই, স্ত্রীর উপার্জিত অর্থ তার অনুমতি ব্যতীত খরচ করা, কিংবা স্ত্রীকে না জানিয়ে মা-বাবা, ভাই-বোন থেকে শুরু করে কাউকে ওই টাকা দিয়ে সাহায্য করা ইসলাম অনুমোদন দেয় না। এটা জায়েজ নেই। এটা করলে স্ত্রীর অধিকার নষ্ট করা হবে এবং তার আমানতের খেয়ানত করা হবে। স্ত্রীর উপার্জিত টাকা থেকে পারিবারিক ঋণ পরিশোধ অথবা সংসার পরিচালনার জন্য খরচ করতে হলে অবশ্যই স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। তার অনুমতি হলেই কেবল সম্ভব, অন্যথায় জায়েজ হবে না। কারণ, স্ত্রীর সম্পদের অধিকারী স্বামী নয়। তাই স্ত্রীকে না জানিয়ে তার খরচ করলে স্বামী গুনাহগার হবে।

তবে হ্যাঁ, স্বামী তার উপার্জিত টাকা সংসারের চাহিদা মিটিয়ে নিজ পছন্দমতো খরচ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে স্ত্রীর অনুমতি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে স্ত্রীর উপার্জিত অর্থে স্বামীর অধিকার না থাকলেও প্রয়োজনে স্বামীর সংসারের জন্য খরচ করা পুণ্যের কাজ। এতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মিল মুহাব্বত ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। একে অপরের প্রতি সহনশীল হবে। স্ত্রীর স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করেই তার অর্থ ব্যয় করা উচিত। এতে স্বামীর মনও খুশি থাকবে। তবে স্ত্রী যদি তার অর্থের ব্যাপারে স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ নাও করেন এর জন্য স্ত্রীকে দোষারোপ করা যাবে না।

তবে স্ত্রীর চাকরি করার জন্য স্বামীর অনুমতি লাগবে। স্ত্রীকে যদি স্বামী চাকরির অনুমতি দেয়, তাহলে চাকরির এই টাকা সম্পূর্ণ স্ত্রীর মালিকানা সাব্যস্ত হবে। এই টাকা স্ত্রী নিজের বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনকে দিতে পারবে বা যেখানে খুশি সেখানে দান সদকাও করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে স্বামী পরামর্শ দিতে পারবে। তবে স্বামীর এই পরামর্শ গ্রহণ করা স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব নয়, বাধ্যতামূলক নয়। স্ত্রী স্বাধীনভাবে ইচ্ছামতো তার নিজের টাকা খরচ করতে পারবে। কিন্তু স্বামী যদি স্ত্রীকে চাকরির অনুমতি না দেয়, তাহলে ওই স্ত্রী চাকরি করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে চাকরির অনুমতি না দেওয়া স্বামীর জন্য জায়েজ আছে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া চাকরি করলে স্ত্রী গুনাহগার হবে।

 

ইসলামী খবর ডেস্ক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads