• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
ভাষা শেখার শুরুটা হোক ভাষার মাসেই

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

ভাষা শেখার শুরুটা হোক ভাষার মাসেই

  • প্রকাশিত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ভাষা হচ্ছে মানুষের চরিত্রের উৎকর্ষতা ও নিম্নতা মাপার একটি মাপকাঠি। ভাষা তিক্ত ও কঠোর হলে তার আঘাতও হয় বড্ড ভয়ংকর। এর ক্ষত পৌঁছে যায় অনেক গভীর পর্যন্ত। ভাষার সুন্দর ব্যবহারের সর্বোচ্চ দিক হলো, সব নবী-রাসুল এই ভাষার মাধ্যমেই তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। আবার এর নেতিবাচক দিক খেয়াল করলে দেখা যাবে আখলাক এবং মানুষের যাবতীয় কাজ-কর্ম, চাল-চলনের সবচেয়ে বড় দুশমনও এটি। আজকে ভাষা ও প্রচার মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে দুশমনদের নৈতিক স্খলন ও চারিত্রিক রোগ-ব্যাধি আমাদের মধ্যেও অনুপ্রবেশ করছে।

এটা একটা সর্বজনস্বীকৃত কথা যে, আমাদের চারিত্রিক উন্নতির পেছনে ভাষার ভূমিকা অনেক। চরিত্র তখনই সুদৃঢ় হয় যখন এর ভিত্তি স্থাপিত হয় গভীর জ্ঞান এবং সঠিক পরিকল্পনার হাতে। আর জ্ঞানের সর্বপ্রকার প্রকাশও ঘটে এই ভাষার মাধ্যমে। একারণে সুন্দর কথোপকথন জরুরি। কেননা সুন্দর ও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা সকল নবীসহ বিশেষ করে আমাদের নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দায়েমী সুন্নত।

আমাদের ভাষা বাংলা। বাংলা ভাষা আমাদের গর্ব। বাংলা ভাষা বাঙালি জাতির গর্ব। যে ভাষার জন্য ‘আমাদের ভাইয়েরা রক্ত ও জীবন দিয়ে গেছে, এর মর্যাদাও আমাদের রক্ষা করতে হবে’। আর তা রক্ষা করতে প্রয়োজন ভাষাকে সুন্দর, শুদ্ধভাবে ও তার স্বকীয়তা বজায় রাখার মাধ্যমে। হ্যাঁ, ‘আমরা প্রচলিতভাবে কথা বলতে গিয়ে যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করি। সেখানে বৈচিত্র্য থাকতে পারে, আর এটা থাকবেই। এখানে উচ্চারণে আঞ্চলিকতার টানও থাকতে পারে। সেটা কোনো সমস্যা না। তবে শুদ্ধ ভাষা, শুদ্ধভাবে লেখা, ভালো করে কথা বলতে পারা সবার জন্যই প্রয়োজন। আর এর চেয়েও বড় সমস্যা হলো, বাংলা ভাষার মধ্যে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে, বাংলা ভাষাকে তুচ্ছজ্ঞান করা। যেমন-কথা বলার মাঝে মাঝে ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষা ব্যবহার করা। অর্থাৎ বাংলা ভাষার মর্যাদা হানি করা।     

সুন্দর, ভালো ভাষা ও কথোপকথন বিষয়ে বড়দের কিছু কলাকৌশল নিচে দেওয়া হলো। ১. কথোপকথনের আকর্ষণ নির্ভর করে বক্তব্যের উদ্দেশ্যের ওপর। সুতরাং বক্তব্যের উদ্দেশ্য যত মহৎ হবে বক্তব্য ও কথোপকথন তত সুন্দর ও শ্রুতিকাম্য হবে। তাই অর্থহীন বাক্যবিনিময় থেকে বিরত থাকা একান্ত কর্তব্য। ২. সবসময় সত্য কথা বলা নিজের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে নিতে হবে। কেননা, মিথ্যা সকল পাপের মূল। রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সবচেয়ে বড় খেয়ানত হলো, তুমি তোমার মুসলমান ভাইকে এমন একটি কথা বললে যা সে সত্য বলে মনে করল অথচ তা মিথ্যা।’ (আবু দাউদ) ৩. কথাবার্তায় ওই সব বিষয় শামিল থাকা চাই, যে বিষয়ে পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। নিজের বক্তব্যের সাথে কাজের মিল রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। বক্তব্য ও কাজের বৈপরীত্য থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে। অন্যথায় এতে সমাজে বেআমলীর পরিবেশ সৃষ্টি হবে। কথা ও কাজের বৈপরীত্যের নিন্দা করে কোরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা মানুষকে ভালো কথা শোনাও অথচ নিজেরা তা ভুলে যাও!’ (সুরা বাকারা, আয়াত-৪৪) ৪. বাক্য প্রয়োগে কৃত্রিমতা ও লৌকিকতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। কেননা, এসব মানুষের সাথে সম্পর্ক জোড়ার পরিবর্তে সম্পর্কের ভাঙন সৃষ্টি করে। নিজের সত্তাকে অন্যের সামনে সহজ-সরলরূপে প্রকাশের চেষ্টা করতে হবে।

অতএব, আমাদের উচিত সবসময় সুন্দর ও শুদ্ধভাষায় কথা বলা। ভাষার মর্যাদা ও স্বকীয়তা বজায় রাখা। সর্বোপরি আমাদের নবীর দায়েমী সুন্নত আদায় করা। আর তার শুরুটা হোক ভাষার মাসেই। অর্থাৎ ভাষার মাসই হোক ভাষা শেখার শুরু। আল্লাহতায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন!

লেখক :মো. হুসাইন আহমদ

শিক্ষার্থী, তাকমিল দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাংগাইল  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads