• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

মুমিনের অসুস্থতা আল্লাহর নিয়ামত

  • প্রকাশিত ২৮ জানুয়ারি ২০২১

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

 

 

বিপদ-আপদসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড আল্লাহতায়ালা বান্দাকে পরীক্ষা করে থাকেন। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘ইয়া আইয়্যুহাল ইনসানু মা গররাকা বি রাব্বিকাল কারিম। আল্লাজি খলাকাকা ফাসাওয়া কাফাআদালাক। ফি আয়্যিসুরাতিম মাসা আরক্কাবাক।’ এ আয়াতের মধ্যে আল্লাহতায়ালা মানুষের দিকে লক্ষ করে বলছেন, ‘হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহিমান্বিত প্রতিপালকের ব্যাপারে প্রতারিত করছে?’

মানুষ স্বাভাবিকভাবে যখন সুস্থ-সবল থাকে, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে ভুলে যায়। মানুষ প্রতারিত হয় আল্লাহর ব্যাপারে। যেভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার কথা, যেভাবে আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করার কথা, যেভাবে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী নিজের জীবন পরিচালনা করার কথা, ঠিক সেটা হয় না। ফলে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা মাঝেমধ্যে তাকে কিছু পরীক্ষার মুখোমুখি করেন। তখন এটি রহমত হয়। তখন মুমিন ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ সম্পর্কে উপলব্ধি করে যে, আমি কতোটা সুস্থ মানুষ ছিলাম! আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কত বড় অনুগ্রহ করেছিলেন আমার ওপর! সে অনুগ্রহের কথা যখন তার উপলব্ধির মধ্যে আসে, সে তখন সত্যিকার আল্লাহর বান্দা হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালার সত্যিকার শোকর গুজার বান্দা হয়ে যায়। যেভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার কথা, ঠিক সেভাবে আল্লাহতায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এ জন্য এটি রহমত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরনের অসুস্থতার ব্যাপারে বলেছেন যে, তা গুনাহগুলো ক্ষমার কারণ হয়। রহমত শব্দের আরেকটি ব্যাখ্যা এখানে এভাবে আসতে পারে যে, এই অসুস্থতা গুনাহগুলো ক্ষমার কারণ হয়ে যায়। যেহেতু গুনাহগার বান্দা অসুস্থতার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সত্যিকার তওবা করতে সক্ষম হয়, যা মূলত অন্যান্য ব্যক্তির পক্ষে সম্ভবপর হয় না বা অন্য ব্যক্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনুগ্রহের বিষয়ে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় না।

আল্লাহর ওপর ভরসা করা : এ বিশ্বাস রাখা যে, রোগ-ব্যাধিতে একমাত্র আরোগ্যদানকারী মহান আল্লাহ। ইরশাদ হয়েছে : ‘যখন আমি অসুস্থ হই তখন তিনিই আমাকে সুস্থতা দান করেন।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ৮০) ওষুধকেই মূল আরগ্যদানকারী মনে করা শিরক।

সবর করা : রোগব্যাধিতে আল্লাহর ফয়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকা এবং সবর করা ঈমানের দাবি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ৪৬)। আল্লাহ আরো বলেন : ‘ধৈর্যশীলদেরই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই।’ (সুরা জুমার: আয়াত ১০)। সবরের ধরন- ক. নিজেকে মনোক্ষুণ্ন, হতাশা ও বিরক্তি প্রকাশ করা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা। খ. রোগব্যাধিতে মানুষের কাছে অনুযোগ-অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকা। গ. ধৈর্যহীনতার পরিচয় বহন করে, এমন সব কথা ও কাজ থেকে দূরে থাকা।

চিকিৎসা গ্রহণ করা : এলোপ্যাথিক, হোমিও, ইউনানি ইত্যাদি পদ্ধতিতে চিকিৎসা গ্রহণ করা ইত্যাদি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বিভিন্ন রোগব্যাধিতে প্রেসক্রিপশন প্রদান করেছেন।

তাওবা করা : মানুষের উচিত আল্লাহর কাছে রোগব্যাধিতে তওবা করা এবং সুস্থতার জন্য দোয়া করা। অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে মর্যাদা দেয়া রাসুলের সুন্নাত। ইবাদত-বন্দেগি, তাওবা-ইস্তেগফার, দোয়া-দরুদ পাঠের মাধ্যমে তাওবা করে আল্লাহ প্রিয়ভাজন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করা।

অসুস্থদের প্রতি আল্লাহর করুণা : অসুখ হলে আল্লাহ ঈমানদারের গুনাহ মাপ করে মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। মুমিনের বিশ্বাস হচ্ছে, সে যে অবস্থায়ই থাকুক, তার মধ্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। হাদিসে এসেছে, মুমিনের বিষয়টা বড়ই আশ্চর্যের! তার সব অবস্থাতেই কল্যাণ থাকে। এটি শুধু মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য যে, যখন সে আনন্দে থাকে, তখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এবং যখন সে কষ্টে থাকে, তখন সবর করে। আর এ উভয় অবস্থাই তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।’ (মুসলিম)

সুস্থতার জন্য দোয়া : হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে তাঁর বন্ধু-বান্ধব, সন্তান-সন্তুতি সবাই দূরে সরে যায়। অসুস্থতার আগে আল্লাহ তাকে অগাধ ধন-সম্পদ, সহায়-সম্পত্তি, দালানকোঠা, যানবাহন, চাকর-নকর সবাই দান করেছিলেন। অসুস্থ হওয়ার পর সবকিছুই তার শেষ হয়ে যায়। এ অসহায় অবস্থায় তিনি দোয়া করেছিলেন। ফলে আল্লাহতায়ালা তাকে আগের মতো সবকিছুই ফিরিয়ে দেন। দোয়াটি হলো উচ্চারণ : রাব্বি আন্নি মাসসানিয়ায জুররু ওয়া আনতা আরহামুর রাহিমিন। অর্থ- হে আমার প্রভু! আমি দুঃখে-কষ্টে পতিত হয়েছি, তুমিই তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৩)। এ ঘটনাটি আল্লাহ কোরআনে তুলে ধরেন। ইরশাদ হয়েছে- ‘এবং স্মরণ করুন আইয়ুবের কথা, যখন তিনি তাঁর পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিলেন : আমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি দয়াবানদের চাইতেও সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াবান। অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁর দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিলাম এবং তাঁর পরিবরা ফিরিয়ে দিলাম, আর তাদের সঙ্গে তাদের সমপরিমাণ আরো দিলাম আমার পক্ষ থেকে কৃপাবশত আর এটা ইবাদতকারীদের জন্যে উপদেশস্বরূপ। (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৩-৮৪)

 

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য

কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads