• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

ধ্বংসশীল পৃথিবী, আল্লাহর পথে এসো

  • প্রকাশিত ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মাওলানা শামসুল আরেফীন

 

 

পৃথিবীটা চিরস্থায়ী নয়। ধ্বংসশীল। এই পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছুই শেষ হয়ে যাবে। মানুষ কোনো চিরঞ্জীব প্রাণী নয়। ধ্বংসশীল সব প্রাণীর মধ্যে একটি প্রাণী। এই নিখিল ধরণিতে আমরা যাদেরকে দাদা-দাাদ, নানা-নানি বলে ডাকি, এক সময় পৃথিবীতে তাদের কোনো অস্তিত্বের রেশটাও ছিল না। এখন তারা আমাদের মাঝে বিদ্যমান আছেন। আবার কিছুদিন নিশ্চিতভাবে বিদায় নেবে তারা। তাদের পূর্বসূরীরা অল্প কিছুদিনের জন্য আগমন করে ছিলেন এই পৃথিবীতে। কিন্তু এখন তাদের উপস্থিতি নেই। শুধুমাত্র তাদের রেখে যাওয়া উত্তরসূরীরা আমাদের চোখের সামনে বিদ্যমান আছেন। তারা আমাদেরকে এ কথার শিক্ষা দিয়ে গেলেন, আমরা শত চেষ্টা করেও পৃথিবীতে থাকতে পারিনি। তোমরাও পারবে না। কারণ, পৃথিবী কারো নির্দিষ্ট আবাসস্থল নয়।

পৃথিবীতে আমরা সবাই কিছুদিনের মেহমান। সাধারণত মেহমানের সাথে মেজবান কটু গলায় কথা বলেন না। সম্মানের সাথে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন। কোথাও কোনো জিনিসের প্রয়োজন হলে সেই প্রয়োজন মেজবান খুবই গুরুত্বসহকারে দেখে তা পূরণ করতে চেষ্টা করেন। অনেক ক্ষেত্রে মেহমান অপরাধ করলেও তাকে ক্ষমা করে দেন মেজবান। তদ্রূপ আমরা মানুষগুলো সবাই দুনিয়াতে আল্লাহর মেহমান। অপরাধ করলেও আল্লাহতায়ালা অনেক বিষয় আমাদেরকে নিজগুণে ক্ষমা করে দেন। তবে বান্দার জন্য উচিৎ হলো সব সময় গুনাহ থেকে বিরত থাকা। আর যদি কখনো কোনো গুনাহ হয়ে যায় সেই গুনাহ থেকে তাওবা করা।

মনে রাখা উচিৎ যে, সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে আমরা আখেরাতের জগতে পর্দাপণ করবোই করবো। যদি সেই সময় আমাদের আমলনামায় পাপ থাকে, তাহলে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। তবে আল্লাহতায়ালা চাইলে তাঁর বান্দাকে নিজ ইচ্ছায় ক্ষমা করে দিতে পারেন। আবার নাও ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু বাহ্যিক হুকুম হলো কেউ যদি পাপের  বোঝা নিয়ে আল্লাহতায়ালার কাছে উপস্থিত হয়, তাহলে জবাবদিহি করতে হবে। শাস্তি পেতে হবে। কেননা বান্দাকে আল্লাহতায়ালা তাওবা করার সুযোগ দিয়েছেন। পাপের পথ থেকে ফিরে আসার পথ খোলা রেখেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘যখন জমিনের ওপর কোনো বান্দা পাপ করেন। তখন সেই বান্দার ওপর আল্লাহতায়ালা রাগান্বিত হোন।’ অন্য হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, গোনাহ থেকে বান্দা তওবা করলে আল্লাহ অনেক বেশি খুশি হন।’

পবিত্র কোরআনুল কারীমের আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।’ পৃথিবী থেকে মানুষ বিদায় নিতে অপ্রস্তুত। মনে চায় না মৃত্যুকে বরণ করে নিতে। নেই কোনো আগাম প্রস্তুতি। পার্থিব চাকচিক্য সমৃদ্ধির সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সারাক্ষণ। মৃত্যুর কথা যদি আমরা সর্বদা স্মরণ রাখি, তাহলে অন্যায় কাজ থেকে বাঁচা সম্ভবপর হবে। ক্ষণিকের দুনিয়ায় অল্প কিছুদিনের

মুসাফির আমরা। কেউ কোথাও ভ্রমণের ইচ্ছা করলে সে ভ্রমণকৃত স্থানকে কখনো নিজ গন্তব্য মনে করে না। ঠিক প্রত্যেক মানুষের জন্য এ পৃথিবী হলো ভ্রমণ করার স্থানের ন্যায়। পৃথিবীতে বসবাস করবে তবে পৃথিবীকে চিরস্থায়ী আবাস্থল ভাবা যাবে না। অবসান ঘটিয়ে দিবে মৃত্যু সবার জীবনকে। ষাট থেকে সত্তর বছরের জীবনকে হেলায় খেলায় কাটিয়ে দিচ্ছে মানুষ। অথচ মানুষের নিকট প্রত্যেকটা মুহূর্তের পুরোপুরি হিসাব আল্লাহতায়ালার কাছে দিতে হবে। কেউ ছাড় পাবে না।

সুতরাং দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী চাকচিক্যে মাতাল হওয়া যাবে না। দুনিয়ার বাহ্যিক সৌন্দর্য, আরাম-আয়েশের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে। দুনিয়ার ধোঁকা যেন আমাদের কাবু করতে না পারে। দুনিয়ার মোহে পড়ে আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে যেন এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে না যাই, তাঁর নাফরমানি লিপ্ত না হই। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আল্লাহর বিধানকে সামনে রেখে অগ্রসর হতে হবে। ভুলবশত কোনো অন্যায় বা গোনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথে তওবা করতে হবে। মাওলার পথে ফিরে আসতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন!

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads