• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

  • প্রকাশিত ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

সায়মা তাহসিন সাবিহা

 

 

 

ইসলাম মানব প্রকৃতির সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি জীবন বিধান। এখানে মানুষকে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। নারী-পুরুষ সবাই মানুষ হিসেবে এই মর্যাদার অংশীদার। মানবকুল নারী-পুরুষ দ্বারা গঠিত। নারী থেকে পুরুষ, পুরুষ থেকে নারী কোনোভাবেই আলাদা করার সুযোগ নেই। এই পৃথিবীতে মানব সমাজের অস্তিত্ব থাকতে হলে নারী-পুরুষের যৌথ উপস্থিতি অপরিহার্য। নারীর কাছে পুরুষ আর পুরুষের কাছে নারী ঋণী। এই দুইয়ের কোনো একজনকে বাদ দিয়ে মানব জীবনের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। একদিকে যেমন একজনকে ছাড়া আরেকজনের অস্তিত্বই বিপন্ন, অন্যদিকে একজনের কাছে আরেকজন অপরিহার্যভাবে ঋণী। সুতরাং ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, সকল জীবনেই একজনের কাছে আরেকজন দায়বদ্ধ।

জাহেলি যুগে নারী জাতির কোনো মর্যাদা ছিল না। সে সময় নারীরা ছিল নিপীড়িত-নির্যাতিত ও অবহেলিত। নারীদের সঙ্গে করা হতো পশুর মতো আচরণ। পুরো নারীসত্তাকে পরিবার, সমাজ ও বংশের জন্য অভিশাপ মনে করা হতো। কন্যাসন্তান জন্মকে অসম্মান ও অপমানকর মনে করা হতো। শুধু কি তাই, নারীর অধিকার বলতে কিছুই ছিল না সমাজে! নারীরা যেমন মর্যাদা ও সম্মান পেত না, ঠিক তেমনি তাদের ন্যায্য অধিকার (মিরাস) উত্তরাধিকারী থেকে বঞ্চিত করা হতো। তাদের ইজ্জত-আবরু নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার। সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান ছিল নিম্নে। ছিল না স্বীকৃতি। বৌদ্ধ সমাজে নারীদের নিছক বিলাসিতার উপকরণ মনে করা হতো। এ ধর্মে নারী হচ্ছে ভোগের বস্তু এবং মানবতার নির্মাণ লাভের জন্য বিঘ্নস্বরূপ। ইহুদি ধর্ম মতে নারীদের সকল পাপের উৎসমূল মনে করা হতো। সেই তিমিরাচ্ছন্ন কলুষিত সমাজকে নিষ্কলুষ করার জন্য বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্যের বাণী নিয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ধরার বুকে আবির্ভূত হলেন। আল্লাহ ও তদীয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কর্তৃকে প্রতিষ্ঠিত হলো নারীর অধিকার ও মর্যাদা। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান আছে, যাদের সে লালন পালন করে এবং তাদের সঙ্গে সদয় আচরণ করে, তার জন্য অবশ্যই জান্নাত ওয়াজিব। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, যদি দুটি মেয়ে থাকে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দুটি থাকলেও।’ (বুখারি : ২৪৮১)।

বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কল্যাণে মহীয়সী নারী মর্যাদা পেয়েছে মাতা হিসেবে। পিতা-মাতা ও স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্বামীর সংসারে স্ত্রীর অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। নারী তার বৈবাহিক জীবনে খাদ্য উপার্জনের চিন্তা হতে মুক্ত হয়েছে। তেমনিভাবে সমাজের সর্বস্তরের নারীর যথার্থ মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মুসলিম সভ্যতায় নারীর মর্যাদা, মূল্যায়ন, অধিকার কোনোক্রমেই কম নয়। স্ত্রী হিসেবে একজন নারীর জন্য ইসলাম মানবিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। পুরুষের জন্য অপরিহার্য করা হয়েছে স্ত্রীর মোহরানা আদায়। আল্লাহপাক এরশাদ করেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের তার পারিবারিক জীবনে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে।’ (সুরা নিসা : ৪)।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যব্যহার করতে। তার মা তাকে গর্ভে ধারণ করেছে বড় কষ্টের সঙ্গে এবং তাকে প্রসব করেছে খুব কষ্টের সঙ্গে। তাকে গর্ভধারণ করতে এবং প্রসবান্ত দুধ ছাড়াতে ত্রিশ মাস সময় লেগেছে।’ (সুরা আহকাফ : ১৫)। নারীর মর্যাদা ইজ্জত সতীত্ব সুরক্ষার জন্য আল্লাহতায়ালা পর্দার বিধান ফরজ করেছেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, মুমিনদের বলে দিন, তারা যেন পরস্ত্রী থেকে তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং নিজ যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। তেমনি মুমিন নারীদের বলে দিন, পুরুষের থেকে তাদের দৃষ্টি যেন অবনমিত রাখে এবং স্বীয় যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষা করে।’ (সুরা নুর : ৩০)।

নারীরা পুরুষ থেকে পর্দা করবে। তার রূপ-সৌন্দর্য পর-পুরুষ থেকে আবৃত রাখবে। পর্দার অর্থ এই নয় যে, নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখা। বরং প্রয়োজনে পর্দার সঙ্গে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। পর্দার মাধ্যমে খাঁচার পাখির মতো বন্দি করে রাখা নয়। বরং নারীর ইজ্জত ও সম্মান রক্ষার জন্য ইসলামের এ বিধান।

ইসলাম ঢালাওভাবে সবাইকে সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার দেয়নি। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক।’ (মুসলিম : ১৮৭৩)। স্বামীদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।’ (বুখারি : ২৬৩৮)। মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।’ (তিরমিজি : ১৯৫৭)। নারীর মর্যাদা দেওয়ার অর্থ হচ্ছে তার ন্যায্য অধিকার সঠিকভাবে আদায় করা, তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা ও তার অবদানের যথাযথ মূল্যায়ন করা। আর প্রাপ্য বলতে তাদের অধিকার স্বীকার করা, কর্তব্যের যথাযথ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও সামাজিক জীবনে তার অবদানসমূহের মূল্যায়নকে বোঝায়। নারীর অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে ইসলাম নির্দেশিত নারী নীতিমালা অনুসরণ কর আবশ্যক।

 

 

 লেখিকা : আলেমা, প্রাবন্ধিকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads