• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

যতটুকু ইলম শেখা প্রত্যেকের জন্য ফরজ

  • প্রকাশিত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মো. হুসাইন আহমদ

 

 

ইলম শব্দটি একাধিক অর্থে ব্যবহূত হয়। এগুলোর একটি অর্থ হচ্ছে অনুধাবন ও উপলব্ধি করা। দার্শনিকগণ এই অর্থেরই প্রবক্তা। কেউ কেউ বলেন, ‘ইলমের অর্থ সত্যায়ন করা। চাই তা ইয়াকিনী হোক বা অন্য কিছু। আর অভিধান অনুযায়ী ইলম অর্থ ইয়াকিন বা বিশ্বাস। এর এক অর্থ হচ্ছে, আকলের সাহায্যে অনুধাবন করা। আর এই অর্থের ভিত্তিতেই ইলম শব্দটি কল্পনা, ধারণা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহূত হয়। ইলমের আরেকটি অর্থ হচ্ছে, দলিলের ভিত্তিতে মাসআলা আয়ত্ত করা। বস্তুত ইলম হচ্ছে আল্লাহতায়ালার সিফাত বা অনন্য গুণাবলিসমূহের একটি, যা ইলমের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে। ইলমের আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পূর্বসূরীগণ এর অন্তর্নিহিত একটি সংজ্ঞা বর্ণনা করেছেন। যেই সংজ্ঞায় ইলমের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং প্রকৃত ইলমের আলামত ফুটে ওঠে। যেমন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, বেশি বর্ণনা করা ও অধিক পরিমাণ আক্ষরিক জ্ঞান হাসিল করার নাম ইলম নয়, বরং ইলম হচ্ছে আল্লাহতায়ালার ভয়ের নাম।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতিটি মুসলিমের উপর ইলম শিক্ষা করা ফরজ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-২২৪) ফরজ ইলম আবার দুই প্রকার। ফরজে আইন ও ফরজে কিফায়া। ফরজে আইনকে ফরজে আইন এজন্য বলা হয় যে, শরীয়তদাতার নির্দেশ প্রতিটি মুকাল্লাফ তথা মুসলিম, বালেগ, বোধসম্পন্ন ব্যক্তিকে শামিল করে, যে নির্দেশটি নিজে নিজেই আদায় করা ছাড়া মুকাল্লাফ ব্যক্তি দায়িত্বমুক্ত হয় না। (শরহুল কাউকাবুল মুনীর-১/২৭৪)

ইসলামের মাঝে ফরজ হলো, বান্দার দীন পালন, আমলের ইখলাস এবং পারস্পরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যার মুখাপেক্ষী সেই বিষয়ক ইলম অর্জন করা। প্রতিটি আকেল বালেগ নর-নারীর উপর জরুরি দীনি ইলম শিক্ষা গ্রহণ করা ফরজ। এর মাঝে রয়েছে অজু গোসল, নামাজ, রোজার ইলম। যার নেসাব পরিমাণ মাল আছে, তার জন্য জাকাতের ইলম শিক্ষা করাও ফরজ। যার উপর হজ্ব ফরজ তার হজ্বের বিধানাবলি জানাও ফরজ। ব্যবসায়ীর জন্য ব্যবসাসংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। যেন লেনদেনে নিষিদ্ধ ও হারাম বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে পারে। এমনিভাবে প্রতিটি পেশাজীবীর জন্য তার পেশাসংক্রান্ত শরয়ী ইলম শিক্ষা করা ফরজ।

ইসলামের মৌলিক ৫ স্তম্ভের ইলম অর্জন করা, ইখলাসসংক্রান্ত ইলম অর্জন করাও ফরজ। কারণ, ইখলাসের উপর আমল কবুল হওয়া নির্ভরশীল। হালাল ও হারামসংক্রান্ত ইলম, লৌকিকতা তথা রিয়া সম্পর্কে জানাও জরুরি। কারণ, রিয়ার কারণে মানুষ আমলের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়। হিংসা ও অহংকারসংক্রান্ত বিধিবিধান জানাও আবশ্যক। কারণ, এ দুটি আমলকে ধ্বংস করে দেয়, যেমন আগুন কাষ্ঠখণ্ড পুড়িয়ে দেয়। যে ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় বা বিবাহ-শাদী করতে চায়, তার জন্য ক্রয়-বিক্রয় ও বিবাহসংক্রান্ত হুকুম জানাও ফরজ।

হারাম ও কুফরি বাক্যাবলি সম্পর্কিত ইলম থাকাও ফরজ। ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (রহ.) বলেন, আমার জীবনের কসম! হারাম ও কুফরি বাক্য সম্পর্কিত ইলমটা বর্তমান সময়ের জন্য সবচে’ বেশি জরুরি। কারণ হলো, অধিকাংশ আম মানুষ কুফরি কথা বলে তাদের অজ্ঞাতেই। একারণেই জাহিল লোকদের জন্য প্রতিদিন তার ঈমানকে নবায়ণ করা উচিত। আর দুইজন সাক্ষীর সামনে প্রতি এক দুই মাস অন্তর অন্তর বিবাহ দোহরিয়ে নেওয়া উচিত। এমন কুফরি বক্তব্য পুরুষদের থেকে কম হলেও নারীদের থেকে অনেক হয়ে থাকে। (শামী-১/১২৬)

ইমাম গাযালী (রহ.) বলেন, তিন প্রকার ইলম শিক্ষা করা ফরজ। যথা, ইলমুত তাওহীদ, ইলমুস সির এবং ইলমুশ শরীয়াহ। অর্থাৎ এতটকু জ্ঞান রাখা তওহীদ সম্পর্কে যা দীনের মূলের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহতায়ালা সম্পর্কে এ জ্ঞান রাখা যে, তিনি জীবিত, সবকিছুর উপর ক্ষমতাশালী, সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী, তার কোনো শরিক নেই, সকল গুণে গুণান্বিত, মাখলুকের সিফাত থেকে পবিত্র। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহতায়ালার বান্দা এবং রাসুল। আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত, তিনি অহীর ব্যাপারে সত্যবাদী ইত্যাদি। ‘ইলমুস সির’ হলো অন্তরকে নিষিদ্ধ বিষয় থেকে পবিত্র করা এবং কাম্য বস্তু দিয়ে ভরপুর করা। ইখলাস, নিয়ত, আমলের হিফাজত ইত্যাদি। আর ইলমুশ শরীয়ত বলতে উদ্দেশ্য হলো, ব্যক্তির জন্য যা কিছু আদায় করা ফরজ সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাও ফরজ। (মিনহাজুল আবেদীন ইলা জান্নাতি রাব্বিল আলামীন, ইমাম গাযালীকৃত-৪৮, ৪৯)

ফরজে কেফায়া : ফরজে কেফায়া হলো, কিছু মুকাল্লাফের আদায় করার দ্বারা শরীয়ত প্রদানকারীর উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যায়, বাকিরা আদায় না করার গোনাহ থেকে রক্ষা পায়। যদিও সবার উপর বিষয়টি আবশ্যক ছিল। (শরহুল কাউকাবুল মুনীর-১/২৭৪) শরহু তাহরীরে এসেছে-ওই আবশ্যকীয় বিষয়, যা ব্যক্তি বিশেষকে নির্ধারিত করা ছাড়া অর্জিত হওয়া উদ্দেশ্য হয়। এটা দীনি হতে পারে, যেমন জানাজার নামাজ। আবার দুনিয়াবী হতে পারে, যেমন প্রয়োজনীয় নির্মাণসংক্রান্ত জ্ঞান। অতএব, আমাদের জীবনকে সুন্দর ও শরীয়তসম্মতভাবে পরিচালনার ফরজ পরিমাণ ইলম শেখতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে ফরজ পরিমাণ ইলম শেখে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন!

 

লেখক : শিক্ষার্থী, তাকমিল, দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাংগাইল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads