• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

কিয়ামতে সাত ব্যক্তি আরশের ছায়ায় থাকবে

  • প্রকাশিত ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মুফতি কাজী সিকান্দার

 

 

মুসলিম হওয়ার জন্য একটি শর্ত হলো কেয়ামতের দিন বা প্রতিদানের দিবসের উপর বিশ্বাস রাখা। আমরা সবাই বিশ্বাস করি একদিন আমাদের ভালো ও মন্দের হিসাব দিতে হবে। আমাদের কাজের বিচার হবে। বিচার করবেন আল্লাহতায়ালা, বিচারের ফায়সালা দেবেন স্বয়ং আল্লাহ। এ বিচারের পর কেউ জান্নাতে যাবে, আর কেউ জাহান্নামে যাবে। কিন্তু জান্নাতি যারা হবে এবং জাহান্নামি যারা হবে তাদের অনেক নিদর্শন ফায়সালা হওয়ার পূর্বেই দেখা দেবে। আমলনামা ডান হাতে আসা। আরশের ছায়ায় স্থান পাওয়া এগুলো জান্নাতি হওয়ার নিদর্শন। তেমনি আমলনামা বাম হাতে আসা। নিজের ঘামে সাঁতার দিতে থাকাসহ অনেক আছে জাহান্নামি হওয়ার নিদর্শন। সেই নিদর্শন থেকে জান্নাতি হওয়ার একটি নিদর্শন হলো আল্লাহতায়ালার আরশের ছায়ায় স্থান পাওয়া।

 

বস্তুত কেয়ামতের দিন অনেক বিভীষিকাময় হবে। জমিন তামা হয়ে যাবে। সূর্য একবিগা হাত উপরে চলে আসবে। এমন কঠিন মুহূর্তে যে ব্যক্তিকে মহান বিচারক আল্লাহ তাঁর মায়া ও দয়ায় আরশের নিচে স্থান দেবেন তা কত বড় সুভাগ্যের বিষয়। অবশ্যই আমরা সবাই চাই আমরা যেন সেই আরশের নিচে স্থান পাই। আমাদেরকে আরশের নিচে জায়গা পেতে হলে কাজ করতে হবে দুনিয়াতে। সাত প্রকারের কাজের বিনিময়ে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে এ পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন।

 

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যেদিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না সেদিন সাত প্রকার লোককে আল্লাহতায়ালা তার আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, ১ ন্যায়পরায়ণ শাসক, ২ যে যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে, ৩, যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথে লেগে থাকে ৪, ওই ব্যক্তি যারা আল্লাহর উদ্দেশে পরস্পরকে ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্যই পরস্পর একত্রিত হয় এবং তাঁর জন্যই সম্পর্ক ছিন্ন করে। ৫. ওই ব্যক্তি যাকে কোনো বংশীয় রূপসী নারী কুকর্মের প্রতি আহ্বান জানায় কিন্তু সে এ বলে তা প্রত্যাখ্যান করে যে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। ৬. যে ব্যক্তি এমন গোপনে দান-সাদকা করে যে, তার ডানহাতে কী দান করেছে বামহাত তা জানে না। ৭. যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহর যিকির করে এবং তাঁর ভয়ে চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু ঝরে। (বুখারি, হাদিস নং-৬৬০; মুসলিম হাদিস নং-১০৩১)

 

উপরিউল্লিখিত হাদিসের ভাষ্যমতে কিছু কাজ আমাদের অনেকের সাধ্যের বাইরে আবার অনেক কাজ সাধ্যের ভেতরে। যেমন শাসক হওয়া এটি সবার জন্য নয় তবে যে শাসক হবে তার জন্য একটি সুসংবাদ এটি সে যেন ন্যায়নিষ্ঠার সাথে দেশপরিচালনা করে তখন ওই কঠিন মসিবতের সময় সে সুখে ও শান্তিতে আরশের নিচে স্থান পাবে। আর যারা এখনো যৌবনের মৌ-বনে আছি তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ যাচ্ছে। এখনি ইবাদতে লিপ্ত হই। তবে আল্লাহ কঠিন মুহূর্তে সাহায্য করবেন। এরপর পাঁচ নাম্বারের বিষয়ও সুন্দরী ও বংশীয় মেয়ে গুনাহর জন্য ডাকা আর তা হতে বিরত থাকতে পারলেই সফলতা। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের কাজ। এগুলো ব্যতীত অন্য সব বিষয় সবার জন্য করা সহজ। আমরা একটু সচেতন হলেই আমলগুলো করতে পারি। যেমন, অন্তর মসজিদের সাথে লেগে থাকা এর অর্থ হলো, এক ওয়াক্ত নামাজ শেষ হয়ে যখন মসজিদে থেকে বের হলাম পরবর্তী নামাজের জন্য মনসিকভাবে প্রস্তুত থাকা। আজান হওয়ার সাথে সাথে মসজিদমুখী হওয়া।

 

দ্বিতীয়ত : আমরা একে অপরের সাথে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তখন এ বন্ধুর বন্ধনটিকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দিতে পারি। যেমন, আমরা নিয়ত করতে পারি যে, এ যে বন্ধুত্ব তা আল্লাহর জন্য। দুনিয়ার কোনো উদ্দেশে নয়। দুজন এক সাথে কথা বলা এবং পৃথক হওয়া আল্লাহর জন্য। আল্লাহর দিকে আহ্বান করার জন্য। দীনের কাজে সহযোগিতা করার জন্য। এটি আমরা সবাই করতে পারি। তৃতীয়ত সাদকা বা দান এটি আমরা সবাই কমবেশি করি। তবে কাউকে দেখানোর উদ্দেশে না করে একমাত্র আল্লাহকে রাজি ও খুশি করার জন্যই করা। দান এমনভাবে করা যাতে কেউ না জানে। চুপে চুপে করা। এগুণটিও আমাদের সাধ্যের ভেতরে। এরপর হলো, আল্লাহর আজাবের ভয়ে কান্নাকাটি করা। এগুণও যদি আমরা অর্জন না করতে পারি তাহলে কেমন হলো। এটিতো একেবারে সহজ। নিজের গুনাহর কথা স্মরণ করে আল্লাহর দয়া ও রহমতের কথা মনে করে। জাহান্নামের আজাবের কথা ভেবে নির্জনে বসে তাওবা করা ক্রন্দন করা। দু চোখের অশ্রু ঝরানো। অন্য হাদিসে আছে ওই দু চোখ জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। তাই অন্য কোনো গুণ আমরা অর্জন না করতে পারলেও এগুণটি যদি ধরতে পারি তবে আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। তার আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। আল্লাহ আমাদের এসব গুণ অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমী!

 

লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ, আশরাফবাদ, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads